পাইকগাছার কপিলমুনিকে ঘিরে প্রতাপকাটি এলাকায় গড়ে উঠেছে মাদকের সম্মাজ্য

0
256

শেখ দীন মাহমুদ,পাইকগাছা(খুলনা):
উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনিকে ঘিরে তার পার্শ্ববর্তী প্রতাপকাটি এলাকায় নতুন করে গড়ে উঠেছে মাদকের সম্মাজ্য। স্থানীয় প্রশাসনের পরোক্ষ সহায়তায় নতুন ও পুরনো বিক্রেতাদের যৌথ সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে এ সম্মাজ্য। গত প্রায় দু’বছরে কপিলমুনি সদরের বিভিন্ন মাদক বিক্রি স্পটকে ঘিরে র‌্যাব,যৌথ বাহিনী,মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ডিবি পুলিশের পৃথক পৃথক অভিযানে বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ একাধিক বিক্রেতা গ্রেফতার হওয়ায় মূলত কপিলমুনি কেন্দ্রিক মাদকের চিহ্নিত স্পটগুলী উঠে গেলেও বন্ধ হয়নি এর বিকিকিনি। শুধু স্পট পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। তবে স্থানীয় পুলিশ এক অজ্ঞাত কারণে মাদক সিন্ডিকেটের কারো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এতে করে স্থানীয়দের পাশাপাশি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত মাদকসেবী নিরাপদ ভেবে জড়ো হচ্ছে প্রতাপকাটির আঁখড়াগুলোতে।
অভিযোগে জানাগেছে,সদরের বিক্রয় স্পগুলি উঠে যাওয়ায় প্রতাপকাটি এলাকার জনৈক সালামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটে নতুনদের পাশাপাশি রয়েছে পুরনো বিক্রেতাদের অনেকে। অনেকে আবার অধিক লাভের আশায় পেশা পরিবর্তন করে ঢুকে পড়ছে সিন্ডিকেটে। ইতোমধ্যে এক কোচিং শিক্ষক তার কোচিং সেন্টার ছেড়ে নাম লিখিয়েছে সিন্ডিকেটে। প্রতাপকাটি ছাড়াও বিভিন্ন পেশার বিভিন্নজনদের তারা তাদের সম্মাজ্যে সম্পৃক্ত করতে রীতিমত লবিষ্ট নিয়োগ দিয়ে মিশন সহ মাঠে নামিয়েছে। এক্ষেত্রে সফলও হচ্ছে তারা। সূত্র জানায়,সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি ঐ এলাকার কয়েকটি রাস্তা ও মোড়ে দাড়িয়ে এক প্রকার অবাধে বিক্রি করছে ফেন্সিডিল,ইয়াবা,গাঁজা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকার দেশী-বিদেশী মাদকদ্রব্য। প্রতিদিন শ’ শ’ মাদকসেবী ঐএলাকায় গিয়ে নির্জন নিরাপদ এলাকায় দাঁড়িয়ে অথবা নির্দিষ্ট স্থানে বসে সেবন করছে মাদক। এলাকাবাসী জানায়,দুপুরের পর থেকে শুরু করে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত প্রতাপকাটির কালীতলা এলাকায় নেশা খোরদের কারণে পথ চলতেও বিভিন্ন সময় পথচারীদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। আবার কেউ কেউ সেখান থেকে মাদকদ্রব্য কিনে নিয়ে ফিরছে যার যার গন্তব্যে। তাদের দাবি সরকারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স ঘোষনায় স্থানীয় পুলিশ বিষয়টিকে আঁড়াল করতে বিভিন্ন সময় মাদকসেবীদের কারো কারো স্পটের বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে যৎসামান্য গাঁজাসহ আটক করছে। মাদক নির্মূলে স্থানীয় পুলিশের এই আইওয়াশের বিষয়টিকে ভিন্ন চোখে দেখছেন অনেকে। সূত্র জানায়,প্রতাপকাটিকে ঘিরে গড়ে ওঠা মাদক সম্মাজ্যোর অন্তরালে জড়িত রয়েছে অনেক প্রভাবশালীদের নাম। বিভিন্ন সময় সিন্ডিকেটরদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তারা সহায়তা করে থাকেন। প্রশাসনিক ঝামেলা না থাকায় স্থানীয়দের পাশাপাশি উপজেলা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকেও চিহ্নিত মাদক সেবীরা প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত অবধি জড়ো হয় প্রতাপকাটির বিভিন্ন আঁখড়ায়।
