নতুন বলে বল করার বোলার নেই

0
508

খবর ৭১ঃ প্রথম ম্যাচের আগের দিন স্টিভ রোডসকে প্রশ্নটি করেছিলেন এক দক্ষিণ আফ্রিকান সাংবাদিক- আপনাদের দলের শুরুতে উইকেট নেওয়ার মতো বোলার কে? কৌশলগত কারণে উত্তরটি হেসে এড়িয়ে গিয়েছিলেন টাইগার কোচ। নিউজিল্যান্ড ম্যাচের পরও এক ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল মাশরাফির কাছে- আপনারা বোলিংয়ের শুরুতে বেশি রক্ষণাত্মক হয়ে যাচ্ছেন কি? সেটাও একটা কৌশল বলে চালিয়ে দিয়েছিলেন মাশরাফি। ইংল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচের আগেও ব্রিটিশ সাংবাদিকদের একই ধরনের তীর ছিল- কালও কি আপনারা স্পিন দিয়েই শুরু করবেন? দলে যে একশ’ চল্লিশ গতির বোলার নেই, হাতে লেগস্পিনার নেই, ডেথ ওভারে স্পেশালিস্ট নেই- স্বদেশি সাংবাদিকরা এসব জানেন। তাই ক্যামেরার সামনে মাশরাফিকে এ নিয়ে অপ্রস্তুত করা হয় না।

গেল ক’বছর তো এভাবেই চলছে, তা চলছে যখন চলুক না! এমন একটা ভাবনা টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যেও। ঘরের মাঠে স্লো আর লো উইকেট বানিয়ে তিন স্পিনারের সঙ্গে এক পেসার, কখনও চার স্পিনারও খেলিয়ে বাজিমাত হয়েছে। কিন্তু ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ খেলতে এসে দলের বোলিংয়ের ভোঁতা ধার নিয়ে ঠিক এগোচ্ছে না। শুরুতেই প্রতিপক্ষের ওপর চেপে বসার মতো বোলিংটা ঠিক হচ্ছে না। গত পাঁচ ম্যাচে মাশরাফি বোলিং ওপেনের জুটি নিয়েছিলেন ভিন্ন ভিন্ন।

শুরুতেই উইকেট ফেলার চেয়ে রান আটকানোর ব্যাপারে বেশি কৌশলী হচ্ছেন বোলাররাও। ব্যাটসম্যানকে কাট শট খেলার সুযোগ দিচ্ছেন বেশি। দেশের মাটিতে এ ধরনের শট খেলতে গিয়ে এশিয়ার বাইরের দলগুলো ভুল করে বেশি; কিন্তু ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে সেটা হচ্ছে না। তা ছাড়া বলের লেন্থেও আক্রমণাত্মক না থেকে সাবধানী হচ্ছেন বোলাররা। যে কারণে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং জুটি ভাঙতে সৌম্যর মতো কোনো অপশনাল বোলারকে ডাকতে হচ্ছে।

আসলে নতুন বলে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করার মতো নির্দিষ্ট কাউকেই খুঁজে পাচ্ছেন না মাশরাফি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি মুস্তাফিজ আর মিরাজকে দিয়ে শুরু করিয়েছিলেন, নিউজিল্যান্ডে মিরাজের সঙ্গে নিজে বল তুলে নিয়েছিলেন, ইংল্যান্ডের সঙ্গে সাকিবকে সঙ্গী নিয়েছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজে সাইফউদ্দিনকে এনেছিলেন তার জুটি বানিয়ে আর সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আবার সেই মুস্তাফিজ-মাশরাফি জুটি। মাশরাফি তাদের ১২৭ থেকে ১৩২ গতির মধ্যে সুইংটা আদায় করার চেষ্টা করে থাকেন। মুস্তাফিজ ক্যারিয়ারের শুরুতে নতুন বলে সফলতা পেলেও এখন তিনি ডেথ ওভারের বোলার।

মিরাজ ও সাকিবকে নতুন বল দেওয়া হয় তখন যখন উপমহাদেশের বাইরের দলগুলোর ওপেনারদের কেউ কেউ স্পিনে অস্বস্তিতে পড়েন। যেটা বিশ্বকাপে ঠিক কাজে দিচ্ছে না। কিন্তু পেসারদের মধ্যে মাশরাফি, মুস্তাফিজ, সাইফউদ্দিন আর রুবেল হোসেনের মধ্যে কাউকে নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না নতুন বলে পরের ম্যাচে কে করবেন। এমনকি সাকিবকে নিয়েও ধূম্রজাল আছে। দেশের মাটিতে তিনিই দলের প্রধান আক্রমণাত্মক বোলার; কিন্তু বিশ্বকাপে তাকে ব্যবহার করতে হচ্ছে অন্যরা বেশি রান দিয়ে ফেললে মাঝের ওভারগুলোতে। অন্যান্য দল যেখানে তাদের বোলিং ইউনিট নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা এবং আত্মবিশ্বাসী রয়েছে, সেখানে টাইগারদের মধ্যে এ জায়গাটিতেই দুর্বলতা ধরা পড়ছে।

যে দলের ব্যাটসম্যানরা বিশ্বকাপের পাঁচ ইনিংসের মধ্যে চারটিতেই তিন শতাধিক রান তুলতে পারে। যে দল আঠারো দিনের ব্যবধানে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস টপকে যেতে পারে। সে দলের বোলিংটা যদি আরও একটু গোছানো হতো। তামিম-সৌম্যর মতোই যদি বোলিংয়েও অমন কোনো জুটি থাকত, তাহলে হয়তো এ দলটিকেই আরও চকচকে মনে হতো।

কোনো বিশেষজ্ঞ নন, নটিংহাম গ্যালারির পেছন থেকে ভেসে আসা দুই বাংলাদেশি দর্শকের আলাপচারিতার কানে ভেসে আসা আক্ষেপের টুকরো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here