বৃহস্পতিবার সাধারণ ছুটি ঢাকার দুই সিটিতে, নিরুত্তাপ ভোট

0
334

খবর৭১ঃঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে উপ-নির্বাচন এবং দুই সিটির সম্প্রসারিত ৩৬টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বৃহস্পতিবার। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশিরভাগ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ না নেয়ায় নির্বাচনী এলাকায় ভোটের আমেজ দেখা যায়নি। এখন অপেক্ষা শুধু জনগণের রায়ের। ভোট উপলক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে পাবলিক পরীক্ষা থাকলে তা সাধারণ ছুটির বাইরে থাকবে বলা হয়েছে।

এদিকে আইনী জটিলতায় দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা স্থানীয় সরকারের অন্যতম এই প্রতিষ্ঠানটির ভোটকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ব্যালট পেপারসহ সব ধরনের নির্বাচনী সামগ্রী গতকাল মধ্যরাতের আগেই ভোটকেন্দ্রে পৌছে গেছে। এরইমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থানকারী বহিরাগতদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মোটর সাইকেল ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বুধবার রাত থেকে বন্ধ থাকবে বাস, ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন। অনিয়ম ঠেকানো ও ভোটকে নির্বিঘ্ন করতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতয়েন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ইসির পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার সবই করা হয়েছে। নির্বাচনে যে কোন ধরনের সহিংসতা ও অনিয়ম বন্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তারা আবুল কাসেম বলেন, নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে আইনানুযায়ী প্রচারণা বন্ধ থাকবে। আগামী ২ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় কোনও মিছিল, সভা, শোভাযাত্রা করা যাবে না।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আড়াই বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক লন্ডনে মারা যান। এতে করে আসনটি শূন্য হয়ে পড়ে। অন্যদিকে দুই সিটিতে ২০১৭ সালে ১৮টি করে ৩৬টি নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হয়। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে নির্ধারিত সময়ের এক বছর পর গত ২২ জানুয়ারি দুই সিটির তফসিল ঘোষণা করে ইসি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার ডিএনসিসি মেয়র ও দুই সিটির ১৮টি করে ৩৬টি ওয়ার্ডে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

উত্তরে উপ-নির্বাচন দক্ষিণে সাধারণ

ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে সম্প্রসারিত ১৮টি করে মোট ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়াও, ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি উভয় সিটিতে ৬টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে, মেয়র ও কাউন্সিলর উভয় পদের মেয়র হবে এক বছরের চেয়ে কিছু বেশি। দলীয়ভাবে হওয়া ডিএনসিসির মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি) থেকে শাহিন খান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আনিসুর রহমান দেওয়ান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুর রহিম।

এদিকে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি নির্বাচনে ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিল পদে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩০৯ জন। দুই সিটিতে ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিল পদে প্রার্থীর সংখ্যা ৭০ জন। এর মধ্যে ডিএনসিসির ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১৬০ জন, সমসংখ্যাক ওয়ার্ডে ডিএসসিসিতে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ১৪৯ জন। অন্যদিকে ডিএনসিসি‘র ৬ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ৪৫ জন এবং ডিএসসিসিতে ২৫ জন। কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে না।

মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

দুই সিটির নির্বাচনকে ঘিরে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুই সিটিতে টহল শুরু করেছে ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আইনশূঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে আগামী ১ মার্চ পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি কোষ্ট গার্ড ও র‌্যাব দায়িত্ব পালন করছে। ডিএনসিসিতে ২৫ প্লাটুন বিজিবি এবং ডিএসসিসিতে ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও, দুই সিটির মধ্যে ডিএনসিসিতে চার প্লাটুন এবং ডিএসসিসিতে তিন প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসাবে দায়িত্ব পালন করবে।

এবার দুই সিটির প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৩ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ৪ জন অস্ত্রধারী পুলিশ, ৩ জন অস্ত্রধারী আনসার এবং ১২ জন আনসার সদস্য থাকবে লাঠি হাতে। অন্যদিকে, গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৩ জনের মধ্যে ৬ জন অস্ত্রধারী পুলিশ, ৫ জন অস্ত্রধারী আনসার এবং ১২ জন আনসার সদস্য থাকবে লাঠি হাতে অবস্থান করবে। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সেও সদস্যরা ভোটের দুইদিন আগে, ভোটের দিন এবং ভোটের পরের দিনসহ মোট চার দিন মাঠে থাকছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র‌্যাব, পুলিশ ও কয়েক প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে।

যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

নির্বাচন উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় কমিশনের অনুমোদিত স্টিকার বিহীন মটর সাইকেল চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়াও গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে আজ মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে, প্রধান সড়কে (হাইওয়ে) গাড়ি চলাচল করতে পারবে। এছাড়াও ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও ডাক বিভাগের গাড়ি এই নির্দেশনার বাইরে থাকবে। ভোটের দিন নির্বাচনি এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here