শুভ জন্মদিন মাশরাফি বিন মর্তুজা

0
397

খবর ৭১: আজ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক, নড়াইল এক্সপ্রেস-খ্যাত মাশরাফি বিন মর্তুজার ৩৬তম জন্মদিন। ১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর সবুজ শ্যামল নড়াইল শহরের মহিষখোলায় তাঁর জন্ম হয়  । তার বাবার নাম গোলাম মুর্তজা স্বপন। মায়ের নাম হামিদা বেগম বলাকা। দুই ভাইয়ের মধ্যে মাশরাফি বড়। ছোট ভাই সিজার মাহমুদও ক্রিকেট নিয়েই সময় কাটান।

মাশরাফি নামে পরিচিত নড়াইলের সেই দুরন্ত কিশোরটি ছোটবেলা থেকে কৌশিক নামেই এলাকার সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি অদ্ভুত এক ভালোবাসা কাজ করতো। এমনও অনেক দিন গেছে যে নাওয়া-খাওয়া ভুলে সারাদিন খেলার মাঠেই পড়ে ছিলেন দুরন্ত সেই কিশোর। এ জন্য অবশ্য বাবা মায়ের কাছ থেকে শাস্তিও কম পেতে হয়নি তাকে। তবে বাবা মায়ের শাসনের পাশাপাশি প্রিয় মামার সাহায্যই পেয়েছিলেন সব সময়। সারাক্ষণ মেতে থাকতেন বন্ধুদের নিয়ে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে চলে যেতেন ক্রিকেট খেলতে। বাকি সময়টা চলতো ব্যাডমিন্টন আর চিত্রা নদীতে সাঁতার কেটে।

এভাবেই একদিন সুযোগ পেয়ে গেলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। সেখান থেকেই তিনি চোখে পড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং কোচ অ্যান্ডি রবার্টসের। তার হাতে পড়েই ক্যারিয়ার বদলে যায় মাশরাফির। যে কারণে, তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি প্রথম শ্রেণির কোনো ম্যাচ না খেলেই টেস্টে অভিষিক্ত হন।

নড়াইলের চিত্রা নদীতে সাঁতরে বেড়ানো সেই দুরন্ত কিশোর কৌশিক কখন যে হয়ে উঠলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের আইকন, পোস্টারবয়। সময়ের সাথে মাশরাফি বিন মর্তুজা নামে ক্রিকেট বিশ্বে যার সরব উপস্থিতি।

২০০১ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকেই নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। বৃষ্টিবিঘ্নিত হওয়ার কারণে বোলিং করার সুযোগ পেলেন মাত্র এক ইনিংসে, ৩৬ ওভার। একই বছর ২৩ নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয় ফাহিম মুনতাসির ও তুষার ইমরানের সঙ্গে। অভিষেক ম্যাচে মোহাম্মদ শরীফের সঙ্গে বোলিং ওপেন করে তিনি ৮.২ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে দুই ফরম্যাটেই গ্রান্ট ফ্লাওয়ার ছিলেন মাশরাফির প্রথম শিকার! সেই থেকে যে শুরু পথচলা।

তবে ইনজুরি তার টেস্ট ক্যারিয়ার দীর্ঘ হতে দেয়নি। মাত্র ৩৬ টেস্ট খেলে নিয়েছেন অবসর। এরই মাঝে নিয়েছেন ৭৮টি উইকেট। একই সঙ্গে তিনটি হাফ সেঞ্চুরিসহ রান করেছেন ৭৯৭। টি-টুয়েন্টিতে থেকে সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন তিনি। ক্রিকেটের এ ফরম্যাটে ৫৪ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৪২ টি উইকেট। সেই সাথে ব্যাট হাতে করেছেন ৩৭৭ রান।

টেস্ট এবং টি-টুয়েন্টি থেকে অবসর নিলেও ওয়ানডেতে এখনো ইনজুরি দমাতে পারেনি তাকে। বাংলাদেশের হয়ে এখন পর্যন্ত ওয়ানডে খেলেছেন তিনি ১৯৬টি। বোলিংয়ে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে উইকেট পেয়েছেন ২৫১টি, আর ব্যাট হাতে এক অর্ধশতকে করেছেন ১,৭২০ রান। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হিসেবে সবার উপরে তার অবস্থান।

১৭ বছরের ক্যারিয়ারে ১১ বার চোটের কারণে দলের বাইরে যেতে হয়েছে মাশরাফিকে। দুই হাঁটুতে সাত-সাতটি অস্ত্রোপচারও তাকে দমাতে পারেনি। অদম্য মানসিকতা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন, বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন; বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে দেয়ার পেছনের কারিগর যেন এই মাশরাফি। তাই তো পেয়েছেন কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসাও। শত বছর বেঁচে থাকুক মাশরাফি। হাজারো তরুণ ক্রিকেটারের অনুপ্রেরণা হয়ে। হাজারো ক্রিকেট ভক্তের ভালোবাসা নিয়ে।

মজার বিষয় হলো ২০১৪ সালের এই দিনই পৃথিবীতে এসেছে মাশরাফির দ্বিতীয় সন্তান, পুত্র সাহেল মর্তুজা। মাশরাফি নিজেই বেশ কয়েকবার বলেছিলেন, ভাগ্যবান বাবা তিনি।

মাশরাফি এবং তার ছেলে সাহেলকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here