পুলিশের গাফিলতি খতিয়ে দেখতেই হেডকোয়ার্টার্সের তদন্ত কমিটি

0
425

খবর৭১ঃ ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দফতর। পাঁচ সদস্যের কমিটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) রুহুল আমিন। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বুধবার (১৮ এপ্রিল) সকালে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী উপ-মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) সোহেল রানা ব্রেকিংনিউজকে কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পুলিশ সদর দফতরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নুসরাতকে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে মারার পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। বিশেষ করে সোনাগাজীর ওসির বিরুদ্ধে নুসরাতকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় ভিডিও ধারণ করা এবং সেই ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়গুলোই তদন্তকারীরা বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করবেন।

তিনি আরও জানান, নুসরাতের ঘটনার পর পুলিশ আর কি কি ভূমিকা নিতে পারত বা জেলা পুলিশসহ কারও কোনো গাফিলতি আছে কি-না তা জানতে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে- গঠিত তদন্ত কমিটিতে ডিআইজি রুহুল আমিন ছাড়াও রয়েছেন, সিআইডি চট্টগ্রাম রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা একজন পুলিশ সুপার (এসপি), চট্টগ্রাম রেঞ্জের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সেরই একজন ইন্সপেক্টর।

কমিটির প্রধান ডিআইজি রুহুল আমিন জানিয়েছেন, সাত দিনের ভেতর প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও যতো দ্রুত সম্ভব এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি গভীরভাবে তদন্ত করছি। এই কাজেই আমরা ব্যস্ত রয়েছি। এখনই বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। আমিসহ পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ঘটনাটি নিয়ে কাজ করছি। দ্রুততম সময়ে মধ্যেই আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবো।’

আলোচিত এ মামলায় এ পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। এরা হলেন- ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা, পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্যাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, যোবায়ের হোসেন, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি ও আব্দুর রহিম শরিফ। এদের মধ্যে মামলার এজহারভুক্ত আট জনের সাতজন রয়েছেন।

গ্রেফতারদের মধ্যে আসামি নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম ও আব্দুর রহিম শরিফ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল ফেনীর পৌর শহরের সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রের ছাদে নিয়ে হাত-পা চেপে ধরে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় বোরকা পড়া কয়েকজন দুর্বৃত্ত। এসময় তার চিৎকারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান।

গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা যান আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি। শনিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে লাখো মানুষের জানাজার পর সন্ধ্যায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।

পরিবারের অভিযোগ, মাদরাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজউদ্দৌলা গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহানের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। নুসরাত বিষয়টি বাসায় জানালে তার মা সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে। এরপর মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় সিরাজউদ্দৌলার লোকজন। কিন্তু নুসরাত অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে হত্যা করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here