মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ: বরাদ্দের অতিরিক্ত ব্যয় করা যাবে না

0
506
মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ: বরাদ্দের অতিরিক্ত ব্যয় করা যাবে না

খবর৭১ঃ পরিচালনা ও উন্নয়ন খাতে বাজেট বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় না করার জন্য সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোনো পর্যায়ে ব্যয় বেড়ে গেলে তা সমন্বয়ের জন্য অন্য ক্ষেত্রে খরচ কমাতে হবে। বেঁধে দেয়া ব্যয়সীমার মধ্যে থাকতে হবে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর এসব নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়েছে।

পাশাপাশি উন্নয়ন খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ বেঁচে গেলে কোনোক্রমেই যেন তা পরিচালনা খাতে ব্যয় না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিপত্রে অননুমোদিত স্ক্রিমের জন্য নতুন করে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিতে আর ধীরগতি প্রকল্পের টাকা কেটে দ্রুত বাস্তবায়নগামী প্রকল্পে বরাদ্দ দিতে বলা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, চলতি বাজেটে এখন পর্যন্ত রাজস্ব কাঙ্ক্ষিত হারে অর্জন হয়নি। ব্যয় মেটাতে গিয়ে সরকার বেশি মাত্রায় ব্যাংক ঋণ করছে। যে কারণে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতি অনুসরণ করছে অর্থ বিভাগ। চলতি অর্থবছর ৭৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ গ্রহণের কথা।

কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ঋণ নেয়া হয় ৩৬ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার ৬০০ কোটি এবং সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

ঋণ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাজেট ঘাটতি মেটাতে এবারই প্রথম সরকার ব্যাংক থেকে বেশি পরিমাণে ধার করছে। বাজেটে যে পরিমাণ টাকা ধার করার কথা তার চেয়ে বেশি করা হচ্ছে। আসলে আগে আমরা টাকা বেশি নিতাম সঞ্চয়পত্র থেকে। এবার হয়েছে উল্টো, বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে ব্যাংক থেকে।

জানতে চাইলে সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. এম কে মুজেরি বলেন, সরকার ব্যয় পরিচালনা করছে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে। গোটা বছরে যে পরিমাণ ঋণ নেয়ার কথা, অর্থবছরের পাঁচ মাসেই সেই পরিমাণ ঋণ গ্রহণের কাছাকাছি চলে গেছে।

ফলে এক ধরনের আর্থিক চাপের মুখে পড়েছে সরকার। পাশাপাশি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বর্তমানে ঘাটতি আছে। তাই আগামীতে ব্যয়ের রশি টেনে ধরে রাখার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, ব্যয় ঠিক থাকার পর আয় কমে গেলে বাজেটে ঘাটতি বেড়ে যাবে। এতে আরও সমস্যা হবে। যে কারণে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটা শুরু হয়েছে।

সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এ বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে না। এ জন্য কাটছাঁটের উদ্যোগ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশোধিত বাজেটে যাতে নতুন করে অর্থ বরাদ্দ দাবি করতে না পারে, এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সব মন্ত্রণালয়কে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এই রাজস্ব আহরণের সংশোধনের ক্ষেত্রে বিশেষ দিকনির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

সেখানে বলা হয়, রাজস্ব আহরণ সংশোধনের ক্ষেত্রে ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস ও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের রাজস্ব আদায়ের ধারাবাহিকতাকে বিবেচনায় নিতে হবে। ইতিমধ্যে কোনো আইটেমে রাজস্ব অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলে এ ক্ষেত্রে বাড়তি রাজস্ব আয়ের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

চলতি বাজেটে পরিচালনা ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা। পরিচালনা খাতে এ ব্যয় করতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, একমাত্র মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া সরবরাহ ও সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত কোনো আইটেমের বরাদ্দ বাড়ানো যাবে না।

মূল বাজেটে সংস্থান না থাকলে নতুন কোনো সম্পদ সংগ্রহের জন্য সংশোধিত বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা যাবে না। এ ছাড়া অপ্রত্যাশিত খাতের কোনো অর্থ বরাদ্দ করা হলে সংশোধিত বাজেটে এর প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে।

এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বিভাগে ক্ষমতাবলে কোনো টাকা ব্যয় করা হলে সে অর্থ ব্যয়ের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে।

উন্নয়ন খাতে ব্যয় প্রসঙ্গে বলা হয়, সরকারের কৌশল ও লক্ষ্যের আলোকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প নির্বাচন করতে হবে। আরএডিপির মূল অংশে বরাদ্দবিহীনভাবে কোনো প্রকল্প রাখা যাবে না।

এ ছাড়া একই সংস্থার আওতায় একই উদ্দেশ্যে একাধিক প্রকল্পের প্রস্তাব পৃথকভাবে প্রণয়ন না করে একটি গুচ্ছ প্রকল্পের আওতায় আনতে হবে। তবে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক এমন প্রকল্পগুলোকে সংশোধিত এডিপিতে গুরুত্ব দিতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here