নড়াইলের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স :৭ কোটি টাকার ভবন তালাবদ্ধ, টেকনিশিয়ান না থাকায় মূল্যবান যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাচ্ছে না

0
319

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■: নড়াইলের উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও লোকবল নিয়োগের অনুমোদন মেলেনি।
ফলে চার বছর ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে ৭ কোটি টাকায় নির্মিত নতুন তিনতলা ভবন।
অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে  চিকিত্সা সরঞ্জাম। এছাড়া হাসপাতালটিতে
চিকিত্সক সংকটও চলছে দীর্ঘদিন ধরে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করতে ৭ কোটি ১৭ লাখ ৩৪১ টাকা
ব্যয়ে নতুন তিনতলা ভবন ও কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। নতুন ভবনে রয়েছে ১৪ শয্যার
একটি ওয়ার্ড, পাঁচটি কেবিন, একটি মিলনায়তন, তিনটি অপারেশন থিয়েটার,
একটি পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড ও দুটি নরমাল ডেলিভারি ওয়ার্ড। ৫০ শয্যার জন্য নতুন
এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনসহ প্রয়োজনীয় চিকিত্সা সরঞ্জামও রয়েছে।
ভবনটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। কিন্তু জনবল কাঠামো
অনুমোদন না হওয়ায় নতুন ভবন ও উপকরণ কোনো কাজেই আসছে না। বরং দীর্ঘদিন
অব্যবহৃত থাকায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
চিকিত্সক সংকটও চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ৫০ শয্যার জনবল কাঠামো অনুযায়ী নয়জন
বিশেষজ্ঞসহ ২১ জন চিকিত্সক নিয়োগ করার কথা। কিন্তু সেটির অনুমোদন হয়নি।
বর্তমান ৩১ শয্যার জন্য নয়জন চিকিত্সকের পদ আছে। এর মধ্যে কর্মরত একমাত্র
চিকিত্সক ফাতেমা মাহজাবিন। রোগী সামাল দিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারজন
এমবিবিএস চিকিত্সককে আনা হয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল
অফিসারের (আরএমও) পদও শূন্য। এ দায়িত্ব পালন করছেন লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের
চিকিত্সক আবুল হাসনাত। এছাড়া নোয়াগ্রাম, লোহাগড়া ও জয়পুর ইউনিয়ন
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিত্সক লাইলা সুলতানা, মোহাইমিন জিসান ও দেবাশীষ বিশ্বাস
নিজ কর্মস্থল রেখে এ হাসপাতালে কাজ করছেন। হাসপাতালের রেকর্ড বুক অনুযায়ী,
বহির্বিভাগে প্রতিদিন আড়াইশ থেকে তিনশ রোগী আসে, ভর্তি থাকে ৭০-৭৫ জন
রোগী। ফলে ভর্তি রোগীদের বেশির ভাগই থাকে মেঝে ও বারান্দায়। সম্প্রতি হাসপাতালে
গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে রোগীর দীর্ঘ সারি। ভর্তি রোগীরা মেঝে ও বারান্দায়
গাদাগাদি করে আছেন। সিঙ্গা গ্রামের চামেলি খাতুন (৩০) বলেন, বেড না পেয়ে
এতটুকু বাচ্চা নিয়ে মেঝেতে আছি। খুব সমস্যা হচ্ছে। টেকনিশিয়ান না থাকায়
চিকিত্সা সরঞ্জামও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে একটি
অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন এলেও আজো সেটি চালু হয়নি। প্রায় চার বছর ধরে পড়ে
আছে আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি মেশিন। সার্জন ও অ্যানেস্থেসিস্টের অভাবে বন্ধ
রয়েছে অস্ত্রোপচার। বিনামূল্যের ওষুধ সরবরাহ খুবই অপ্রতুল, রয়েছে খাওয়ার পানির সংকট।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বাস্থ্য-বিষয়ক স্থায়ী কমিটির
সভাপতি বিএম কামাল হোসেন, আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে বলেন,
উপজেলায় প্রায় তিন লাখ জনসংখ্যার চিকিত্সার ভরসা এ হাসপাতাল। অথচ
চিকিত্সক ও জনবলের অভাবে সেবাবঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। হাসপাতালে আরএমওর দায়িত্বে
থাকা ডা. আবুল হাসনাত আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, ৫০ শয্যার
জনবলের জন্য  দপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। নড়াইল
জেলার মধ্যে সবচেয়ে কম জনবল এ হাসপাতালে।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here