লালমনিরহাটে শিক্ষার মানোন্নয়নে নতুন রূপে নির্মিত ফাকল পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ

0
456

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাটঃ আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি আর ধারাবাহিক সাফল্যের কারনে লালমনিরহাটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে ফাকল পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ। জেলা পুলিশ কর্তৃক পরিচালিত বিশেষায়িত এ স্কুলটি ২০০৫ সালে তৎকালীন পুলিশ সুপার মেজবাহ উদ্দিন পিপিএম প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময়ে মাত্র তিন শত জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় এর পথচলা। যেখানে প্লেগ্রুপ থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পেরেছিল।
জানা যায়, প্রাথমদিকে স্কুলের নতুন ছাত্রদের জন্য পর্যাপ্ত আসন ছিল না কারণ সে সময়ে শিক্ষকদের সংখ্যা যথেষ্ট ছিল না, ছিল না পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ ও অন্যান্য অবকাঠামো। মাত্র ৩০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একাডেমিক কার্যক্রম অপর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং শিক্ষক সংকটের কারনে স্কুল পরিচালনা ব্যহত হত। তখন শিক্ষকদের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৩ জন এবং কোন কম্পিউটার ল্যাব ছিল না, ছিল না একটি পৃথক প্রশাসনিক ভবনও। স্কুল প্রতিষ্ঠার দশ বছর পর এসএম রশিদুল হক জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই। যোগদানের পর থেকেই তিনি বিশেষভাবে স্কুলটির উন্নয়নে মনোযোগ দিতে থাকেন। ২০১৬ সালেই প্রথমে তিনি এইচএসসি ক্লাস চালু করেন। তিনি স্কুলটির আরও শ্রেণীকক্ষ, বিষয়-ভিত্তিক শিক্ষক, লাইব্রেরি, বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব ইত্যাদির প্রয়োজন বোধ করেন। সে লক্ষ্যে তিনি স্কুলের নিজস্ব তহবিল ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের সহায়তায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ হাজার বর্গফুটের একটি চার-তলা ভিত্তি বিশিষ্ট তিন-তলা আধুনিক ভবন নির্মাণ করেন। ভবনটিতে বিভিন্ন শ্রেণীর শ্রেণীকক্ষ, লাইব্রেরি, বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, শিক্ষকদের কমনরুম, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের অফিস কক্ষ, ওয়াশরুম জোন, হিসাবরক্ষকের কক্ষ রয়েছে। এর পাশাপাশি স্কুলটির প্রধান ফটক, সীমানা প্রাচীর, জিমনেশিয়াম, অভিভাবকদের বসার স্থানও নির্মাণ করা হয়। এছাড়া পুরো প্রতিষ্ঠানকে নজরদারি করতে নতুন এই একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনটিতে বসাানো হয় সিসি ক্যামেরা এবং স্কুলটির আধুনিকায়নের স্বার্থে আরও ১১ শতাংশ জমি ক্রয় করা হয়।
অন্যদিকে, স্কুলটির ব্যবস্থাপনা কমিটি পরিপূর্ণরুপে একাডেমিক কার্যক্রম চালাতে ও শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য আরও ১৯ জন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক, একজন অফিস সহকারী, একজন কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ করেন। আবার ইতিপূর্বে শিক্ষক-কর্মচারীদের সামান্য বেতন দেয়া হত। যার দ্বারা সংসার পরিচালনা করা প্রতিটি শিক্ষকের খুবই কষ্টসাধ্য হত। শিক্ষক ও কর্মচারীদের কষ্ট বিবেচনা করে তাঁদের বেতন ৪০% বৃদ্ধি করা হয়। এছাড়া বর্তমানে ২০১৯ সালের জানুয়ারী হতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া গত বছর থেকে তাঁদের ২০% হারে নববর্ষ ভাতাও চালু করা হয়।
একটি অত্যাাধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য, সফটওয়ারের মাধ্যমে সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের তথ্য এসএমএস এর মাধ্যমে আদান প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইডি কার্ড প্রদান করা হয়েছে।
