ভোলার গ্রাম্য মাতাব্বরদের রুখবে কে ?

0
461

খবর ৭১ ভোলা প্রতিনিধিঃ
ভোলার বিভিন্ন এলাকায় বহু যুগ যুগ ধরেই গ্রাম্য মাতাব্বরা তাদের এলাকায় চুরি ডাকাতি লুটপাট অত্যাচার ধর্ষণ হত্যাসহ র্নিমমতায় হাজারো অপর্কম করে রাম রাজ্যত্ব কায়েম করে আসছে, এদের হাত থেকে নারী পুরুষ বৃদ্ধা আবাল কেউই রক্ষা পয়না। এদের নির্মমতার কাহিনী হয়তো কারো অজানা নয়। দিন দিন মানুষের সোচ্চারনায় ও মিডিয়ার প্রচার প্রচারনায় এবং সরকারের কঠোর পদক্ষেপে প্রসাশনের হস্তক্ষেপে গ্রাম্য মাতাব্বরদের রাম রাজ্যত্বেও অনেকটা অবসান হয়ে আসলেও এখনো অনেক এলাকায় এসব মাতাব্বররা রাম রাজ্যত্ব কায়েম করতে পাল্টিয়ে নিচ্ছে ভিন্ন রুপে। যখন যেই সরকার ক্ষমতায় আসে তারা তখন সেই সরকার দলে আশ্রয় নিয়ে আবার সেই রামরাজ্যত্ব কায়েম চলমান রেখে আসছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসব গ্রাম্য মাতাব্বররা মেম্বার-চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগও লুফে নিচ্ছে। কোন রকম একবার মেম্বার চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ পেলে এরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। ভোলায়ও রয়েছে এমন অনেক রামরাজ্যত্ব এলাকা। এর মধ্যে ভোলা ল ঘাট সংলগ্ন মাতাব্বর এলাকা অন্যতম।
সরেজমিনে মাতাব্বর এলাকা গেলে রিয়াজ মেম্বার নামক স্থানীয় এক মাতাব্বরে বিরুদ্ধে পাওয়া যায় অর্ধশত অভিযোগ। ভূক্তভোগিরা জানায়, রিয়াজ মেম্বার নামের এ মাতাব্বর কর্তৃক লুটপাট, জবর দখল, নারী নির্যাতন, অত্যাচারসহ র্নিমমতার অর্ধশত অপর্কম সংঘটিত হয়েছে। নারী পুরুষ, বৃদ্ধ আবালসহ ব্যাবসায়ী, শিক্ষক, কৃষক, হাজী এমনকি অবসরপ্রাপ্ত সুবেদারও তার হাত থেকে রক্ষা পায়নি বলে তারা অভিযোগ করেছেন। বিভিন্ন ঘটনায় ঐ মাতাব্বরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা মোকদ্দমা রয়েছে বলেও তারা জানান।
মাকসুদুর রহমান জানায়, তার বড় ভাইসহ ২০০৭ সালে ১৪৪৭ নং রেজিষ্ট্রি দলিলে, ১৬৪/৯৩নং খতিয়ানে, ১৪০,১৪১ নং দাগের চৌহুদ্দি দিয়ে রিয়াজ মাতাব্বর ও তার মা নুর চেহারা বেগম এবং তার বোন নার্গিস থেকে ৫৪ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। জমি ক্রয় করে সেই জমিনের চার পাশে কাটাবেড়া দিয়ে জমিনে পাকা ঘর র্নিমান করে ভোগ দখলে বসবাস করে আসছেন। বসবাসের পাশাপাশি জমিনে পুকুর কেটে মাছ চাষ এরং মুরগির খামার করে আয় রোজগার করে আসছিলেন। ২০১৭ সালের জুন মাসে হঠাৎ রিয়াজ মাতাব্বর ২০-৩০জন র্সদার লাঠিয়াল নিয়ে তাদের জমি দখল করার জন্য বাড়িতে প্রবেশ করে এবং বালি দিয়ে পুকুর ভরাট করার চেষ্টা করে। বিষটি নিয়ে তারা ভোলা জেলা ম্যাজিষ্টেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন, যার নং এম.পি- ৬৫/১৭ (ভোলা)। আদালত বিয়য়টি আমলে নিয়ে ইউপি ভূমি কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করান। পুলিশ এবং ভূমি কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনের পর এবং র্দীঘ পর্যালোচনা করে মাকসুদুর রহমানে জমিতে রিয়াজ মাতাব্বরকে প্রবেশে নিষেধ জারি করে আদালত রায় প্রধান করেন।
মাকসুদুর রহমান আরো জানায়, মাতাব্বর আদালতের নিষেধাজ্ঞা কোন তোয়াক্ক নাকরে বার বার তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাদেরকে মারধর করিয়া গাছ পালা কেটে নিয়ে য়ায়। এসব ঘটনায় আরো একাধীক সাধারন ডায়েরী এবং মামলা মোকদ্দমা রয়েছে।
স্থানীয় ঔষধ ব্যাবসায়ী মাহবুবুর রহমান সোহেল জানায়, তার ছোট ভাইসহ ২০০৯ সালে রিয়াজ মাতাব্বর এবং তার ভাই মোকতাদির হোসেন খোকন মাতাব্বর থেকে ৫৮৯৩ নং রেজিস্ট্রি দলিলে, ১৬১,১১৪ নং খতিয়ানে এবং ১৩৭/১৩৮ দাগের চৌহুদ্দিতে ৫৪ শতাংশ জমি ক্রয় করে। ক্রয়ের পর সে ঐ জমিনে চাষবাস করে আসছিলো, হঠাৎ একদিন রিয়াজ মাতাব্বর তার দলবল নিয়ে হামলা করে সেই জমি নিজেই দখল করে নেয়।
