সুনামগঞ্জপ্রতিনিধি:
সর্বনাশা ব্লাস্ট ভাইরাস হাওরের ধান পাকার মওসুমে কৃষকদের চরম দুশ্চিন্তার মুখে ফেলে দিলেও বৃষ্টি এখন ব্লাস্ট রোগের নিরাময় হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই দুশ্চিন্তা কিছুটা কমেছে কৃষকদের। তবে জেলার ১১ উপজেলার প্রতিটি হাওরই কমবেশি ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। তবে কৃষক, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন হাওরের নতুন আতঙ্ক ও নয়া রোগ হিসেবে পরিচিত ব্লাস্ট নিয়ে শুরু থেকেই লুকোচুরি করেছে কৃষি বিভাগ। কৃষিবিজ্ঞানীরা বলেছেন প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এই রোগ দেখা দেয়। শুরুতে প্রচারণা না থাকায় রোগাক্রান্ত হওয়ার পর প্রচারণা শুরু করায় কৃষকরা নয়া এই রোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাই ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই অনেক কৃষকের ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, তিনটি উপজেলায় প্রায় ১৫দিন আগে ব্লাস্ট রোগের কথা স্বীকার করা হয়েছিল। এতে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হওয়ার কথা বলা হলেও অন্যান্য হাওরের কথা বলেননি সংশ্লিষ্টরা। এমনকি তাদের হেড অফিসের সামনের হাওরে ব্লাস্ট আক্রান্ত ধান দেখা গেলেও তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন। ব্লাস্ট রোগ নিয়ে কৃষিবিভাগের লুকোচুরি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কৃষিবিজ্ঞানীরা জানান, ব্লাস্ট ভাইরাস জনিত রোগ। গতবছর যে বীজ দেওয়া হয়েছিল সেই বীজেই ছিল এই ভাইরাস। এটি চারা রোপণের সময় পরিশোধন করতে হয়। এছাড়াও ধান আসার আগে পরিশোধন করতে হয়। কিন্তু সুনামগঞ্জের কৃষকরা এই রোগের সঙ্গে পরিচিত না থাকায় ধান পাকার সময় তাদের চোখে রোগটি ধরা পড়ে। নয়া এই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই অনেকের ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। এ নিয়ে সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশিত হলে এসময় সংশ্লিষ্টরা এই রোগ নিয়ে প্রচারণা শুরু করেন। এসময় তারা কৃষকদের জানান, দিনে গরম এবং রাতে ঠা-া, কুয়াশা এবং ক্ষেতে পানি না থাকায় ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব স্প্রে দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্টরা এসময় গণমাধ্যমকে জানান, বৃষ্টি হলে ব্লাস্ট রোগ ধান ক্ষেতে আক্রমণ করতে পারবেনা। দেখা গেছে প্রায় ১০-১২দিন আগে ধান পাকার সময়ে অনেকের ধান লালচে হয়ে পরে সাদারূপ নিয়ে নষ্ট হলেও গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় এই প্রবণতা কমেছে। বৃষ্টি এই রোগের প্রাকৃতিক স্প্রে হিসেবে কাজ করছে বলে জানান কৃষি বিজ্ঞানীরা।
ঝাউয়ার হাওরের কৃষক মাহতাব আলী বলেন, আমার অর্ধেকের বেশি ক্ষেত প্রায় ১০-১২ দিন আগে ধান পাকা ধরার সময় এই রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যে ধান পাকছে তাতে আবার সেই রোগ দেখা যাচ্ছেনা। তিনি বলেন, আমার মনে হয় কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে রোগটা সেরে গেছে। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের লোকজন শুরু থেকে আমাদের এ বিষয়ে সচেতন করলে আমার এত বড় ক্ষতি হতোনা।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সদর উপজেলা কমিটির সদস্য কাজী শামছুজ্জামান সায়েম বলেন, আমাদের ডাকুয়ার হাওরের অনেক জমি এবার এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে কৃষকরা উদ্বিগ্ন। এ নিয়ে তারা বলাবলি করলেও প্রতিরোধের ব্যবস্থা তাদের জানা নেই। কেউ তাদের এ বিষয়ে বলেনি বলে জানান তিনি।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, আমরা এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রকৃত ক্ষতি যাতে না লুকানো হয় সেজন্য আমরা তাদেরকে অনুরোধ করেছি। পাশাপাশি আগামীতে এই সর্বনাশা ব্লাস্ট যাতে হাওরে না ছড়ায় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার সাহা বলেন, প্রথমে কিছু এলাকায় ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছিল। এখন আর এই সমস্যা নেই। কারণ এখন আবহাওয়া অনুকূলে। যে কারণে এখন এই রোগ কমেছে। তবে যে ক্ষতি হয়েছে তা অল্প বলে মনে করেন তিনি।
খবর ৭১/ ই: