মৎস্যজীবি ও নৌকা চালকরা কেঁটে দিল রিং বাঁধ, চলনবিলের ৮ উপজেলা বন্যা কবলিত

0
511

রাজিব আহমেদ, শাহজাদপুর প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার রাউতারায় নবনির্মিত রিং বাঁধটি শনিবার সকাল ও দুপুরে দু‘দফায় দুস্থানে কেটে দিয়েছে স্থানীয় মৎস্যজীবি ও নৌকা চালকরা। ফলে শাহজাদপুর উপজেলার পশ্চিম এলাকার ৩টি ইউনিয়ন সহ চলনবিল অঞ্চলের ৮ উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এ বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে এলাকার বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ ও গো-বাথান। ফলে কৃষকরা তাদের গবাদি পশু বাড়িতে নিয়ে রেখেছে।

কাঁচা ঘাসের মাঠ বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় এ এলাকায় গো-খাদ্যের দাম বস্তা প্রতি ২/৩‘শ টাকা করে বেড়ে গেছে। ফলে এ অঞ্চলের গো-খামার মালিক ও গবাদি কৃষকেরা তাদের গবাদি পশুর খাদ্য নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা গুলি হল, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তাড়াশ, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম।

অপরদিকে এ বাঁধ কেটে দেয়ায় সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় দেড় কোটি টাকা জলে চলে গেছে। গত ১ মাস আগে পাউবো বিভাগের আওতায় ১ কোটি ৫১ লাখ ১৫ হাজার ৫৮১.৯৬ টাকা ব্যায়ে শাহজাদপুর উপজেলার পেতাজিয়া ইউনিয়নের রাউতারা স্লুইচগেট সংলগ্ন ১২‘শ মিটার দৈর্ঘ্য এ রিং বাঁধটির নির্মাণ করা হয়। প্রতি বছর বন্যার হাত থেকে এ অঞ্চলের কৃষকদের জমির পাকা ধান রক্ষার জন্য সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এটি নির্মাণ করে।

আর প্রতি বছরই এ এলাকার মৎস্যজীবি ও নৌকা চালকরা তাদের সুবিধার জন্য এ বাঁধ কেটে দেয়। এ বছর বন্যা দেরিতে আসায় কৃষকরা আগে ভাগেই জমি থেকে পাঁকা ধান কেটে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। তারপরেও পানি উন্নয়ন বোর্ড বিপুল অংকের টাকা ব্যয়ে এ বাঁধটি নির্মাণ করেন।

এলাকাবাসি জানায়, সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের মাধ্যমে এ বাঁধ নির্মাণের নামে গত ৩৭ বছরে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা এ ভাবে হরিলুট করেছেন, এ বছরও তাই করলেন। এলাকাবাসি আরো জানায়,১৯৯৪ সালের পর থেকে এ অঞ্চলে ধান কাঁটা হয়ে গেলে বন্যার পানি বৃদ্ধি পায়। এতে কোন ফসলহানী হয় না। তারপরেও সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ফসল রক্ষার নামে প্রতি বছরই এ বাঁধ নির্মাণ করে।

এ বাঁধ নির্মাণের ফলে এ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ জমি ও জলাশয়ে দেরিতে বন্যা হয়। এতে মৎস্যজীবিরা আশানুরূপ মাছ শিকার থেকে বঞ্চিত হন। অপর দিকে এ এলাকায় বন্যা মৌসুমে নৌকা ছাড়া চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে। দেরিতে বন্যা হলে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত নৌকা মালিকরা লোকশানে পড়েন। তাই তারা এ লোকশানের হাত থেকে রেহাই পেতে ধান উঠে যাওয়ার পরপরই বালু দিয়ে তৈরী নিম্নমানের ও দায়সারা এ বাঁধ কেটে দেয়।
এ বছরও তারা সেই কাজটিই করলেন।
শনিবার তারা এ বাঁধ কেটে দিয়েছে তারা।

ফলে গত ২৪ ঘন্টায় শাহজাদপুর উপজেলার পশ্চিম অঞ্চলের কায়েমপুর,রূপবাটি ও পোতাজিয়া ইউনিয়নের সকল গ্রাম সহ চলনবিল অঞ্চলের ৮ উপজেলার প্রায় ৫৩ হাজার হেক্টর জমি ফসলি জমি বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া নিচু অনেক কাঁচা রাস্তা-ঘাটও এ বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এতে এ অঞ্চলের প্রায় ১ লাখ মানুষ বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এ ব্যাপারে পোতাজিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ব্যাপারী জানান,আমাদের এখানকার কৃষকেরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই নিম্নমানের বালু দিয়ে তৈরী রিং বাঁধ নির্মাণে খুবই ক্ষুব্ধ। নদীতে পানি বাড়লেই বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে কৃষকের বুক কাঁপে। তাই তারা আর এই নিম্নমানের বালু দিয়ে তৈরী রিং বাঁধ চায় না তারা স্থায়ী ভাবে বাঁধ নির্মাণ চায়।

এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন খান বলেন, সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ বাঁধ যারা নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে কেটে দিয়েছে,তাদের খুজে বের করে আইন প্রয়োগের মাধ্যেমে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে।

খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here