এলাকাবাসী জানায়,ভ্যান চালক থেকে শুরু করে শ্রমজীবি,পেশা জীবিদের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের ছাত্ররা রয়েছে মাদকসেবীদের কাতারে। ফেনসিডিল,গাঁজা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের সাথে সিন্ডিকেটটি নেশাখোরদের হাতে পৌছে দিচ্ছে মরণ নেশা ইয়াবা। এতে এলাকার যুব সমাজের উপর ইতোমধ্যে ব্যাপক বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চুরির পাশাপাশি বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপও বেড়ে গেছে অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশী। এলাকাবাসী জানায়,মাদকের সহজলভ্যতা ও প্রাপ্যতায় ৫/৭ বছরের শিশুদেরকেও ঝিম ধরায় নেশার লাটিম। অনেকে নেশার টাকা জোগাড়ে ব্যর্থ হয়ে ঝুঁকে পড়ছে ভারতীয় ডেন্টারেট আঁঠা বা গামের উপর,কেউবা চাহিদা মেটাচ্ছে জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি নিভিয়ে তার ঝাঁঝালো গন্ধে। এক সময় চাহিদার উপর ভিত্তি করে তাদের হাতেও চলে যাচ্ছে মাদক। মাদকের এমন ব্যবহার ও বাজারজাত প্রক্রিয়ায় স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজে যাওয়া আসার সময় পথিমধ্যে তারা প্রায়ই এসব নেশাখোরদের অশ্লীল অঙ্গ-ভঙ্গি ও নোংরা বাক্যবাণের শিকার হয়। সম্মাসসহ প্রভাব কিংবা পরে বড় ধরণের ক্ষতির আশংকায় অনেক ছাত্রীই এদের প্রতিবাদ না করেই ঘরে ফেরে। কখনো কখনো তাদের অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে অসম সম্পর্কে। সন্তানদের অনাগত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় অভিভাবক মহলেও নানা আশংকায় রীতিমত আতংক তৈরী হয়েছে। তার পরও হুশ হচ্ছেনা স্থানীয় প্রশাসনের। সূত্র জানায়,কপিলমুনি
ফাঁড়ির পুলিশ বিভিন্ন সময় প্রতাপকাটির বিভিন্ন এলাকায় টহলে গেলেও ঐসকল মাদকের কোন স্পটে হাজির হয়না। অনেক সময় সিন্ডিকেটরদের অনেকের সাথেও খোশ গল্পে মত্ত থাকতে দেখা যায়। জানা গেছে,ক’দিন আগেও যারা শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে তাদের অনেকেই এখন ডিসকভার চেপে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকে আবার যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে নিত্য নতুন ব্রান্ড পরিবর্তন করছে। সূত্রের দাবি এরা সবাই মাদকের অবাধ ফেরিওয়ালা। মাদক সম্মাজ্য টিকিয়ে রাখতে এরা প্রায় সারাক্ষণ এসব সাইকেল চেপে ঘুরে বেড়ায়,পাহারা দেয় তাদের সম্মাজ্য কোথাও কোন সন্দেহজনক লোককে দেখলেই মোবাইলে জানিয়ে দেয় সিন্ডিকেটরদের। এতে কিছুক্ষণের জন্য সতর্ক অবস্থান নেয় তারা। সম্প্রতি খানিকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা। নেশাখোরদের চাহিদা মাফিক মাদক মোটর সাইকেল বা পায়ে হেঁটে পৌছে দিয়ে প্রসারতা বৃদ্ধি করছে সম্মাজ্যোর।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়,ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে মহিলা,শিশু বা নিজেরাই বিভিন্ন মাধ্যমে ছদ্মাবেশে প্রতাপকাটি এলাকায় ঢুকে পড়ছে মাদকের বোঝা নিয়ে। এরপর তা নিরাপদ গুদামজাত করে বিক্রি করছে।
এব্যাপারে কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই জাহাঙ্গীরের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,খবর পেয়ে বিভিন্ন সময় ঐ এলাকায় গিয়েও পুলিশ বিক্রেতা বা ক্রেতাদের কারো খুঁজে পায়নি। সঠিক তথ্য পেলে তারা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন।
খবর ৭১/ এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here