থাইল্যান্ডের গুহায় জীবন-মরণ অভিযানে উদ্ধারকর্মীরা

0
235

খবর ৭১ঃ থাইল্যান্ডের থাম লুয়াং গুহায় তৃতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযানে নেমেছেন উদ্ধারকর্মীরা। সেখানে এখনো আটকা পড়ে আছে ফুটবল টিমটির চার সদস্য ও কোচ। ১৯ সদস্যের একটি দল গঠন করে তাদের উদ্ধারের কাজে নেমেছে উদ্ধারকর্মীরা। উদ্ধার অভিযানের প্রধান নারংসাক অসোট্টানাকর্ন একথা জানিয়েছেন।

টানা দুই দিনে গুহা থেকে দুই দফায় চারজন করে আটজনকে বের করে এনেছেন উদ্ধারকর্মীরা। আজ মঙ্গলবার ‘ওয়াইল্ড বোরস’ ফুটবল টিমের বাকি সদস্য ও কোচকে উদ্ধারের অভিযানে নেমেছে তারা। উদ্ধার অভিযান শুরু হলেও, এই অভিযানে অবশিষ্ট সকলকে বের করে আনা সম্ভব কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি।

নারংসাক জানান, এটা নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। বৃষ্টি কমলে তারা দ্রুত কাজ করতে পারবে। অন্যথায় উদ্ধারকাজ কঠিন হয়ে পড়বে। উল্লেখ্য, ফুটবল টিমটি গত ২৩ জুন গুহায় আটকে পড়ে।

উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, একদিনে সর্বোচ্চ চারজনকে উদ্ধার করা নিরাপদ। সে হিসাবে আজ মঙ্গলবার যদি পাঁচজনকে উদ্ধার করা সম্ভব না হয়, তাহলে চার খুদে ফুটবলারকে উদ্ধার করা হবে। সেক্ষেত্রে ফুটবলারদের ২৫ বছর বয়সি কোচকে গুহায় রাতে একা থাকতে হতে পারে।

উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনাকারীদের প্রধান চিয়াং রাই প্রদেশের গভর্নর নারংসাক ওসোত্তানাকর্ণ ফুটবলারদের কোচের আরো একটি রাত গুহায় থাকার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেননি। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য, উদ্ধারের উপযুক্ত সংখ্যাটি হলো চার।’

এদিকে, উদ্ধার হওয়া আট খুদে ফুটবলারকে চিয়াং রাই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের সাথে এখনো তাদের বাবা-মা কিংবা স্বজনদের সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি।

কারণ হিসেবে নারংসাক ওসোত্তানাকর্ণ জানিয়েছেন, গুহার ভেতরে অন্ধকারে সাধারণত বাদুর কিংবা ইঁদুরের প্রাদুর্ভাব থাকে। গুহার ভেতরে ওই ১৩ জন নয় দিন কোনো খাবার না খেয়ে কেবল গুহার পানি খেয়ে জীবিত ছিল। বাদুরের লালা কিংবা ইঁদুরের প্রস্রাব ওই পানিতে কিংবা গুহার অন্যান্য স্থান থেকে তাদের শরীরে সংক্রামিত হতে পারে। তাই সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত না হয়ে তাদেরকে কারো সাথে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

ঠিক কোন আটজন কিশোর উদ্ধার হয়েছে, সেটিও জানানো হয়নি। এ বিষয়ে নারংসাক ওসোত্তানাকর্ণ জানান, কাদেরকে আগে উদ্ধার করা হয়েছে, কাদেরকে পরে উদ্ধার করা হবে, এ বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের স্বজনদের ভেতর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। তাই এ বিষয়টি এখনো গোপন রাখা হয়েছে। সবাইকে উদ্ধারের পর তাদের সংক্রমণ ও স্বাস্থ্যগত বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎকারের সুযোগ দেওয়া হবে।

আট কিশোরকে উদ্ধারের পর তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে গুহা থেকে সাথে সাথে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

গত ২৩ জুন দুপুরে ওই ফুটবল দলটি ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই গুহায় প্রবেশ করে। তবে সন্ধ্যায়ও ফিরে না আসলে তাদের খোঁজে অভিযান শুরু হয়। নিখোঁজ ১৩ জনের ওই খুদে ফুটবল দলে ১২ জন খেলোয়াড় ও একজন কোচ রয়েছে। ওই ফুটবলারদের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। আর কোচের বয়স ২৫ বছর।

২ জুলাই রাতে তাদেরকে খুঁজে পায় ব্রিটেনের দুইজনের ডুবুরি দল। তাদের জীবিত সন্ধান পাওয়ার খবরে থাইল্যান্ডজুড়ে বইছে আনন্দের বন্যা। তবে গুহার ভেতরে পানির উচ্চতা বাড়তে থাকায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। থাম লুয়াং গুহা উত্তর থাইল্যান্ডের একটি দুর্গম স্থান হিসেবে পরিচিত। বর্ষাকালে গুহার ভেতরে বন্যা হয়, যা সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

উদ্ধারকারীরা জানান, ওই কিশোরদেরকে কোথাও ডুবসাঁতার দিতে হবে, কোথাও হেঁটে পার হতে হবে। কারণ গুহার নিচে উদ্ধারে পথে অনেক জায়গা পুরোপুরি কর্দমাক্ত, কোথাও ১৬ ফুট পর্যন্ত পানি, কোথাও পুরোটাই পানিতে পূর্ণ, যেখানে এমনকি হেডলাইট দিয়েও কিছুই দেখা যায় না। এ ছাড়াও অনেক স্থান খুবই বিপজ্জনক। এর আগে খুদে ফুটবলারদের উদ্ধারে গুহার পানি কৃত্রিমভাবে সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন উদ্ধারকারীরা।

সামান গুনান (৩৮) নামের এক ডুবুরি ওই খুদে ফুটবলারদের উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। থাইল্যান্ডের নৌবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছিলেন এই ডুবুরি। খুদে ফুটবলারদের গুহায় আটকে পড়ার খবর শুনে তিনি উদ্ধারকাজে যোগ দিতে আসেন।

সামান গুনান গুহার ভেতরে আটকে থাকাদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের কাজ করছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে ফেরার পথে নিজের সিলিন্ডারের অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ায় দমবন্ধ হয়ে যায়। পরে তার সহকারী ডুবুরি তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। থাই রাজা তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খরচ বহন করবেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here