নড়াইলে ইউপি চেয়ারম্যান হত্যার ঘটনায় পরিবারসহ পুরো এলাকা জুড়ে চলছে শোকের মাতম

0
472

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: চেয়ারম্যানের জন্মস্থান কুমড়ি গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। পক্ষে বিপক্ষে একাধিক ঘুনের ঘটনাও ঘটেছে। দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরেও এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। নড়াইলের পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান পলাশের হত্যাকারীদের সনাক্ত করে যতদ্রুত সম্ভব আইনের আওতায় আনা হবে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক লতিফুর রহমান পলাশকে (৪৮) দিনে দুপুরে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পরিবারসহ পুরো এলাকা জুড়ে চলছে শোকের মাতম। প্রতিপক্ষের স্বার্থান্বেষীরা নির্মম এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। শুক্রবার নড়াইল সদর হাসপাতাল মর্গে নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে। নিহতের ভাই শেখ মুক্ত রহমান জানান, তার ভাইকে এর আগেও কয়েকবার হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে এলাকার প্রতিপক্ষগ্রুপের কয়েকজন স্বার্থান্বেষী। পলাশকে বার বার সতর্ক করা হয়েছে এবং পুলিশ প্রশাসনকেও অবগত করা হয়েছে। কিন্তু শেষ রেহাই পেল না। তার ভাইয়ের জনপ্রিয়তার কারণেই এভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের ভাই জেলা পরিষদের সদস্য সাইফুর রহমান হিলু জানান, তার ভাই বিগত সময়েও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। যার কারণে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন। এরপর থেকে তাকে হত্যার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে প্রতিপক্ষরা। এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের নিজ গ্রাম দিঘলিয়া ইউনিয়নের কুমড়িসহ পুরো ইউনিয়ন জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। লোহাগড়া উপজেলা শহরেও দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রতিবাদে দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগ শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে। জানা গেছে, চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান পলাশ বৃহস্পতিবার সকালে নিজ বাড়ি দিঘলিয়া থেকে হাটবাজার ইজারা সংক্রান্ত কমিটির সভাসহ কয়েকটি সভায় অংশগ্রহণের জন্য উপজেলা পরিষদে যান। প্রথমে হাটবাজার-বালুমহল ইজারা সংক্রান্ত কমিটির সভা শেষে চা নাস্তা শেষ করে তিনি ব্যক্তিগত কাজে ব্যাংকে যাচ্ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন দিঘলিয়া ইউপি সদস্য বুলু কাজী। উপজেলা পরিষদের ভবন থেকে ২০০ গজ দূরে উপজেলা নির্বাচন অফিস ও সেটেলমেন্ট অফিসের মাঝখানের মোড়ে পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থলে এসে চেয়ারম্যানকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় চেয়ারম্যান মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা আরো গুলি ছোড়ে এবং বেপরোয়াভাবে কুপিয়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় চেয়ারম্যানের সাথে থাকা ইউপি সদস্য বুলু কাজী প্রানভয়ে পালিয়ে গিয়ে চিৎসকার করতে থাকে। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় চেয়ারম্যান পলাশকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চেয়ারম্যান পলাশের মাথাসহ শরীরে তিনটি গুলিবিদ্ধ হয় এবং মুখমণ্ডল সহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে একাধিক কোপের চিহ্ন রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অল্প সময়ের মধ্যে তার মৃত্যু হয়েছে। নড়াইলের পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান পলাশের হত্যাকারীদের সনাক্ত করে যতদ্রুত সম্ভব আইনের আওতায় আনা হবে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত চেয়ারম্যান পলাশের গ্রামের বাড়ি দিঘলিয়া ইউনিয়নের কুমড়ি গ্রামে। পিতার নাম গোলাম রসুল শেখ। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে লতিফুর রহমান পলাশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন মাসুদুজ্জামান। এর আগেও একবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান হিসেবে তার যথেষ্ট জন প্রিয়তা রয়েছে। নিহত চেয়ারম্যানের জন্মস্থান কুমড়ি গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। পক্ষে বিপক্ষে একাধিক খুুনের ঘটনাও ঘটেছে। দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরেও এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। এদিকে চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান পলাশকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় এবং খুনীদের আটকের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক কাজী বনি আমীনসহ অন্যান্য ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃন্দ।।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here