নড়াইলে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য গাছিদের খেজুরের রস সংগ্রহ করার ধুম

0
1174

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
নড়াইলে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য গাছিদের খেজুরের রস সংগ্রহ করার ধুম। গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে পায়ে হাটলেই রাস্তার দু’পাশে অভ্যর্থনার জন্য দাড়িয়ে থাকা খেজুর গাছ চোখে পড়ার মতো। বিকেল হলে গাছিদের খুটখাট-কুটকাট শব্দে মুখরিত হয় গ্রামা । গাছিরা রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছের মাথার নরম স্থানে পাতলা দাও (যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় গাছকাটা দাও) দিয়ে হাল্কা আস্তরণ তুলে উপযোগী করেন। গ্রামা ঘুরে এ চিত্র প্রতিবেদকের চোখে পড়ে। স্থানীয় ইউপি সদস্য জানান, নামকরণটি সঠিকভাবে জানা নেই। তবে এ গ্রামের মধ্যে প্রচুর নারিকেল গাছ রয়েছে। সেই সাথে কমতি নেই খেজুর গাছেরও। প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস। শীতের শুরুতেই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সর্বত্রই এখন খেজুরের রস আহরণে ব্যস্ত গাছিরা। মৌসুমের শুরুতেই খেজুর রসের মৌ মৌ গন্ধ শীতের বাতাসে সুরভি ছড়ায়। আর প্রতিযোগিতা লাগে গাছিদের খেজুর গাছ ঝাড়া কাঁটার। গ্রাম বাংলার গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুর গাছ। অনেকে শখের বশে এই গাছকে বলে থাকেন মধুবৃক্ষ। গত কয়েক বছর ধরে ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ ব্যবহার হওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর গাছ। তাই  খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বেশকিছু খেজুর গাছ রোপণ করা হয়েছে। ওই সময়ে জেলার মানুষ এর সুফল পাবার পূর্বেই ইটভাটার কারণে নিধন হতে চলছে সরকারী ও ব্যক্তি পর্যায়ের খেজুর গাছ। অতীতে কখনো এভাবে খেজুরের চারা রোপণ করা হয়নি। নড়াইলের আবহাওয়ার সাথে মানানসই খেজুর গাছ এমনিতেই জন্ম নেয়। বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় খেজুরের বাগান। এখন শীতকাল, তাই অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা খেজুর গাছের কদর বেড়ে উঠেছে। কারণ এই গাছ এখন দিচ্ছে গাঢ় মিষ্টি রস। আর এ রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। খেজুরের গুড় থেকে এক সময় বাদামি চিনিও তৈরি করা হতো। যার স্বাদ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্বাদের তৃপ্তিতে বাদামি চিনির জুড়ি নেই। এখন অবশ্যই সেই চিনির কথা নতুন প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্পের মতো মনে হয়। খেজুর গাছের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যত বেশি শীত পড়বে ততো বেশি মিষ্টি রস দেবে। পুরো মৌসুম জুড়ে চলবে রস, গুড়, পিঠা-পুলি, পায়েস খাওয়ার পালা। আর কিছুদিন পর নতুন গুড়ের মিষ্টি গন্ধে ধীরে ধীরে আমোদিত হয়ে উঠবে গ্রাম-বাংলা। দিন শেষে গ্রামীণ সন্ধ্যাকালীন পরিবেশটা বড়ই আনন্দের। খেজুর রসের কারণে গ্রামীণ পরিবেশটা মধুর হয়ে ওঠে। মন ভরে যায় সন্ধ্যার খেজুরের রসে। এখন চলছে রস সংগ্রহ করার কার্যক্রম। আর কিছুদিন পর পুরোদমে শুরু হবে খেজুর রস খাওয়ার ধুম। যারা খেজুর রসের পাগল তারা শহর থেকে দলে দলে ছুটে যান গ্রামে। এ সময় খেজুর গাছ থেকে রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণ চাঞ্চল্য বাড়বে। যদিও আগের মতো সেই রমরমা অবস্থা আর নেই। দেশের বিভিন্ন স্থানে কমবেশি খেজুর গাছ এখনও রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে খেজুর গাছ লাগানো হলে শুধু মৌসুমের উপাদেয় রস-গুড় নয়, দেশীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে এই গাছ। সরকারি উদ্যোগে বেশি করে খেজুর গাছ লাগানোর পাশাপাশি যশোরের খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য বন বিভাগের গবেষণার প্রয়োজন। জেলার চল্লিশটি গাছ তুলেছেন। তিনি গাছে নলি মেরে রস উত্পাদন শুরু করেছেন।’সদর উপজেলার কৃষক জানান, খেজুর গাছ তোলার পাশাপাশি ভাঁড় ও জ্বালানি সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। গাছিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। খেজুর গাছ আছে। এসব গাছ থেকে মৌসুমে অনেক পরিমাণ গুড় উত্পাদিত হয়। খেজুরের গুড় ও পাটালির প্রবাসীদের কাছে ব্যাপক চাহিদা আছে।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here