খবর৭১ঃমিয়ানমারের আদালতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের কারাদণ্ডের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন দেশটির বেসামরিক নেত্রী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গণহত্যার খবর প্রকাশ করায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) ও কিয়াও সো ওকে (২৮)। সু চি বলেন, ওই দুই সাংবাদিক তাদের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। তাদের এ কারাদণ্ডের সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কোনো সম্পর্ক নেই।
বৃহস্পতিবার ভিয়েতনামের হ্যানয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো নিয়ে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) এক সম্মেলনে সু চি এসব কথা বলেন। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
দুই সাংবাদিককে কারাগারে পাঠানো নিয়ে একজন গণতান্ত্রিক নেত্রী হিসেবে আপনার অনুভূতি কি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা সাংবাদিক বলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়নি। তাদের সাজা দেয়া হয়েছে। কারণ আদালত মনে করেছেন, তারা রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার নীতি লঙ্ঘন করেছেন।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ মানুষ ওই রায়ের সারসংক্ষেপ পড়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে, এর (রায়) সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের। আমরা যদি আইনের শাসনে বিশ্বাস করি, তা হলে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও এই বিচার কেন ভুল হয়েছে তা তুলে ধরার পুরো সুযোগ আছে তাদের।
চলতি মাসের শুরুতে মিয়ানমারের আদালত রয়টার্সের সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সো ওকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আন্তর্জাতিক মহল দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দেয়া এ রায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।
বিশ্বজুড়ে রয়টার্সের এ দুই সাংবাদিককে মুক্তি দেয়ার দাবি ওঠে। রোহিঙ্গা গ্রামে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতা নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে তা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন এ দুই সাংবাদিক।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও ওই দুই সাংবাদিককে ছেড়ে দিতে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সাংবাদিকদের মু্ক্তির বিষয়ে পেন্সের আহ্বানের বিষয়ে জানতে চাইলে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এ নেত্রী বলেন, সমালোচকরা কি এখানে আইনের কোনো ধরনের অপপ্রয়োগ খুঁজে পেয়েছেন?
তিনি বলেন, উন্মুক্ত আদালতে মামলাটি চলেছে। যারা যেতে চেয়েছে ও উপস্থিত হতে চেয়েছে, তাদের সবার জন্য শুনানিও উন্মুক্ত ছিল। কারো যদি মনে হয়, সেখানে আইনের অপপ্রয়োগ হয়েছে, তা হলে তাদের তা দেখিয়ে দিতে বলব আমি।
হ্যানয়ের ওই আয়োজনেই বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের এ নোবেল বিজয়ী নেত্রী বলেছিলেন, তার সরকার রাখাইনের পরিস্থিতিকে হয়তো আরও ভালোভাবে সামাল দিতে পারত।
রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখ হওয়া রায় নিয়ে মিয়ানমারের জনগণের মধ্যেও স্পষ্ট বিভক্তি লক্ষ্য করা গেছে।
সু চির একসময়ের ঘনিষ্ঠ, মিয়ানমারের খ্যাতনামা রাজনৈতিক বন্দি প্রয়াত উইন তিনের প্রতিষ্ঠিত একটি ফাউন্ডেশন বুধবার ওয়া লোন ও কিয়াও সো ওকে পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দুই সাংবাদিকের শাস্তির বিরোধিতা করে তাদের দ্রুত মুক্তি দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
খবর৭১/ইঃ