ভোটের আগেই আরও শক্তি অর্জন করছে জাতীয় পার্টি

0
288

খবর৭১: ভোটের আগেই নিজের হাতে গড়া দল জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী এবং সুসংহত অবস্থায় দেখতে চান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। চলতি বছর ডিসেম্বরে একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে দলকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিতে চান তিনি। এ জন্য প্রয়োজন সবার আগে পার্টিকে শক্তিশালী করা। পাশাপাশি পার্টিকে সুসংহত করে দলকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানো। আপাতত তাই এ কাজেই এখন বেশি মনোযোগী হয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশন এবং গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিশাল বিজয়ের পর ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। এ জয়ের ধারা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত রাখতে চান তিনি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের পাঁচ সিটি কর্পোরেশনে ভোট হবে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পাঁচ সিটিতেই প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর আগে চলতি মাসের ২৪ তারিখ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করে নিজেদের শক্তি, সামর্থ্য আর সক্ষমতার প্রমাণ দিতে চান তিনি। মহাসমাবেশ সফল করতে এরই মধ্যে সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যুগান্তরকে বলেন, ‘সামনে আমাদের জন্য সুদিন অপেক্ষা করছে। আওয়ামী লীগ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারেনি। তাদের জনসমর্থন শূন্যের কোঠায়। বিএনপি তো মাথা তুলেই দাঁড়াতে পারছে না। এ অবস্থায় দেশের মানুষের কাছে একমাত্র ভরসার জায়গা জাতীয় পার্টি। যার প্রমাণ রংপুর এবং গাইবান্ধার নির্বাচন। মানুষ জাতীয় পার্টির দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। আমি মনে করি, আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে জাতীয় পার্টি সরকার গঠন করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আর বেশিদিন বাকি নেই। হাতে সময়ও খুব অল্প। এ সময়ের মধ্যে জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী অবস্থায় নিয়ে যেতে চাই।’

জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর এবং গাইবান্ধার পরপর দুটি নির্বাচনে বড় জয়ে উজ্জীবিত এখন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাও। তারা নির্বাচনের জয়ের এ ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ধরনের চমক দেখাতে চান। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও নির্বাচনের আগেই দেশের রাজনীতিতে অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে তার দলকে গড়ে তুলতে উঠেপড়ে লেগেছেন। আগামী নির্বাচনেও বড় ধরনের চমক দেখাতে চান তিনি। এর অংশ হিসেবে তৃণমূল পর্যায়ে পার্টিকে ঢেলে সাজাতে মনোযোগী হয়েছেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।

২০১৬ সালের ১৬ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির অষ্টম জাতীয় সম্মেলনের পর থেকেই দলকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে মাঠে নেমেছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নির্বাচন মাথায় রেখেই তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন। এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে আবারও মহাসচিব পদে ফিরিয়ে আনেন। সম্মেলনের পরপরই দলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের কাজ শেষ করেন। সাংগঠনিক তৎপরতা আরও জোরদারের নির্দেশনা দিয়ে সম্প্রতি দলটির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। পার্টির চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে চার দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া জাতীয় পার্টির ৭৬টি সাংগঠনিক জেলার জন্য ৬৪টি টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিমে নেতৃত্ব দেবেন সংশ্লিষ্ট জেলার প্রেসিডিয়াম, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

জানা গেছে, ২৪ মার্চের মহাসমাবেশের পরপরই শুরু হবে এ সাংগঠনিক সফর। রোজার আগে ও পরে জাতীয় পার্টি বিভাগীয় মহাসমাবেশেরও আয়োজন করবে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেই উপস্থিত থাকবেন। এদিকে ঢাকার মহাসমাবেশকে ঘিরেও চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রায় পাঁচ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটাতে চায় দলটি। মহাসমাবেশ সফল করতে আগামীকাল জেলা ও উপজেলার নেতাদের ঢাকায় ডেকেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ। তাদের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় করবেন।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি যুগান্তরকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচন আমাদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে আমরা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জয়ী হতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, আমাদের সামনে এখন সুবর্ণ সুযোগ অপেক্ষা করছে। দল গুছিয়ে আমরা এই সুযোগটি কাজে লাগতে চাই।’ এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য রাষ্ট্রক্ষমতা। এই লক্ষ্য অর্জনের পথে আমরা এগিয়ে চলছি। জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে যে বড় ফ্যাক্টর আগামী ২৪ মার্চ মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে। এদিন আমরা দেশবাসীকে জাতীয় পার্টির শক্তি ও সামর্থ্যরে বিষয়টি জানান দেব।’

সূত্র জানায়, পার্টিকে শক্তিশালী করতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ইতিমধ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে ইসলামী ঘরানার ৫৬টি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আলাদা জোট গঠন করেছেন তিনি। ৩০০ আসনেই সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা এখন তার হাতে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী এরই মধ্যে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত একাধিক আমলা, ব্যবসায়ী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ জাতীয় পার্টিতে নাম লিখিয়েছেন। সর্বশেষ পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। এসব উদ্যোগ পার্টিকে নির্বাচনের আগে আরও শক্তিশালী এবং সুসংহত করার অংশ বলেই মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

জাতীয় পার্টির নেতাদের মতে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং তার স্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের নেতৃত্ব জাতীয় পার্টির ঐক্য এখন বেশ সুসংসত। শীর্ষ নেতারাও এখন এরশাদ ও রওশনের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন, যা দলকে এগিয়ে নিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তাদের মতে, যে কোনো সময় জাতীয় পার্টির মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও পদত্যাগ করবেন। এটি হলে পার্টির ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না, যা আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে কাজে লাগবে। নেতাদের মতে, নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেই তত্ত্বাবধান করছেন। এক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করছেন পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।

জানা গেছে, এরই মধ্যে দলের সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় আরও বেশি সময় দেয়ার জন্য বলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। সংসদ সদস্যদের বাইরে দলের শীর্ষ নেতা এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও যার যার এলাকায় যাতায়াত বাড়াতে বলেছেন তিনি। নির্বাচনের আগে পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করার জন্য দলের মহাসচিবকে দায়িত্ব দিয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি নিজেও রংপুর, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, বগুড়া, গাইবান্ধা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ প্রায় ২০টি জেলায় গত দুই মাসে সফর করেছেন। এ সফরের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- প্রথমত, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে কোনো মূল্যে নিজের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করা। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনের আগেই জাতীয় পার্টিকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করা।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here