এসএম রশিদুল হক এর সকল উদ্যোগ গ্রহণের পর থেকে সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এখন উন্নত মানের শিক্ষাগ্রহণ করতে পারছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১১৩২ জনে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে শুরুতে এর সংখ্যা ছিল ৩’শ জন। এখন শিক্ষার্থীরা শেখার সঠিক পরিবেশ পাচ্ছে এবং তাদের ফলাফল উল্লেখযোগ্যভাবে ভাল হচ্ছে। ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ৭৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়, যাদের সকলেই উল্টীর্ণ হয় এবং ৮ জন গোল্ডেন এ প্লাস সহ ৭৩ জনই এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়। একই বছর জেএসসিতে ১০৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৫৩ জনই এ প্লাস অর্জন করে এবং অংশগ্রহনকারী সকলেই কৃতকার্য হয়। অপরদিকে পিএসসিতে ৬৫ জন অংশ নেয়। যাদের মধ্যে ৬২ জনই এ প্লাস পায় এবং বাকী তিনজন এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়।
এছাড়া, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার লাভ করেছে একাধিকবার। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কাউট গ্রুপে চতুর্থ বার্ষিক ক্যাম্পে ও ক্রাইম প্রিভেনশন-২ (অস্ত্রবিহীন-আত্মরক্ষা) কোর্সে ২০১৮ সালে সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে। দ্বিতীয় আঞ্চলিক স্কাউট সমাবেশ-২০১৮- এ চ্যালেঞ্জ-২ আমার বাড়ি প্রথম স্থান (দিনাজপুর অঞ্চল) অর্জন করে এ প্রতিষ্ঠনের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও এবারই প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত জাতীয় শিশু-কিশোর প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে ‘ক’ গ্রুপে (তৃতীয় শ্রেণী হতে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত) সমগ্র বাংলাদেশের ৫৫ জেলার মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান সহ তিনটি ল্যাপটপ তিনটি সেট বই, তিনটি ক্রেস্ট ও তিনটি সনদ অর্জন করে।
অভিভাবক, স্থানীয় সচেতন মহল ও শিক্ষানুরাগীরা বলেন, ফাকল পুলিশ লাইন স্কুলটি একটি আধুনিক এবং মানসম্মত স্কুল হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তারা বলেন, গত দুই বছরে স্কুলটি স্থানীয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে দক্ষ ও সচেতন নাগরিক হিসেবে শিশুদের গড়ে তুলতে সক্রিয়ভাবে উৎসাহিত করে চলেছে। তারা আরও বলেন, ফাকল স্কুলটি একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা ছাত্রদের পরবর্তীকালে আরও উন্নত, দক্ষ এবং আরও ব্যতিক্রমী শিক্ষার্থী হতে সহায়তা করছে।
ফাকল পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ সুরেন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, “আমাদের স্কুল এর নতুন একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনটি বাচ্চাদের বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে, আনন্দের সাথে শিক্ষালাভের ক্ষেত্রে, একই সাথে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একে অপরের সাথে যোগাযোগের জন্য এবং শিশুদের নিরাপত্তার যতœ নেওয়ার জন্য যথাযথ ডিজাইন করে নির্মাণ করা হয়েছে এবং তা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য সহায়ক।”
স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক পিপিএম বলেন, “প্রতিটি স্কুলের সফলতা তার ব্যবস্থাপনা কমিটি, শিক্ষক ও কর্মচারীদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও প্রতিভার ওপর নির্ভরশীল। পাশাপাশি শিক্ষার দক্ষতা এবং শ্রেণীকক্ষের পরিবেশের গুণগত মান এবং সুবিধাগুলির উপর তা নির্ভর করে। সেই দিক থেকে, আমরা নতুন কম্পিউটার ল্যাব, বিজ্ঞানাগার, আধুনিক শ্রেণীকক্ষ, একটি মাল্টিমিডিয়া লাইব্রেরিসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য একটি একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনের প্রয়োজনীয়তা থেকেই নতুন ও নান্দনিক একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, ”একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফাকল স্কুল এন্ড কলেজটিকে প্রস্তুত করতে সব সময়ে সচেষ্ট থেকেছি।” তিনি স্কুলটি বিনির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here