খবর ৭১ঃ পদ্মা সেতুর ১৩ তম স্প্যান গতকাল শুক্রবার বসানোর কথা থাকলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে আজ শনিবার আবারও মুন্সীগঞ্জ প্রান্তের ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারে স্প্যানটি বসানোর চেষ্টা করা হবে। এই স্প্যানটি স্থাপন হলে সেতুর প্রায় দুই কিলোমিটার দৃশ্যমান হবে।
এর আগে নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায় স্প্যানবাহী ক্রেনটি চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে ৩ ঘণ্টা দেরিতে স্প্যান নিয়ে সেটি নির্ধারিত দুই পিলারের দিকে রওয়ানা দেয়। দুপুরে ২টায় ক্রেনটি নোঙ্গর করা হলেও স্প্যান বসানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে ছিল না। এতে কাজ স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
পদ্মাসেতুর প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বাসসকে জানান, ‘পদ্মা সেতুর ১৩ তম স্প্যান ১৫ নম্বর খুঁটির সামনে এনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এটি শনিবার সকালে বসানো হবে। এই স্প্যানটি স্থাপন হলে সেতু দৃশ্যমান হবে প্রায় ২ কিলোমিটার।’
তিনি আরও জানান, ‘৩বি’ নামের স্প্যানটি মাওয়া প্রান্তে ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারে বসানো হচ্ছে। ধূসর রংয়ের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ক্রেন বহন করে নিয়ে আসে। এটি এখন অ্যাংকরিং হয়েছে। ভাসমান ক্র্যানবাহী জাহাজটি যথাস্থানে এ্যাংকরিং সম্পন্ন করার পরই ক্রেনে করে এটি স্থাপন করা হবে খুঁটির ওপরে।
এর আগে ২০ মে বসানোর কথা থাকলেও পদ্মায় নাব্যতা সংকট আর লিফটিং ক্রেনের স্বল্পতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। স্প্যানবহনকারী ক্রেনের রুটে পদ্মায় নাব্যতা-সংকট রয়েছে। এ ছাড়া স্প্যানটি ভাসমান ক্রেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য লিফটিং ক্রেন প্রয়োজন। লিফটিং ক্রেন ২৬ নম্বর পিলারের পাইলিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাইলিং কাজ শেষ হলে ১৩ তম স্প্যানটি বসানো হবে। এই স্প্যানটি বসানো হলে সেতুর ১ হাজার ৯৫০ মিটার দৃশ্যমান হবে।
জাজিরা প্রান্তে সেতুর ১ হাজার ৩৫০ মিটার ও মাওয়া প্রান্তের একটি স্থায়ী ও একটি অস্থায়ী স্প্যান মিলে মোট ৩০০ মিটার এবং সেতুর মাঝ বরাবর ৫-এফ স্প্যানটি অস্থায়ীভাবে বসানো শেষ হওয়ায় সেতুর মোট ১ হাজার ৮০০ মিটার আগেই দৃশ্যমান আছে। তবে স্প্যানগুলো ভিন্ন ভিন্ন মডিউলে বসানোর কারণে দৃশ্যমান অংশগুলো এক সারিতে নয়, বরং বিচ্ছিন্নভাবে থাকবে।
এ ছাড়া সেতুতে রোডওয়ে স্লাব ও রেলওয়ে স্লাব বসানোর কাজ চলছে জোড়েসোরে। এরই মধ্যে সেতুতে মোট ৩১২টি রেলওয়ে স্লাব ও ১৬ টি রোডওয়ে স্লাব বসানো সম্পন্ন হয়েছে। আর বসানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে ২০০০টি রেলওয়ে স্লাব ও ৮০০টি রোডওয়ে স্লাব।
জানা যায়, পদ্মা সেতুর অগ্রগতি ৭৬ শতাংশ, আর নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে পদ্মাসেতু প্রকল্পের অগ্রগতি এখন ৬৭ শতাংশ। সেতুর মূল ২৬২টি পাইলের মধ্যে ২৩৬টি পাইল ড্রাইভিং শেষ হয়েছে। বাকি থাকা ২৬টি পাইল জুলাই মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল এক প্রৌকশলী।
এ ছাড়া মূল সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ২৫টি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে আরও ছয়টি পিলারের কাজ শেষ হবে। আর বাকি ১১টি পিলারের কাজ চলমান। মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ২৩টি স্প্যান ছিল। এর মধ্যে ১২টি স্প্যান পিলারের ওপর বসানো হয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।