বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণা বন্ধে নজরদারি বাড়াতে হবে

0
557
প্রতিটি গ্রামকে সুন্দরভাবে সাজাতে হবে

খবর৭১ঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণা বন্ধে আমাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে, কেননা তারা আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে তুলতে রেমিটেন্স পাঠানোর মাধ্যমে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন।’

প্রধানমন্ত্রী রোববার অভিবাসনবিষয়ক জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম সভায় দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি ২০১৬-এর আলোকে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ কমিটির সভাপতি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যেন অকালে হারিয়ে না যায়, সেজন্য তাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। কেননা তাদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের দিকে নজর দেয়া আমাদের দায়িত্ব, যেহেতু তারা আমাদের দেশেরই নাগরিক। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি বিশ্বের প্রায় একশটি দেশে অবস্থান করে দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে, যা আমাদের দারিদ্র্যবিমোচন এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

যারা কাজের জন্য বিদেশ যাচ্ছে, তাদের জীবনবৃত্তান্ত সহযোগে একটি ডাটাবেজ প্রস্তুত করার জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে তারা কোন কাজের জন্য কোন দেশে যাচ্ছে, তার বিবরণ থাকতে হবে।’

বিদেশে গমনেচ্ছুরা যে কাজের জন্য বিদেশে যাচ্ছে, তার প্রশিক্ষণ এবং সে দেশের ভাষার ওপর দখল থাকার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আমরা যৌথভাবেই প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে পারি, যেমনটি অতীতেও করা হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে একশ্রেণির দালাল ও প্রতারকচক্র রয়েছে, যারা বিপুল অর্থের বিনিময়ে বিদেশে লোক পাঠায়। আর বিদেশে গমনেচ্ছুরা দিনবদলের আশায় তাদের সর্বস্ব বিক্রি করে, ঋণ করে টাকার জোগান দেয়। এমনও দেখা গেছে, এদেরকে বিদেশে নিয়ে দালালচক্র দেশে থাকা তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকেও চাপ প্রয়োগ করে অর্থ আদায় করে। কাজেই আমাদের এই পুরো প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে নজরদারিতে আনতে হবে।

সারা দেশে সরকার ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের পরও জনগণ এসব প্রতারকের ফাঁদে পড়ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিদেশে গমনেচ্ছু জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, তারা দালালের কাছে না গিয়ে বিদেশ যেতে চাইলে এসব ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে যেন নাম রেজিস্ট্রেশন করান।’ তিনি এ বিষয়ে মিডিয়াকে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের মহিলারাও কাজের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে এবং বিদেশে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কাজেই আমরা এখন তাদের জন্য স্মার্টকার্ড এবং মোবাইল ফোন দিচ্ছি, যাতে তারা এ ধরনের দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে পারে।

তার সরকার বিদেশ গমনেচ্ছুদের জন্য প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাতে করে এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তারা বিদেশে যেতে পারেন। আমাদের একটি বৃহৎ কর্মক্ষম যুবশক্তি আছে, যাদের মধ্যে অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, তাদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আমাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে এবং এখন থেকে আমরা দক্ষ জনশক্তিই বিদেশে পাঠাব।

এ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমরা কেবলমাত্র জনশক্তি বিদেশে পাঠাব না, কেননা আমাদেরই দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন পড়বে। কারণ সমগ্র দেশজুড়ে আমরা একশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি এবং আইসিটি ক্ষেত্রের বিকাশ সাধন করছি।’

অভিবাসনবিষয়ক জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বৈঠকে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান সভাটি সঞ্চালনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিমও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here