ব্রিটেনের কার্গো নিষেধাজ্ঞা উঠতে পারে কাল

0
611

খবর৭১: অবশেষে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি আকাশপথে পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে ব্রিটেন। যদিও গত বছর ডিসেম্বর মাসেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ও বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাই কমিশন যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেওয়া প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এজন্য বাংলাদেশেকে মানতে হবে কয়টি শর্ত। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও সিভিল এভিয়েশন অথরিটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ও বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাই কমিশন যৌথ সংবাদ সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী শাহজাহান কামাল, সিভিল এভিয়েশন অথরিটির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান, বাংলদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই-কমিশনার অ্যালিসন ব্লেক এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে সরাসরি আকাশপথে পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তথ্য তুলে ধরবেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে আসবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা।

সিভিল এভিয়েশন অথরিটি সূত্রে আরও জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা এলেও বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে ব্রিটেন। শর্ত অনুসারে, শাহজালালের নিরাপত্তা বিষয়ে দীর্ঘ মেয়াদে দু’জন পরামর্শ নিয়োগ, এভিয়েশন সিকিউরিটিতে ইউকে মডেল অনুসরণ করা, ইউকের ও বাংলাদেশের যৌথভাবে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্মূল্যায়ন করা।

১৮ ফেব্রুয়ারি সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ও বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাই কমিশন যৌথ সংবাদ সম্মেলন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিভিল এভিয়েশন অথরিটি এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কর্মকর্তা বলেন, যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন হবে। সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ হাই কমিশন কী বিষয়ে কথা বলবেন তা আমরা এখনও নিশ্চিত নই, তবে আশা করছি ভালো কোনও সংবাদ আসবে।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী সপ্তাহে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ও বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাই কমিশন যৌথ সংবাদ করবে, সেখানে মন্ত্র্রী উপস্থিত থাকবেন। ডিসেম্বর থেকেই আমরা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণার আশায় ছিলাম। আশা করছি সেই সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা আসবে।

সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে আলোচনার জন্য গত ২৭ নভেম্বর ব্রিটেন সফরে যান তৎকালীন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি। অন্যদিকে, ব্রিটেনের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ২২ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত শাহজালালের নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সিভিল এভিয়েশন অথরিটির সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠক করেন। তৎকালীন বিমানমন্ত্রী সঙ্গে ইউকে ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি) এর বৈঠকের পর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বিষয়টি আলোচানায় আসে। কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষাণা আশার মধ্যেই ফের শর্ত দেয় ব্রিটেন। এসব শর্ত নিয়ে আলোচনা চলে মন্ত্রণালয় ও ব্রিটেন মধ্যে।

কার্গো পরিবহন রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অন্যতম একটি আয়ের উৎস। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বিমান মুনাফা অর্জন করলে বিগত অর্থ বছর থেকে কমেছে নিট মুনাফা। ১৯ ডিসেম্বর বিমানের দশম বার্ষিক সাধারণ সভায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আর্থিক বিবরণী অনুমোদিত হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, কার্গো পরিবহনে ব্রিটেনের নিষেধাজ্ঞার কারণে বিমানের মুনাফায় প্রভাব পড়েছে। কার্গো পরিবহন খাতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিমান ৩৩ হাজার ৫৪২ মেট্রিক টন মালামাল পরিবহন করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যা ছিল ৪০,৯৩১ মেট্রিক টন। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ কম কার্গো পরিবহন করেছে সংস্থাটি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কার্গো খাতে বিমানের আয় হয়েছে ২৪৪ কোটি টাকা। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতে আয় ছিল ৩১৫ কোটি টাকা।

২০১৬ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশের সঙ্গে আকাশপথে সরাসরি কার্গো পরিবহনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে ব্রিটেন। পরবর্তীতে দেশটির পরামর্শে নিরাপত্তা পরামর্শক, প্রশিক্ষণের জন্য ২০১৬ সালের ২১ মার্চ ব্রিটেনের রেডলাইন অ্যাসিউরড সিকিউরিটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। রেডলাইন সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশিসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের পরামর্শ দেয়। ইতিমধ্যে রেডলাইনের পরামর্শে আরেক ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান স্মিথ ডিটেকশন থেকে কেনা হয়েছে বিস্ফোরক শনাক্তকরণ যন্ত্রপাতি। এসব যন্ত্র শাহজালালে বসানো হয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের মার্চে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর ব্রিটেনের পরামর্শে শাহজালালের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেড লাইনকে। প্রতিষ্ঠানটি সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশিসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের পরামর্শ দেয়। ব্রিটেনের পরামর্শে রফতানি কার্গো জোনে বসানো হয়েছে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস)। এছাড়া, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এএপিবিএন) ডগ স্কোয়াডে যুক্ত হয়েছে ৮টি কুকুর।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here