নড়াইলে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালিত

0
603

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:  নড়াইল জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রীকৃষ্ণ ভক্তরা ঢোলের বোল, ব্যান্ডের বাজনা, তালে তালে শ্রী কৃষ্ণের বিভিন্ন লাখো ভক্তের অংশগ্রহণে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নড়াইলের শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রম চত্ত্বর থেকে রবিবার বেলা ১টা থেকে শুরু হয় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাপূর্ব অনুষ্ঠানে শ্রী কৃষ্ণের জয়গানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। পুরুষদের পাশপাশি ব্যানার, ফেস্টুন, পতাকা হাতে অংশ নেন বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশুরা। তারা উলুধ্বনি এবং শুভ শুভ দিন শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিন স্লোগান দেন। শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। রবিবার (২ সেপ্টেম্বর) জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে র‌্যালি ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রম থেকে র‌্যালিটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নড়াইল কেন্দ্রীয় টাউন কালীবাড়ি এসে শেষ হয়। জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অশোক কুমার কুন্ডুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোঃ এমদাদুল হক চৌধুরী। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, নড়াইল পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম, নড়াইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, নড়াইল পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর হোসেন বিশ্বাস, সময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, পিপিএম, সহকারি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ মেহেদী হাসান, সহকারি পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার্স) মোঃ জালাল উদ্দিন, সহকারি পুলিশ সুপার (প্র.বি.) মোঃ ইশতিয়াক আহম্মেদ, নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন। নড়াইল জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান; প্রমুখ। গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়, সাধারণ সম্পাদক মোঃ হিমেল মোল্যা, গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন নড়াইল, বিডি খবর’র সম্পাদক ও প্রকাসক লিটন,দত, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার মোল্যা (বাগডাঙ্গা), বুলু দাস, মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সকল সদস্যবৃন্দসহ, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতা পাঠ, আলোচনা সভা, বিশেষ প্রার্থনা ও শ্রী কৃষ্ণ পূজা। সনাতন ধর্মালম্বনে জানা যায়, শ্রী কৃষ্ণের শুভ আর্বিভাব তিথি জন্মষ্টমী ২৫ শে আগষ্ট বৃহস্পতিবার, শ্রী কৃষ্ণ ৩২২৮ খ্রিস্টপূর্বে দ্রাপর যুগে কংশের কারাগারে জন্মগ্রহণ করেন। তাহার বাবার নাম বসুদেব মায়ের নাম দেবকী। প্রায় ৫০০০ বছর পূর্ব থেকে সনাতন ধর্মের লোকেরা শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী আসছে, শ্রীকৃষ্ণের সন্তুষ্টি ও পরকালের শান্তির জন্য। জন্মাষ্টমী, পরমাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ আবির্ভাব তিথি। বিশ্বব্যাপি সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীগণের কাছে এই তিথির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরীসীম। চাওয়া না পাওয়ার কষ্ট, প্রভুত্ববাদ আর অন্যের উপর খবরদারিত্ব করার অপচেষ্টা দিন দিন কলুষিত হচ্ছে মানব সমাজ। বিরূপ পরিবেশে কলুষিত হচ্ছে মন, বিকৃত হচ্ছে মানসিকতা। জগতের কলুষিত বন্ধন যখন জীব সত্ত্বাকে বিপদগামী করে তখন পৃথিবীব্যাপি ছেয়ে যায় অনাচার আর পাপকর্মে। ন্যয় আর সত্য তখন ঢাকা পড়ে যায় পাপের ছাঁয়ায়। সাধু-সন্ন্যাসীদের