অবসরপ্রাপ্ত জেল সুবেদারও আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি তার ছেলের জন্য ২০১১ সালে রিয়াজ মাতাব্বরের ভাই আনোয়ার হোসেন মাতাব্বর থেকে ৫১৪১ নং রেজিস্ট্রি দলিলে ১৩৭ নং দাগে চৌহুদ্দির মাধ্যমে ২৩ শতাংশ জমি ক্রয় করেন ক্রয়ের পর সে ঐ জমিন তিনি ভোগ দখল করে আসছিলো, একদিন রিয়াজ মাতাব্বর ১০/১৫জন লাটিয়াল নিয়ে জমিনে প্রবেশ করে চাষাদেরকে উঠিয়ে দিয়ে সেই জমি দখল করে নেয়। মাতাব্বরের ভয়ে তিনি জোরালো প্রতিবাদ করতে পারেননি বলেও তিনি জানান।
স্থানীয় মক্তব শিক্ষিকা ফিরোজা বেগম জানায়, সে মক্তবের মাধ্যমে এলাকার কোমলাবতি বাচ্ছাদেরকে ইসলাম ধর্ম বিষয়ক পবিত্র কোরআন শিক্ষা দিয়ে আসছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী রিয়াজ মাতাব্বর ২০-৩০জন সর্দার লাঠিয়াল নিয়ে তাদের জমি দখল করার জন্য বাড়িতে প্রবেশ করে এবং সে বাধা দিতে চাইলে তাকে মেরে পরনের কাপড় টানা হেচড়া করে এক পর্যায় তাকে বিব¯্র করিয়া শীলতাহানী করে। এ বিষয় মামলা করা হয়েছে বলেও তিনি জানায়।
সালাউদ্দিন মাস্টার জানান, এসব বিষয় নিয়ে রিয়াজ মাতাব্বরের ভাতিজা স্থানীয় চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মাতাব্বরকে তাদের পক্ষ থেকে প্রায় অর্ধ শতাধীকবার জানানো হয়েছে। সমাধান করবেন বলে তিনি জানিয়েছিলেন।
স্থানীয়রা জানায়, মাতাব্বরদের কয়েকজন লাঠিয়াল নিয়ে এলাকায় অপর্কম করে চষে বেড়াচ্ছেন, তারা সারাক্ষন মানুষের সাথে দাঙ্গা হাঙ্গামা মামলা মোকদ্দমায় জরিয়ে পরেন। এরা মানুয়ের কাছে জমি বিক্রয় করে কিছু দিন পরেই সেই জমি নিজেই দখল করতে হামলা ও বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেন। প্রায়ই তাদের এমন ঘটনা রয়েছে। স্থানীয় মহিউদ্দিন চেয়ারম্যান রিয়াজ মাতাব্বরের ভাতিজা। তাই সে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা দেখিয়ে আরো বেশি দাপটের সঙ্গে অপর্কম করছেন, অথচ চেয়ারম্যান সুনামের সহিত পুরো ইউনিয়ন র্কাযক্রম পরিচালনা করে আসছেন। এদের কয়েক জনের কারনে চেয়ারম্যানের ভাবর্মূতি ক্ষুন্নসহ পুরো বংশের বদনাম হয় বলেও তারা জানিয়েছেন।
মাতাব্বরের বিরুদ্ধে শুধু অভিযোগই নয়, মিলেছে অনেক অভিযোগের সত্যতাও। ঘটনাস্থল গুলোতে গিয়েই দেখাগেছে অপর্কমের বাস্তব চিত্র। সে আদালতের নিষেধজ্ঞা তোয়াক্ক না করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অন্যের পুকুর পাড় কেটে নিজের পুকুরে পানি আনছেন। হয়তো পুকুর পানিতে ভরে গেলে মাছ ছেড়ে দিয়ে দখলও করে নিবেন।
সাংবাদিকদের কাছে এলাকাবাসি অভিযোগ করছে এমন খবর পেয়ে রিয়াজ মাতাব্বর (মেম্বার) দলবল নিয়ে হাজির হন ঘটনা স্থানে। ঘটনা সর্ম্পকে তাকে কোন প্রশ্ন করার অগেই অভিযোগকারীদের উপর হামলা চালাতে প্রস্তুতি নেন ৪/৫ জন টিভি’র সহ ১১-১২ জন সাংবাদিকদের উপস্থিতেই।
তার এলাকায় এসে কেন ভিডিও বা ছবি তোলা হচ্ছে এজন্য তেড়ে উঠেন সাংবাদিকদের উপরও। উত্তেজনাবস্থায় হাতে মোবাইল নিয়ে কল দিবেন বলে বানিজ্য মন্ত্রী মহোদয়সহ উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে হুমকি দেন তিনি। এমকি আইন আদালত, আদেশ নির্দেশ, পুলিশ প্রশাসন কাউকেই তোয়াক্ক করেননা এবং তারহাত বিশাল লাম্বা মুর্হুতের ভিতরে যে কোন ঘটনা ঘটিয়ে দিবেন বলেও সাব জানিয়ে দেন রিয়াজ মাতাব্বর।
এদিকে মাতাব্বরের অত্যাচারে ফুসে উঠছে ভূক্তভোগিরা, যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে রক্তক্ষয়ি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। মাতাব্বর থেকে ঐ এলাকা রক্ষা করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here