শপথ নিলেন ঐক্যফ্রন্টের মোকাব্বির খান

0
703

খবর ৭১ঃএকাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমর্থন নিয়ে সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি মোকাব্বির খান সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আজ দুপুর ১২টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিনের কাছে শপথ বাক্যপাঠ করেন গণফোরামের এ নেতা।

স্পিকারের সংসদ কার্যালয়ে এ শপথ অনুষ্ঠান হয়। মোকাব্বির খানের শপথের বিষয়ে নিশ্চিত করেন স্পিকারের একান্ত সচিব এমএ কামাল বিল্লাহ।
এর আগে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়েছিলেন গণফোরামের আরেক নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। পরে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

তবে মোকাব্বির খানের দাবি- গণফোরামের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের অনুমতি নিয়েই তিনি শপথ নিয়েছেন।

শপথের বিষয়ে মোকাব্বির খান সোমবার বলেন, ‘আমি গণফোরামের সিদ্ধান্তেই শপথ নিচ্ছি। আমার পার্টি থেকে বলা হয়েছে শপথ নিতে।’

গতকাল সোমবার ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে তার মতিঝিলের চেম্বারে যান মোকাব্বির খান। উদ্দেশ্য শপথের আগে ড. কামালের আশীর্বাদ কামনা। সেখান থেকে বেরিয়ে মোকাব্বির খান জানান, ড. কামাল হোসেন ও গণফোরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শপথগ্রহণ করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের সিদ্ধান্ত মানেই হলো গণফোরামের সিদ্ধান্ত।’

তিনি জানান, তার শপথের বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল বিএনপির সঙ্গে সরাসরি কোনো কথা হয়নি। অফিসিয়ালি তাদের এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে কেন শপথ নিতে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমরা পুরো নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছি। কিন্তু প্রতিকূল অবস্থা থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, সেটি কিন্তু প্রত্যাখ্যান করিনি। অর্থাৎ যেখানে জনগণ ভোট দিয়েছে, সেখানে তো আমাদের প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ নেই। যেখানে ভোট হয়েছে, সেটি তো গণরায়। ২৯২টি সংসদীয় আসনে ভোট হয়নি, সেটিকে আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ ৮টি আসন দিয়ে তো পুরো বাংলাদেশকে বিচার করা যায় না। এ জন্য আমরা বলছি যে, নির্বাচনটিকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা যে নির্বাচনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছি, সেটি বলার জন্য সংসদে যাওয়া। এটি তো অলিগলিতে বললে হবে না। সংসদে গিয়ে বলতে হবে যে এই নির্বাচন হয়নি।’

শপথ নেয়ায় সুলতান মনসুরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তা হলে আপনাকে কেন গণফোরাম শপথের অনুমতি দেবে—জানতে চাইলে মোকাব্বির খান বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেননি বলেই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি দলীয় মতামত উপেক্ষা করে শপথ নিয়েছেন। এ জন্য তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর আমি দলীয় সিদ্ধান্ত মেনেই শপথ নিতে যাচ্ছি।

তবে মোকাব্বির খানের শপথ নেয়ার বিষয়ে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু সোমবার বলেছিলেন, দলীয় ফোরামে মোকাব্বিরের শপথ নেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আর গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত এখনও বহাল আছে। তিনি নিজ দায়িত্বে শপথ নিচ্ছেন।’ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়ে কি করবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগামী ২০ এপ্রিল আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক আছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর বাইরে গিয়ে কেউ যদি শপথগ্রহণ করে থাকে, সেটি তার নিজ দায়িত্বে। এর সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।

গণফোরামের প্যাডে স্পিকারকে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে সুব্রত চৌধুরী বলেন, মোকাব্বির খান গণফোরামের প্যাড ‘চুরি’ করে সেই কাগজে স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। মোকাব্বিরের বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরে বৈঠক করে তা জানানো হবে।

আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর লতিফুল বারী হামিম বলেন, মোকাব্বির ব্লাকমেইল করে গণফোরামের প্যাড ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, মোকাব্বির খান দলকে ব্লাকমেইল করে গণফোরামের প্যাড ব্যবহার করেছেন। যদি উনি শপথ নেন, তা হলে তার বিরুদ্ধে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এর আগে ৭ মার্চ শপথ নেয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে ৬ মার্চ সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত পাল্টান মোকাব্বির খান। দলীয় চাপের মুখে তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তবে ওই দিন অর্থাৎ ৭ মার্চ শপথ নেন গণফোরামের আরেক সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে গণফোরামের প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোকাব্বির খান। তিনি সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী হন। এই আসনে প্রথমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। তার মনোনয়ন বাতিল হলে মোকাব্বিরকে সমর্থন দেয় ঐক্যফ্রন্ট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here