আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাটঃ লালমনিরহাট রেলওয়ে ষ্টেশনকে ঘিরে অসহায় মাথা গোজার ঠাঁই জোটানো ছিন্নমুল মানুষের মুখে ৭ বছর ধরে খাবার তুলে দিচ্ছেন মানবতার সেবায় নিয়োজিত “নদী ভাঙ্গা পরিষদ” নামক একটি সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্টান। আর এসব মানুষকে একবেলা পেটপুরে খাবার খেয়ে যেমন শান্তিতে নিঃশ্বাস ফেলছে, তেমনি আয়োজকরাও মনেপ্রাণে খুশি হচ্ছেন। যার সুখ্যাতি নিজ জেলা ছেড়ে আশপাশের জেলায় প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, দেশের উত্তর জনপদের সীমান্ত একটি জেলা নাম লালমনিরহাট। জেলা শহরটি রেল কেন্দ্রীয় হিসেবে গড়ে উঠায় যোগাযোগের ব্যস্থতম ষ্টেশন হিসেবে পরিচিত লালমনিরহাট রেল ষ্টেশন। ব্রিটিশ শাসনামলে গড়ে উঠা রেল বিভাগকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে রেলের অফিসপাড়া, সেই সাথে বাংলাদেশের সর্ববৃহত রেলওয়ে ওভার ব্রীজ ও বিশাল এলাকা জুড়ে রেলওয়ে প্লাটফরম। রাতে বিশাল প্লাট ফরমের বারান্দা জুড়ে রাতের বেলা অস্থায়ী বসবাসের বিছানা পাতে শত শত ছিন্নমূল, ভিক্ষুক, ঠিকানাহীন মানুষ রাত্রি যাপন করেন। সেই সাথে আয়োজকসহ অর্থদাতারা এমনকি দুর দুরান্ত থেকে আগত মানতকারী, ছিন্নমূল, ভিক্ষুক, ঠিকানাহীন মানুষ সাথে নিয়ে দেশে জাতির কল্যাণে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্টিত হয়। দোয়া শেষে সকলে সারি সারি বসে খাবার তুলে দেওয়া হয়। ছিন্নমুল এসব মানুষ অনাহারে, অর্ধহারে একটু শান্তিতে ঘুমাতে আসে এখানে, এই মানুষগুলোর দুঃখ দূর্দশা ভাগ করে নিতে লালমনিরহাট রেল ষ্টেশন এলাকার বেকার যুবকের সংগঠন মানবতার সেবায় “নদী ভাংগা পরিষদ” প্রায় সাত বছর যাবত সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে তাদের মুখে অন্য তুলে দেবার ব্যবস্থা করে আসছে। এক বেলা পেটপুরে খেতে পেড়ে ছিন্নমূল এসব মানুষ দারুন উচ্ছ্বাসিত। আর এবিষয়ে বেশ ক’টি বে-সরকারী স্যাটালাইট টেলিভিশন ছিন্নমুল মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছেন। যা দেশেবাসীর মাঝে সাড়া ফেলেছে।
(৪অক্টোবর) বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় লালমনিরহাট রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ষ্টেশনের বিশাল এলাকা জুড়ে সারিবদ্ধ ভাবে বসে আছে শত শত ছিন্নমূল মানুষ। যাদের সামনে খাবার বিতরনে ব্যস্থ নদীভাংগা পরিষদের সাধারন সম্পাদক এম.এ হান্নান সহ অন্যরা। ছিন্নমূল মানুষরা জানান, গত কয়েক বছর যাবত ষ্টেশন প্লটফরমে শত শত মানুষ রাত্রি যাপন করেন। তাদের একবেলা খাবার আর অন্যবেলা খেতে পারেন না। মুলত: তাদের একবেলা পেটপুরে খেতে দিতে প্রতি বৃহস্পতিবার নদীভাংগা পরিষদের এ আয়োজন। তাদের খাবার খেতে ছিন্নমুল মানুষরা অনেকটাই খুশি। এক বেলা পেটপুরে খেতে পেড়ে দারুন ভাবে উচ্ছ্বাসিত হচ্ছে।
উক্ত নদীভাংগা পরিষদের সাধারন সম্পাদক এম.এ হান্নানসহ বেশ ক’জন যুবকের উদ্দোগে গত সাতবছর যাবত প্রতি বৃহস্পতিবার ছিন্নমূল মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে আসছে এই সেচ্ছা সেবী সংগঠন। ফলে সাধারন মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। যার সুখ্যাতি নিজ জেলা ছেড়ে আশপাশের জেলায় প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে এম.এ হান্নান বলেন, প্রথমে আমরা দুই থেকে তিনশত মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করলেও এখন বিভিন্ন মানুষ সেচ্ছায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এবিষয়ে বেশ ক’টি বে-সরকারী স্যাটালাইট টেলিভিশন চ্যানেল বিশেষ প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছেন। ওই সব দানশীল মানুষের কারণে এখন প্রতি বৃহস্পতিবার সাত থেকে আটশত ছিন্নমূল মানুষের খাবার ব্যবস্থা করতে পারছি। সমাজের বিত্তবান মানুষরা এগিয়ে আসলে আগামীতে প্রতিটি রেল ষ্টেশনে আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমুল মানুষের খাবার ব্যবস্থা করার কথা প্রকাশ করেন তিনি।
খবর৭১/এসঃ