মধু মাসে শায়েস্তাগঞ্জে মৌসুমী ফলের ছড়াছড়ি, ক্রেতাদের মধ্যে ফরমালিন ভীতি

0
390

মঈনুল হাসান রতন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : জৈষ্ঠ্য হচ্ছে মধু মাস। প্রতি বছর এ মাসের শুরুতেই হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সহ জেলার সকল উপজেলায় হাটবাজারে মৌসুমী ফল আসতে শুরু করে। এর মধ্যে কাঁঠাল, আম, জাম, লিচু, তরমুজসহ রয়েছে বিভিন্ন ফল। পবিত্র রমজানে বাজারে এসব মৌসুমী ফল দেদারছে বিক্রি হওয়ায় ফলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। যে কারণে ক্রেতাদের বাড়তি দামে ফল ক্রয় করে খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে হবিগঞ্জ জেলার ভাটি এলাকার লোকজন সারাদিন হাওরে ধানের কাজ শেষে যখনই বাজারে আসেন, তখনই তারা এসব ফল ক্রয় করার চেষ্টা করেন। তবে এসব মৌসুমী ফল নিয়ে মানুষের মধ্যে ফরমালিন ভীতি এখনও আছে। ফরমালিনযুক্ত ফল বাজারে যাতে কোনোভাবে কেউ বিক্রি করতে না পারে সেজন্য মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল শনিবার (২৬ শে মে) বিকেলে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পৌর শহরে দাউদনগর বাজার, স্টেশন রোড, দেউন্দি সড়ক, রেলওয়ে স্টেশন, রেল গেইট, আলীগঞ্জ বাজার, পুনার বাজার, নতুন ব্রীজ, কাচাঁ মাল হাট এলাকা সহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাজারে নিয়ে এসেছেন আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, আনারস, আঙ্গুরসহ বিভিন্ন মুখরোচক ফল। আর এসব ফলের দোকানগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় লেগে আছে। সুস্বাদু ফল ক্রয় করে পরিবারের লোকজনকে খাওয়াচ্ছেন ক্রেতারা। তবে এর মধ্যে ফরমালিনযুক্ত কিছু ফল খেয়ে ক্রেতাদের কি ক্ষতি হচ্ছে তা নিয়েও কেউ কেউ দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত?ফল বিক্রেতারা জানান, বৈশাখের প্রচন্ড গরমে তরমুজের কদর ছিল বেশ। দাম বেশি হলেও বিক্রিতে কমতি ছিল না। চৌধুরী বাজারের ফল বিক্রেতা আশিক মিয়া জানান, প্রতি বছর বাজারে মৌসুমী ফল এলে প্রথম দিকে দামটা একটু বেশি থাকে। তবে মানুষ বেশি দাম দিয়েই সেগুলো ক্রয় করেন। এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে ফলের উৎপাদন বেশি হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন- আমরা দিনাজপুর ও রাজশাহী থেকে লিচু পাইকারী ক্রয় করে বাজারে খুচরা বিক্রি করছি। দিনাজপুরের লিচু সাইজে বড় হওয়ায় সেগুলোই ক্রেতারা বেশি ক্রয় করেন। রাজশাহীর লেচু বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য স্থানের লেচু বাজারে আসলেও কম বিক্রি হয়। শায়েস্তাগঞ্জ সহ হবিঞ্জের প্রত্যেক উপজেলায় মৌসুমী ফলের উৎপাদন অনেক কম। এ কারণে পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাইরের ফলের প্রতি আকৃষ্ট থাকেন। তিনি বলেন- প্রতিদিন ৫০ হাজার লিচু দিনাজপুর থেকে পাইকারী ক্রয় করে নিয়ে আসেন। পাইকারী বড় সাইজের লিচু প্রতি ১শ’ এর দাম পড়ে ২০০/২২০ টাকা। এসব লিচু খুচরা বাজারে ২৪০ থেকে ২৫০ বা ২৬০ টাকা দামে বিক্রি করছেন। ছোট সাইজের ১শ’ লিচু ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দামে বিক্রি হয়। তবে এসব লিচু ফরমালিনমুক্ত বলে দাবি করেন তিনি।চৌধুরী বাজারের খুচরা আম ব্যবসায়ী সোহেল রানা জানান, রমজান মাসে আমের চাহিদা বেশি থাকায় দাম অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি। তবে আমরা খুচরা ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের ভাল জিনিস খাওয়ানোর চেষ্টা করি। তিনি বলেন- আমরাতো আড়ৎদারদের কাছ থেকে আম পাইকারী ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করি। এজন্য অনেক সময় নিশ্চিত হতে পারি না আমের মধ্যে ফরমালিন আছে কি না। তিনি বলেন- প্রতি কেজি হিমসাগর আম ১শ’ টাকা, ল্যাংড়া ৮০/১০০টাকা, দেশীয় প্রজাতির আম ৪০/৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে আঙ্গুর প্রতি কেজি ৪শ টাকা, খেজুর ১শ’ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০/৫০০টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী জানান, দেশের অন্যান্য জায়গার চেয়ে হবিগঞ্জে মৌসুমী ফলের উৎপাদন কম। হবিগঞ্জে এবার আড়াইশ হেক্টর জমিতে লেচুর উৎপাদন হয়েছে। এসব লেচু সাইজে ছোট হলেও খেতে সুস্বাদু। আম দেড়শ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে। আর পাহাড়ি এলাকার ২শ’ হেক্টর জমিতে আনারসের উৎপাদন হয়েছে। তিনি বলেন- বিভ্রান্ত করার জন্য বাজারে একটা কথা ছড়িয়ে দিয়েছে যে ফরমালিন। এই ফরমালিনের আতংকে অনেকেই ফল খেতে ভয় পান। তিনি বলেন- লিচুসহ অনেক ফলই পাইকারী ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাগান থেকে ক্রয় করে থাকেন। এতে ফরমালিন থাকে না। তবে কাঁচা আম ফরমালিন দিয়ে পাকানো হয়। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও ভেজালবিরোধী মোবাইল কোর্ট হচ্ছে।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here