মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৪৯ শতাংশ দেশের ৫ ব্যাংকের কাছে

0
249

খবর৭১:অনিয়ম, আর্থিক কেলেঙ্কারি আর চরম অব্যবস্থাপনায় নড়বড়ে দেশের ব্যাংকিং খাত। ফলে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। মাত্র কয়েকটি ব্যাংকের কাছে কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে এসব খেলাপি ঋণ। মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৪৯ শতাংশ দেশের ৫ ব্যাংকের কাছে।

সোমবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ আর্থিক স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা।

আর্থিক স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ৫৭ ব্যাংকের মধ্যে পাঁচ ব্যাংকের কাছেই রয়েছে মোট খেলাপি ঋণের ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ বা ৩৬ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা। আর বাকি ব্যাংকগুলোর কাছে রয়েছে ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ বা ৩৭ হাজার কোটি ৭৪৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ।

অন্যদিকে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট খেলাপি ঋণের ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ । বাকি ৪৭ ব্যাংকে খেলাপি রয়েছে মাত্র ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনে ব্যাংকগুলোর নাম দেয়া হয়নি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক। এর মধ্যে সোনালী, বেসিক, জনতা ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মোট খেলাপি ঋণের হার ও পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৬ সালে মোট ঋণের ৯ দশমিক ২ শতাংশ খেলাপি ছিল। ২০১৭ সালে তা বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.৬৫ শতাংশে (প্রভিশনাল) উন্নীত হয়েছে; যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭.২৮ শতাংশ ছিল। এছাড়া ২০১৭ সালের দ্বিতীয়ার্ধে রফতানি ও রেমিটেন্স আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয় পরিশোধের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালার যথাযথ পরিপালনে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে রফতানি মূল্য প্রত্যাবাসন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

আর্থিক খাতে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে ডেপুটি গভর্নর বলেন, ইতোমধ্যে সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ শুরু করেছে। এ সময় তিনি আর্থিক লেনদেনে সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলায় সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা অব্যাহতভাবে উন্নীতকরণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে পরামর্শ এবং শ্রেণিকৃত ঋণের হার কমিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে তাগিদ দেন।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.২৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আগের অর্থবছরে (২০১৫-১৬) ছিল ৭.১ শতাংশ । আলোচ্য অর্থবছরে আমদানি বাণিজ্য বেড়েছে ৯.০ শতাংশ । তবে এর বিপরীতে রফতানি বাণিজ্য বেড়েছে মাত্র ১.৭ শতাংশ। রেমিটেন্স ১৩.৫ শতাংশ কমেছে। এ কারণে চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ২০১৭ সাল শেষে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৭ শতাংশ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আলোচিত সময়ে (২০১৭ সাল শেষে) ব্যাংকিং খাতের সম্পদ ১২.৪ শতাংশ, ঋণ ও আগামের পরিমাণ ১৮.৯ শতাংশ এবং আমানতের পরিমাণ ১১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট আমানতের মধ্যে মেয়াদী আমানতের পরিমাণ অর্ধেকেরও বেশি যা ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক অর্থায়নে স্থিতিশীল উৎস হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।

২০১৭ সালে ব্যাংকিং খাতে মূলধন ও ঝুঁকি-ভিত্তিক সম্পদের অনুপাত ১০.৮ শতাংশে অপরিবর্তিত ছিল যা আবশ্যকীয় ন্যূনতম হার (১০ শতাংশ) অপেক্ষা বেশি।

এ সময়ে কিছু ব্যাংকে সাময়িক তারল্য চাপ অনুভূত হলেও সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের তারল্য পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে ছিল। বছর শেষে আগাম-আমানত অনুপাত ছিল ৭৫.৯ শতাংশ।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here