রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে সরকারি খাস পুকুর দখল করাকে কেন্দ্র করে আজিম উদ্দিন (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় ৪০ জনের বিরুদ্ধে রাণীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। গত সোমবার নিহত আজিম উদ্দিনের ভাই মো: আলিম উদ্দিন বাদী হয়ে এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। গত রোববার দুপুরে উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের করজগ্রাম সোখিন পাড়া গ্রামের এই খুনের ঘটনাটি ঘটে। এই হত্যা কান্ডকে ঘিরে ওই গ্রামে এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। নিহত আজিম উদ্দিন রাণীনগর উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি ও করজগ্রাম সোখিন পাড়া গ্রামের সোখিন প্রামানিক এর ছেলে।
জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার করজগ্রাম সোখিনপাড়া মসজিদের পাশে একটি খাস পুকুর আছে। সেই পুকুরটি মসজিদের নিকট থেকে লীজ নিয়ে প্রায় ১৪-১৫ বছর থেকে মাছ চাষ করে আসছিলেন নিহত আজিম উদ্দিনের বড় ভাই মো: শহিদুল ইসলাম। কিন্তু হঠাৎ করে ২৭ মে রোববার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো: সাহাদত সায়েম তার সহযোগী নাজমুল হক মাসুম, আব্দুল আজিজ, রহিমসহ ৩০-৩৫ জন মোটরসাইকেল যোগে ঐ পুকুর পাড়ে গিয়ে বলে যে এই পুকুর তারা লীজ নিয়েছে এখন সেখানে মাছ ছাড়বে। এই ঘটনায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সায়েম ও তার দলবল লাঠিসোটা, লোহার রড, হাতুড়ী ইত্যাদি দিয়ে আক্রমন করে। এতে আজিম উদ্দিনসহ তার ভাই শহিদুল, জালাল ও তাদের মা মানিকজান বেওয়াসহ বেশ কয়েকজন মারাত্মক ভাবে গুরুত্বর আহত হয়।
এদের মধ্যে আজিম উদ্দিনের অবস্থা বেশী আশংকাজনক হওয়ায় তাকে প্রথমে রাণীনগর হাসপাতালে ভর্তি করতে ব্যর্থ হলে তাকে পরে আদমদিঘী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা বেশী আশঙ্কাজনক হলে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় সোমবার নিহতের ভাই মো: আলিম উদ্দিন বাদী হয়ে সায়েমকে প্রধান আসামী করে ৪০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
সূত্রে আরো জানা গেছে, দুর্বৃত্তদের লাঠি সোটা, লোহার রড ও হাতুড়ের আঘাতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে থাকা আজিম উদ্দিনকে রাণীনগর হাসপাতালে চিকিৎসাও করতে দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে আদমদিঘী স্বাস্থ্য হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে থেকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠাতে অনেক দেরী হওয়ায় পথের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়েছে।
এ হত্যা কান্ডের ঘটনায় প্রধান আসামীসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ তারা হলেন, নওগাঁ সদর উপজেলার চকবুলাকী গ্রামের এচাহাকের ছেলে মো: সাহাদত সায়েম, রাণীনগর উপজেলার পশ্চিম বালুভরা গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে মো: নাজমুল হক মাসুম, মধ্যরাজাপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো: আব্দুল আজিজ ও মো: আমিনুর রহমান আলম, পশ্চিম বালুভরা গ্রামের রাজ্জাকের ছেলে মো: রহিম, বোদলা গ্রামের মো: জুলফিকার আলী ভুট্টুর ছেলে মো: সোহেব খন্দকার, চকমুনু গ্রামের মো: নাজিম উদ্দিনের ছেলে মো: মিল্টন খন্দকার, পশ্চিম বালুভরা গ্রামের জালালের ছেলে মো: নয়ন।
প্রধান আসামী সায়েমের রাণীনগরের অফিস তল্লাশী করে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র এবং বিভিন্ন রকমের মদ উদ্ধার করা হয়েছে।
রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য আসমাীদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
খবর৭১/এস:
