পাখিমারা টিআরএম বিল ব্যবস্থাপনা নিয়ে তালা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

0
380

সেলিম হায়দারঃ
কপোতাক্ষ নদের উপর ক্রসড্যাম স্থাপন, পাখিমারা টিআরএম বিল ব্যবস্থাপনা ও পেরিফেরিয়াল বাঁধ পরিস্থিতি নিয়ে তালা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার (৫ জানুয়ারী) সকালে উত্তরণ ও পানি কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তালা উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি মোঃ ময়নুল ইসলাম।
তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, কপোতাক্ষ নদের নাব্যতা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানকল্পে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিগত ২০১১ সালে ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পে (১ম পর্যায়)’ মূলতঃ দুটি কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। যার আওতায় একটি পাখিমারা বিলে টিআরএম স্থাপন এবং অন্যটি প্রায় ৯০ কিমি. নদী খনন করা হয়। টিআরএম চলাকালে মূল নদের উপর ক্রসড্যাম দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে জোয়ারবাহিত পলি উপরাংশে না ঢুকিয়ে টিআরএম বিলে প্রবেশ করানো হয় এবং বর্ষা মৌসুমের শুরুতে পুনরায় ক্রসড্যাম তুলে দেয়া হয়। এই প্রকল্প গ্রহণের পরে ২০১৬-২০১৭ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত কপোতাক্ষ অববাহিকায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পায়। নদী রক্ষায় পলি ব্যবস্থাপনার আওতায় ক্রসড্যাম স্থাপন একটি নিয়মিত কার্যক্রম। কিন্তু এ বছর পলি মৌসুমের অনেক আগেই নদীতে পলির আগমন ঘটেছে এবং প্রচুর পরিমাণে পলি টিআরএম এর উজান অংশে প্রবেশ করে নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে।
এ প্রেক্ষিতে এলাকাবাসীর অভিযোগ, ডিসেম্বর-জানুয়ারীতে অর্থাৎ শুষ্ক মৌসুমের শুরুর এই সময়ে নদীতে ক্রসড্যাম না দিলে নদীকে রক্ষা করা যাবে না। উত্তরণ এর অনুসন্ধানের আলোকে, পলিযুক্ত জোয়ার বাহিত প্রতি লিটার পানিতে প্রায় ৬০ গ্রাম পলি নদীতে অনুপ্রবেশ করছে। যদিও সরকার ইতোমধ্যে ক্রসড্যাম স্থাপনের কাজ গ্রহন করেছে কিন্তু তা ধীর গতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে অর্থাৎ এখন পর্যন্ত কেবলমাত্র বাজেট অনুমোদন পেয়েছে কিন্তু এখনও টেন্ডার হয়নি। সেকারণে এসব কার্যক্রম সমাধান করে বাঁধ স্থাপনে কমপক্ষে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে। অন্যদিকে পানিতে পলির আধিক্যতায় এলাকাবাসীর আশংকা যে, এভাবে পলির অবক্ষেপন ঘটলে নদী দ্রুত মারা যাবে। সেজন্য অতি দ্রুত যদি এই ক্রসড্যাম স্থাপন করা না হয় এবং এ বিষয়টি নিয়মিত কার্যক্রমের মধ্যে না রাখা যায় তাহলে প্রায় ২৬২ কোটি টাকার প্রকল্পের সুফল বেশিদিন থাকবে না। পাশাপাশি বিল অধিবাসীদের দাবী বর্ষা মৌসুম শুরুর পূর্বেই পাখিমারা টিআরএম বিলের চারিধারের পেরিফেরিয়াল বাঁধের সংস্কার অতি জরুরী। ইতোপূর্বে পেরিফেরিয়াল বাঁধ ভেঙ্গে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং জনগণের দূর্ভোগ ও জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যা প্রকল্প বাস্তবায়নকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেয় এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে। যে কারণে পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার করা জরুরী।
এছাড়া প্রকল্পটির সঠিক সুফল পাওয়ার জন্য সুষ্ঠুভাবে বিল ব্যবস্থাপনা জরুরী। টিআরএম সংযোগ খালের মাধ্যমে বেসিনের দূরবর্তী পশ্চিমাংশে যাতে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে পলি অবক্ষেপিত হতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। ইতোমধ্যে সরকার ২০২১ সাল পর্যন্ত টিআরএম চালু রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সেজন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উত্তরণ ও পানি কমিটি যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনে অতিদ্রুত অর্থাৎ জানুয়ারী মাসের মধ্যে পাখিমারা টিআরএম বিলের বালিয়া কাটপয়েন্টে নদীর উজানমুখে ক্রসড্যাম স্থাপনের কাজ সমাপ্ত করা, ভবিষ্যতে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে অর্থাৎ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতি বছর নদীতে ক্রসড্যাম স্থাপনের কাজ সমাপ্ত করা এবং যথাসময়ে তা অপসারণ করা, জরুরীভাবে পাখিমারা টিআরএম বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার, প্রকল্প সফলতার জন্য পাখিমারা টিআরএম বেসিনের দূরবর্তী পশ্চিমাংশে পলি অবক্ষেপনের ব্যবস্থা, পাখিমারা টিআরএম বিলের স্থায়ী ও অস্থায়ী অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের অবশিষ্ট টাকা দ্রুত প্রাপ্তির ব্যবস্থা গ্রহণ, টিআরএম বিলের উপর নির্ভরশীল অধিবাসীদের মধ্যে যারা ক্ষতিপূরণ পায়নি এবং যারা আবেদন করতে পারেনি তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং টিআরএম কাটপয়েন্টের নি¤œাংশে নদীর ভাঙন রোধে যথোপোযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করর দাবী সমূহ উত্থাপন করেন।
সরকারের নিকট আবেদন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, অতি দ্রুত টিআরএম বেসিনের ভিতরে পলি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব প্রদান করে নদীর বিপরীত দিকে অর্থাৎ বিলের দূরবর্তী পশ্চিমাংশ যেখানে বিগত ২ বছরে মাত্র ১ ইঞ্চি পলি অবক্ষেপিত হয়েছে সেখানে পলি ভরাটের ব্যবস্থা করতে হবে।
তাছাড়া জোয়ারাধার বিল অধিবাসী বা কৃষকদের ফসলের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টিও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করা হবে এ প্রকল্পের অন্যতম সাফল্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি সিদ্ধান্তের সাথে অতিদ্রুত প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করতে হবে। নতুন বিলের চেয়ে চলমান এই বিলে আরও ৫-৭ বছর জোয়ারাধার চালানো সম্ভব, তাতে আর্থিক সাশ্রয়সহ নানাবিধ জটিলতা হ্রাস পাবে। এ বিষয়ে এলাকার জনগণ ও সংশ্লিষ্ট পক্ষদের সাথে এখনই সমন্বয় করতে হবে। ক্রসড্যাম স্থাপনের ক্ষেত্রে ধীরগতি ও সময়ক্ষেপনে দ্রুত নদীভরাট ও টিআরএম বিলে পলি ভরাট উভয় ক্ষেত্রে চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। যা বিভিন্নভাবে এলাকার জনগণকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এহেন পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান।

খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here