এস. এম. রাসেল, মাদারীপুর :
মাদারীপুর শহরের সৈদারবালি এলাকায় অবস্থিত কাজী হায়দার জুট মিলে সোমবার বিকেল সাড়ে ৫’টার দিকে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়েছে। মেশিনরুম থেকে আগুন ধরে মুহূর্তের মধ্যে পাটের গুদামসহ সম্পূর্ন মিলের ভিতরে ছড়িয়ে পরে। অগ্নিকান্ডে মিলের মেশিন, তিনটি গোডাউন থাকা ২ লাখ মন পাট সম্পূর্ন পুড়ে গেছে। যার প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমান ধরা হচ্ছে ৫০ কোটি টাকার বেশি। প্রায় ২৪ ঘন্টা ধরে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট। সংবাদ লেখা পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে ৫’টা) আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হয়নি।
মিল কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেল সাড়ে ৫’টার দিকে কাজী হায়দার জুট মিলের মেশিন রুমের ভিতর থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়ে মুহুর্তের মধ্যে পার্শ্ববর্তী বিল্ডিংসহ পাটের গোডাউনে আগুন ছড়িয়ে পরে। এ সময় শ্রমিকরা আর্তচিৎকার করতে করতে দৌড়ে মিল থেকে বেরিয়ে আসে। মিলের তিনটি পাটের গোডাউনে প্রায় তিন লাখ মন পাট মজুত ছিল। মিলটিতে প্রায় ৮শতাধিক শ্রমিক কাজ করতো। আগুন লাগার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ প্রশাসনের বিভিন্ন ধরনের লোকজন।
জুট মিলের পরিচালক সাত্তার কাজী বলেন, চার বছর যাবৎ সুন্দরভাবে মিলটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। সোমবার বিকেলে মিলটি চালু অবস্থায় জুট গোডাউনের পাশের মেশিন থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। আমরা প্রথমে নিজেরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলাম। পরবর্তীতে আগুনের ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রনের কাজ করছে। আমাদের জুট গোডাউনে প্রায় ২ লাখ মন পাট ছিল। যা বাৎসরিক মজুদ। এখন আমাদের উৎপাদনে যাওয়ার মত ক্ষমতা নেই। আগুনের কারনে আমাদের মিলের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জানিনা এ ক্ষতি পুসিয়ে কিভাবে মিল চালু করবো।
মিল পরিদর্শনে এসে মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, জুটমিলের অগ্নিকান্ডটি খুবই ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মাদারীপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রনে কাজ করছে। শহরের পাশে মিলটি গড়ে ওঠায় বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছিল। আমি আশা করি ব্যাংকের সহযোগিতা, মালিকের উদ্যোগ ও সরকারের সহযোগিতায় মিলটি পুনরায় চালু হবে। পুনরায় এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
বৃহত্তর ফরিদপুর অ লের ফায়ার সার্ভিস ইউনিটের সহকারী পরিচালক এ.বি.এম মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগুন লাগার কথা শুনে আমি সাথে সাথেই ফরিদপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট নিয়ে এখানে চলে আসি। শুরুর দিকে আগুনের ভয়াবহতা খুবই বেশী পরিমানে ছিল। সময় যত যাচ্ছে আগুনের প্রকোপ আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। বৃহত্তর ফরিদপুর অ লসহ গৌরনদীর ভায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিটসহ মোট ৭টি ইউনিট দিয়ে প্রায় ২৪ ঘন্টা ধরে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। মিলের ভিতরে পাটের কয়েকটি গোডাউনে বড় বড় গাউডে আগুন লেগেছে তাই নিয়ন্ত্রনে আনতে সময় লাগছে। আশাকরি রাতের মধ্যেই আগুন সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রনে আনা যাবে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এখনও সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। আগুন সম্পূর্ন নিভানোর পরে তদন্ত সাপেক্ষে ক্ষতির পরিমান নির্ধারন করা যাবে।
খবর৭১/এস: