পানিশূণ্য চলনবিলে জীববৈচিত্র্য বিলুপ্ত

0
262

রিপন দাসঃ বর্ষা মৌসুমে কিছু দিনের জন্য পানি থাকলেও সাড়া বছরই শুকনো থাকে চলনবিল। ফসল উৎপাদনের জন্য সেচ দিতে হয় কৃষকের। পানির অভাবে ফসলের উৎপাদনের পাশাপাশি বিলুপ্ত হয়েছে বিভিন্ন ধরণের মাছসহ হাজার হাজার প্রজাতির নানা জীববৈচিত্র্য। দেশের পাঁচটি জেলার ১১টি উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত বৃহৎ চলনবিল দিয়ে প্রবাহিত ১৪টি নদী থাকলেও এখন পানি শূণ্য। কীটনাশকের অপরিকল্পিত ব্যবহারের পাশাপাশি পানির অভাবে জীববৈচিত্র্য হারাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক জলাধার চলনবিল। পরিবেশবিদদের ধারণা, সরকার উদ্যোগ না নিলে এ বিলের অস্তিত সংকটে পড়বে অতিশীঘ্রই।

নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, এ বিলে বহু প্রজাতির জীববৈচিত্র্য হারিয়ে গেছে। অধিকাংশ কারণ রয়েছে প্রভাবশালীদের নানা ধরণের অবকাঠামো তৈরীর পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণ। আর এক শ্রেণির ঘাতক পাখি শিকারী যারা মাঝে মধ্যেই অতিথি পাখিসহ দেশীয় নানা জাতের পাখি শিকার করে থাকে। কিন্তু বাঁধা দেয়ার কেউ নেয়। সরকারী পৃষ্টপোষকতা ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের সহযোগীতারমাধ্যমে চলনবিলকে রক্ষা করা সম্ভব। তবে আমরা আমাদের নিজ সহযোগীতায় এ বিলকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।

কয়েক বছর আগেও বগুড়ার কিছু অঞ্চলসহ পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর আর নওগাঁর ১১টি উপজেলায় বিস্তৃত ছিল চলনবিল। ইম্পিরিয়াল গেজেট অব ইন্ডিয়ায় এ বিল সম্পর্কে যেসব তথ্য আছে তার অনেক কিছুই এখন আর নেই। উইকিপিডিয়া তথ্য মতে, এ বিলের আয়তন ১ হাজার ৮৮ বর্গ কিলোমিটার,কিন্তু কমে এখন এর আয়তন দাঁড়িয়েছে প্রায় অর্ধেক। ইতোমধ্যেই আয়তনের সাথে হারিয়ে গেছে ৩৯ প্রজাতির মাছ। অথচ কয়েক বছর আগেও এ বিলের পানিতে ছিল ১৩০ প্রজাতির মাছ। এছাড়া ১৭ ধরণের সরীসৃপসহ ১১৬ ধরণের জীবও বিলুপ্ত হয়েছে।পাশাপাশি ৫১ জাতের স্থানীয় আউস ও আমন ধানহারিয়ে গেছে।এ বিলকে কেন্দ্র করে জীবন জীবিকা চলত অন্তত ৫০ লাখ মানুষের।

বিলে পানি না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সিংড়া উপজেলার মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, ছোট বেলা দেখেছি সব সময়ই কিছু না কিছু পানি থাকতো। কিন্তু এখন সাড়া বছরই শুকনো থাকে। শুধু মাত্র বর্ষার সময়ে অল্প দিনের জন্য পানি থাকে। অনেক মাছ দেখেছি সাথে নানা ধরণের বক ও পাখি ছিল। কিন্তু এখন আর পাখি চোখে পড়ে না।

একই বিষয়ে আরো জানতে চাইলে সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের মোঃ আজগর আলী জানান, আমি ছোট বেলা বাবার সাথে বিলের মাঝে মাছ ধরতে যেতাম। পানি ছিল অনেক গভীর আর নানা ধরণের বড় ও ছোট মাছ পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন আমার বয়স প্রায় ষাটের কাছাকাছি আগের মত আর সেই চলনবিল নেয়।

এ বিল সম্পর্কে পরিবেশবাদীরা আরো জানান, রং বে-রংয়ের হাজার হাজার পাখিরঅভয়ারণ্য ছিল চলনবিল। শিকারীর ফাঁদ আর গুলিতে প্রতিদিন মরছে পাখি। তারপরেও অপরিকল্পিত অবকাঠামোর কারণে বিল পানি শূণ্য হয়ে পড়ায় খাদ্যে সংকটে পড়েছে পাখি। ছোট বড় প্রায় ২২টি বিলের সমন্বয়ে বৃহৎ এ চলনবিল এখন মৃত প্রায়।

খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here