লালমনিরহাটে ১৪ বছর অধরা সারপুকুর ইউপি’র কাজী তরিকুলের ভুয়া সার্টিফিকেটের ঘটনা ফাঁস, তদন্ত শুরু

0
290
Exif_JPEG_420

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট:সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে ভুয়া আলীম পাস সার্টিফিকেট দিনে দীর্ঘ ১৪ বছর অধরা এক নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার (কাজী)। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউপি’র নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার (কাজী) তরিকুল ইসলাম (এন্তাজ) এর ভুয়া আলীম পাস সার্টিফিকেট জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসী ২০১৭ সালে ডিসেম্বর মাসে ৬০জন স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ জেলা রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন দপ্তরে দায়ের করেন। মূলত: তারেই তদন্ত শুরু করেছে জেলা রেজিস্ট্রার।
অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, ২০০৩ সালে সরকারি বিধি মোতাবেক ইউনিয়ন কাজী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। আদিতমারী উপজেলার কাজী আজগার আলী দুরর্সম্পকের মেয়ে জামাতা সারপুকুর ইউনিয়নের সরল খাঁ গ্রামের জোবেদ আলীর পুত্র তরিকুল ইসলাম (এন্তাজ) যখন কাজী হিসেবে নিয়োগ পান তখন তিনি আলীম পাস করেনি। তৎকালীন উপজেলা কাজী আজগার আলীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন নামুড়ী এলাকার ফজলুল হক। তার ছেলে মিজানুর রহমান ২০০১ সালে দক্ষিন বালাপাড়া এস ই ফাজিল মাদ্রাসা অধীনে আলীম পাস করেন। যার রোল নং-১২৬০২৪, রেজিঃ নং-৮৭২৬৪৭, শিক্ষাবর্ষ: ১৯৯৯-০০। ওই সার্টিফিকেটটিতে তরিকুল ইসলাম, পিতা: জোবেদ আলী নাম ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে কাজীর লাইসেন্স হাসিল করেন। ওই লাইসেন্স নিয়ে সারপুকুর ইউনিয়নের মুসলিম বিয়ে রেজিস্ট্রার (কাজী) হিসেবে বহাল তবিলতে দাপটের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০০৯- এর বিধি ৪ অনুযায়ী নিকাহ্ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স তরিকুল ইসলাম (এন্তাজ) অনিয়ম করে ভুয়া (কাজীর) লাইসেন্স নিয়েছেন। বর্তমানে নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) ভূয়া লাইসেন্স সংক্রান্ত বিষয়টি একটি অভিযোগ জেলা রেজিস্ট্রার সহ বিভিন্ন দপ্তরে দায়ের করেন। যার প্রেক্ষিতে তৎকালীল জেলা রেজিস্ট্রার সরকার লুৎফুল কবীর তদেন্তর অন্তে অন্তে প্রতিবেদনের জন্য নির্দেশ দেন আদিতমারীর সাব-রেজিষ্ট্রার কামরুল হোসেন-কে। ইতিমধ্যে যার তদন্ত শুরু করেছেন আদিতমারী সাব-রেজিষ্ট্রার। এর আগেও ০১/১২/২০১৩ইং তারিখে লালমনিরহাট জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের কার্যালয়ের স্মারক নং-০৫.৪৭.৫২০০.০২৪.১১.০০৩.১৩-১০৫ মাধ্যমে জেলার আদিতমারী উপজেলার ৪নং সারপুকুর ইউপি’র নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার (কাজী) তরিকুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে সার্টিফেকেট জাল-জালিয়াতি করিয়া নিকাহ্ রেজিষ্ট্রারের লাইসেন্স গ্রহনের অভিযোগ উত্থাপিত হয়। তৎকালীন জেলা রেজিষ্ট্রার মোহাম্মদ নাজমুল হক ২০/০৫/২০১৪ইং তারিখে ৩৫৫ নং স্মারকে নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার কাজী তরিকুল ইসলাম বার বার তলব করার পরেও তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফেকেট নিয়ে হাজির হননি। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা বরাবরে পত্র প্রেরণ করেন। যার স্মারক নং-৭০৪, তাং ১৪/০৮/২০১৪ইং। পরর্বতীতে সিনিয়র সহকারী সচিব, বিচার শাখা-৭, মোহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার কাজী তরিকুল ইসলামকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। যার নং বিচার-৭/২ এন-৭৬/২০০৩ (অংশ)-৩৫, তাং ২০/০১/২০১৫ইং। উক্ত কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, লালমনিরহাট জেলা রেজিষ্ট্রার নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার কাজী তরিকুল ইসলামকে বার বার সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফেকেট নিয়ে হাজির নির্দেশ দিলেও বিভিন্ন বাহানায় বিষয়টি এড়িয়ে যান। এক্ষেত্রে সার্টিফেকেট জালিয়াতির বিষয়টি দৃশ্যত যর্থাথ মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় মুসলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন ২০০৯- এর ১১ বিধি অনুযায়ী অসদাচরন হওয়ায কেন আপনার নামীয় নিকাহ্ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স বাতিল করা হবে না। এভাবে দীঘদিন অতিবাহি হলেও রহস্যজনক কারনে আজও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
এ বিষয়ে সারপুকুর ইউপি’র কাজী তরিকুল ইসলাম (এন্তাজ) বলেন, এটা সত্যি আমি কাজী হওয়ার আগে আলীম পাস করি। এখন আমি আলীম পাস। তাহলে কাজীর লাইসেন্স কেমনে পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে আরও বলেন, আমার দুর সর্ম্পকের শ্বশুর কাজী আজগার আলী আমাকে (জামাতা) কি ভাবে কাজীর লাইসেন্স পাইয়ে দিল তা আমার জানা নাই। তবে আমি জমি বিক্রি করে কাজীর লাইসেন্সের জন্য ২লক্ষ টাকা দিয়েছি।
এ ব্যাপারে আদিতমারী সাব-রেজিস্ট্রার কামরুল হোসেন বলেন, তার সার্টিফেকেট জাল এটা আমি নিশ্চিত। বিগত দিনের তদন্তে তা প্রমানিত হলেও রহস্যজনক কারনে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি আরও জানান, পুনঃরায় অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ পেয়েছি এবং তা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। খুব তাড়াতাড়ি জেলা রেজিষ্ট্রারের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
খবর ৭১/ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here