দুই ও আড়াই বছরের শিশু ১ম ও ২য় শ্রেনীর ছাত্র অভিভাবক ভোটার !

0
406

চৌগাছা (যশোর) সংবাদদাতা : যশোরের চৌগাছায় একটি মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে নানা অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভোটার তালিকা প্রনায়ন, মনোনয়ন ফরম বিক্রি সহ কমিটি গঠনের সব কিছুতে দলবাজি করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনিয়েমের বিষয়টি নিয়ে সাবেক সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এলাকাবাসি ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পকেট কমিটি গঠন না করে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনে সংশ্লিষ্ঠদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সূত্র জানায়, উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা পীর বলুহ দেওয়ান দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে নোংরা রাজনীতি শুরু করেছেন ওই গ্রামের ক্ষমতাসীন দলের কমিপয় নেতা। তাদের স্বার্থ হাসিলে মাদ্রাসা সুপার মাওঃ সিরাজুল ইসলামকে ব্যবহার করে অপ্রাপ্ত বয়সের ছেলে মেয়েদের মাদ্রাসায় ভর্তি দেখিয়ে ওই অভিভাবককে ভোটার বানানো হয়েছে। শুধু তাই না অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে মাদ্রাসার নিয়মিত শিক্ষার্থী দেখিয়ে তাদের অভিভাবককে বাননো হয়েছে ভোটার। অজপাড়া গায়ে প্রতিষ্ঠিত এই মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি গঠনে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়েছে ৭ হাজার টাকায়। এরমধ্যে মনোনয়ন ফরম বাবদ ৫ হাজার, ভোটার তালিকা বাবদ ১ হাজার ও স্থানীয় মসজিদের জন্য ১ হাজার টাকা করে গ্রহন করা হয়েছে। মনোনয়ন বাবদ বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার কারনে ইচ্ছা থাকা সত্বেও অনেক অস্বচ্ছল অভিভাবক মনোনয়ন ক্রয় করতে পারেনি। ফলে এ সকল অভিভাবকের মধ্যে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ। সূত্র জানায়, হাজরাখানা গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম মিলন ও তার ভাই মালায়েশিয়া প্রবাসী কামরুজ্জামান শিমুল গ্রামটিতে নোংরা রাজনীতি শুরু করেছেন। তারা উপজেলা আওয়ামীলীগের এক গ্রুপের ছত্রছায়ায় থেকে নানা অনিয়ম দুর্নীতি করছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি হাজরাখানা গ্রামের পীর বলুহ দেওয়ান দাখিল মাদ্রসার ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে তারা শুরু করেন নোংরা রাজনীতি। ওই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী সাবেক মেম্বর হাজী রবিউল ইসলাম রবি। তিনি উক্ত মাদ্রাসায় জমি দান সহ নানা উন্নয়ন মুলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। গ্রামটির বর্তমান মেম্বর মনিরুল ইসলাম মিলনের ইচ্ছা জাগে তিনিও মাদ্রাসার সভাপতি হবেন। এ লক্ষে তার শিশু পুত্র ফাতরা জামান মেহেদী যার বয়স মাত্র ২৪ মাস, তাকে ২য় শ্রেনীতে ভর্তি করে মেম্বর মিলন হয়েছেন ভোটার। তার ভোটার নং-২৫৪। অনুুরুপ ভাবে তার প্রবাসী ভাই কামরুজ্জামান শিমুলের শিশু পুত্র আলিফ যার বয়স ৩০ মাস, তাকে ১ম শ্রেনীতে ভর্তি করে ওই অভিভাবকও হয়েছেন ভোটার। তার ভোটার নং ২৫৯। শুধু তাই না পাশ্ববর্তী চাঁদপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেনীর অন্তত ৮/১০ নিয়মিত ছাত্র ছাত্রীকে এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী দেখিয়ে ওই সকল অভিভাবকও ভোটার হয়েছেন। অনিয়মের মুল উদ্যেশ্য মেম্বর মিলন ভুয়া ভোটার তৈরী করে সভাপতি মনোনীত হবেন। বর্তমান সভাপতি ও মেম্বর মিলন একই গ্রুপের নেতা হওয়া সত্বেও এ ধরনের জঘন্য কাজ করায় সাবেক সভাপতির মধ্যে দেখা দেয় ক্ষোভ। বিষয়টি মিলন মেম্বর বুঝতে পেরে সভাপতি হওয়ার ইচ্ছা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষনা দেয়। এদিকে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ২৪ এপ্রিল মনোনয়ন ক্রয়ের শেষ দিন ছিল। মাত্র ৫ জন অভিভাবক এই মনোনয়ন ফরম ৭ হাজার টাকা করে ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ক্রয় করেছেন। যারা মনোনয়ন ক্রয় করেছেন তারা সকলেই বর্তমান সভাপতি রবিউল ইসলাম এবং মেম্বর মিলনের অনুসারী বলে জানা গেছে। ফরমের দাম আকাশ ছোয়া হওয়ায় সাবেক সভাপতি আ’লীগের অপর গ্রুপের নেতা সোলাইমান হোসেনের অনুসারীরা ফরম ক্রয় থেকে বিরত থাকেন। নির্বাচনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় আগামী ৫ মে অনুষ্ঠিত ভোটে ফরম ক্রয়কৃত ৫ জন অভিভাবক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এই নির্বাচনে মেম্বর মিলনের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে বলে মনে করছেন অনেকে। এদিকে পকেট কমিটি গঠন বন্ধ করার জন্য গত ২৩ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন সাবেক সভাপতি সোলাইমান হোসেন। পাড়া গায়ের একটি মাদ্রাসার কমিটি গঠনে আওয়ামলীগের এই নোংরা রাজনীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন সচেতন অভিভাবক মহল। তারা যোগ্য ব্যক্তিকে ওই গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব অর্পনে সংশ্লিষ্ঠ সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন। এ বিষয়ে সাবেক সভাপতি সোলাইমান হোসেন বলেন, বহু বিতর্কিত ইউপি মেম্বর মনিরুল ইসলামের যোগসাজসে একটি পকেট কমিটি করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। যার কারনে গ্রামবাসির মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মনোনয়ন ফরম বাবদ ৭ হাজার টাকা গ্রহন করার নজির বাংলাদেশের কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে মনোনয়ন ফরমের দাম বাড়িয়ে সাধারণ অভিভাবকদের ভোট করা থেকে বঞ্চিত করেছেন। তদন্ত করে এই অনিয়মের বিচার দাবি করেন তিনি। মাদ্রসা সুপার মাওঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান কমিটির সভায় মনোনয়ন ফরম ৭ হাজার টাকায় বিক্রির বিষয়টি সিদ্ধান্ত হয়। এখানে আমার কিছু করার নেই। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। মেম্বর মনিরুল ইসলাম মিলন বলেন, আমাদের সন্তাদিদের কবে কখন ভর্তি করা হয়েছে তা আমার জানা নেই। সেখানে সভাপতি হওয়ার ইচ্ছাও আমার নেই। বর্তমান সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি জানান, আমি সভাপতি ছিলাম নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। এবার যদি অভিভাবক মহল আমাকে চাই, তাহলে আমি সভাপতি হতে ইচ্ছুক অন্যথায় না। মাদ্রাসাটি নিয়ে একটি মহল বরাবরই ষড়যন্ত্র করেছে এখনও তারা সোচ্চার আছে বলে তিনি জানান।
খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here