ঐশ্বরিক শক্তিও তখন হার মেনে যায় অপশক্তির কুটচালে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন সময় এসেছে অনেকবার। যুগে যুগে এমন কালেও মানব সভ্যতা রক্ষায় ¯্রষ্টা কর্তৃক প্রেরিত শক্তি বিভিন্নরূপে আবির্ভুত হয়েছে পৃথিবীতে, অপশক্তিকে ধ্বংস করে ন্যায় এবং সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য, শান্তি আর সত্যের বাণী প্রচারের লক্ষ্যে। ন্যায়ের পক্ষে ভগবান ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে জীবকে শিক্ষার জন্য কর্ম করেছেন অনেক। শিক্ষা দিয়ে গেছেন ভবিষ্যতেও সত্য এবং আলোর পথে চলার দিক নির্দেশনা। সনাতন ধর্ম এ আবির্ভাবে প্রক্রিয়া নিয়ে রয়েছে নানা মত। শাস্ত্রী মতে যুগে যুগে পথভ্রষ্ট ও বিপদগামী মানুষকে সৎ ও আলোর পথে ফিরিয়ে আনার জন্য এবং অপশক্তিকে ধ্বংস এবং সৎজনকে রক্ষা করে। সত্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভগবান বিভিন্ন রূপে এই পৃথিবীতে আবির্ভুত হন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই আবির্ভাবের জন্যই তিনি মহা অবতার বলে পরিচিত হন। সনাতন ধর্মের শাস্ত্রে বর্ণিত চারটি যুগের মধ্যে সত্য ও ত্রেতা যুগে যুগের মত দ্বাপর যুগেও ভগবান পৃথিবীতে অবতরণ করেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ লোকশিক্ষার জন্য অর্জুনের মাধ্যমে মূলত মানব সমাজকে শিক্ষা দিয়েছেন। জীব হিসেবে আমরা অনুচেতনার অধিকারী হলেও কলুষিত পরিবেশে নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলেছি। ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া, ভোগ-বিলাস, জাগতিক মোহ, যশ আর খ্যাতি ও অর্থ বিত্তের লোভে মায়াচ্ছন্ন হয়ে আমরা ভুলে যাই সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে আমাদের করণীয় বিষয়গুলো। অন্যায়, অসত্য ও পাপের দ্বারা পরিচালিত ও প্ররোচিত হয়ে জ্ঞান শূন্যতার অহমিকায় ভুগছি আমরা। আত্ম অহংকার ভূলে যাচ্ছি সৃষ্টিকর্তা অধিনতাকে। পার্থিব সুখে ভুলে যাই মহা অবতার ভগবানের সঙ্গে আমাদেও চিন্ময় সম্পর্ককে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের মাধ্যমে পবিত্র শ্রীমদ ভগবত গীতায় যে জ্ঞান দান করেছেন তাও যদি আমরা গ্রহণ করতে সক্ষম হতাম এবং যথাযথ ভাবে পালন করতাম তবে কোন প্রকার অন্যায় ও অসত্য এবং অসৎ পন্থা আমাদের ঈশ্বর চেতনাকে স্পর্শ করতে পারত না। মহা অবতার পরম চেতনার অধিকারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখানিঃসৃত গীতার জ্ঞান যুগ যুগ ধরে মানব জীবনের পথ চলায় আলোক বর্তিকা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এই জ্ঞানের আলোকিত জগতে নেই কোন শঠতা, অন্যায় আর অসত্যের স্থান, ঠাঁই নেই কোন অপশক্তির। বরং প্রতিনিয়ত সব রকমের ভীরুতা দূর করে অন্যায়কে প্রতিহত করার শিক্ষা পবিত্র গীতা আমাদেরকে দান করেছেন। পাপাচারে আচ্ছন্ন পরিবেশের বহিঃশক্তি ও অন্তঃশত্রুর হাত থেকে জীব সত্তাকে রক্ষা করে ভগবানের আনন্দ বিধানের জন্য করণীয় সম্পর্কে জ্ঞান ও উপদেশ এ গীতার মাধ্যমেই আমরা পেতে পারি। আমাদের বিপদাগ্রস্থ বিশ্বের বিপদগামী মানুষকে আলোর পথে, সততার পথে ফিরিয়ে আনা ও বিশ্বব্যাপী বিরাজমান অশান্তি নিরসনে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে, হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হোক এক পৃথিবী ও আলোকিত মানব সমাজ গঠনে শ্রীমদ ভগবত গীতা হোক আমাদের পথ নির্দেশক। মহা অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংস বধের নামে যেভাবে আবির্ভুত হয়েছিলেন পৃথিবীতে তেমনি ভাবে অন্যায় আর অসত্যের বিরুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুগ যুগ তার স্পর্শে পূর্ণতা পাক ভক্তের হৃদয়। পৃথিবী হোক শোষণমুক্ত, শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে পড়ুক পৃথিবীময়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মদিনের এই পুণ্য তিথীতে এই হোক সবার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here