তাদের জন্য আমার করুণা হয়: প্রধানমন্ত্রী

0
258

খবর৭১ঃ মানুষ কিছু না পেলেও বিএনপি-জামায়াত জোটের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ কিছু না পেলেও বিএনপি-জামায়াত জোটের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। যাদের কথা শুনেছি, ভাঙা স্যুটকেস ছাড়া কিছুই নাই, তারা কত সম্পদের মালিক। সম্পদ শুধু দেশে নয়, দেশে আবার বিদেশে তাদের সম্পদের মালিকানার বিরাট হিসাব চলে আসছে। ঘুষ-দুর্নীতি করে তারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, লেখক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন প্রমুখ।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশে গত দশ বছরে ‘কল্পনাতীত স্বেচ্ছাচারিতার’ যে অভিযোগ করা হয়েছে তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দশ বছরে আমরা যে পরিবর্তনটা এনেছি, সেই পরিবর্তনটা অনেকের চোখে পড়ে না। যখন মানুষ ভালো থাকে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, তখন তারা বলে এটা নাকি স্বেচ্ছাচারিতা। স্বেচ্ছাচারিতা কী করে হল- এটা আমার প্রশ্ন। কী দেখতে পেল তারা?

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ পরিবর্তন কী জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বাংলা ভাই সৃষ্টি, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, আবার সন্ত্রাস, আবার ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা, আবার নির্বাচনের নামে প্রহসন, দেশের সমস্ত উন্নয়ন ধ্বংস করে দিয়ে দেশকে সম্পূর্ণভাবে আবার অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া? এই পরিবর্তন তারা আনতে চান? ছিল তো ক্ষমতায়। ৪৭ বছর তো দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই ৪৭ বছরের মধ্যে ৩৯ বছর তো এরা ক্ষমতায় ছিল। কী দিয়েছিল মানুষকে? কী পেয়েছে মানুষ?।

সরকারপ্রধান বলেন, আমদের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ যখন এনেছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক দুর্নীতি পায়নি। কানাডার ফেডারেল কোর্ট স্পষ্ট বলে দিয়েছিল, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সব অভিযোগ ভুয়া, বানোয়াট, মিথ্যা। বাংলাদেশের কোনো মানুষের মাথা হেঁট হোক- সেটা করি নাই কখনও। বরং বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে গেলে সম্মান, মর্যাদা পাচ্ছে, সেইটুকু করতে সক্ষম হয়েছি। তাহলে স্বেচ্ছাচারিতা কোথায়?

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকে যারা এক হয়েছে তারা কারা? একদিকে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, সে যুদ্ধাপরাধীরা কীভাবে নমিনেশন পায়, যারা বাংলাদেশই চায়নি। আমি আর কারো নাম নিতে চাই না। মনে হয়, যেন নামটাই নেওয়া উচিত না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার তাদের জন্য করুণা হয়, কারণ তারা দিকভ্রষ্ট। তাদের আর কোনো নীতি নাই। নীতিভ্রষ্ট, আদর্শহীনরা কখনও মানুষকে কিছু দিতে পারে নাই এবং দিতেও পারবে না। আমি বলব এরা বাংলাদেশের আদর্শে বিশ্বাস করে না।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কী দুর্ভাগ্য, যারা জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দেন, যুক্তি দেখান, বুদ্ধি দেন, বড় বড় কথা বলে, আদর্শের বুলি আওড়ায়- আজকে তাদের সব ধরনের উচ্চবাচ্য কোথায় হারিয়ে গিয়ে হাত মিলিয়েছে খুনিদের সাথে, দুর্নীতিবাজ অস্ত্র চোরাকারবারিদের সাথে। কীসের স্বার্থে কেন- এটাই প্রশ্ন।

আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, আর এই দুর্নীতিবাজদের সাথে, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারীতে যারা সাজাপ্রাপ্ত, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত, তাদের উদ্ধার করতে নেমেছে আমাদের কিছু জ্ঞানী-গুণী এবং স্বনামধন্য, যাকে আমরা বলি একবারে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী।

তিনি বলেন, তারা উদ্ধারকাজে নেমেছে কাদের? দুর্নীতিবাজ, খুনি, মামলার আসামী, সাজাপ্রাপ্ত এবং যুদ্ধাপরাধীদের। যে যুদ্ধাপরাধীদের আমারা বিচার করেছি, যারা সাজাপ্রাপ্ত তাদেরই ছেলেরা নমিনেশন পায় এদের হাত থেকে।

ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী কে হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐক্যফ্রন্ট হয়েছে। তারা নাকি সরকার গঠন করবে। তো সরকারের প্রধান কে হবে সেটা কিন্তু আজ পর্যন্ত জাতির সামনে দেখাতে পারে নাই।

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ১০ বছর আগে আমরা দিনবদলের সনদ দিয়েছিলাম। আজকে মানুষের ঠিকই দিন বদলেছে। আজকে যারা একেবারেই হতদরিদ্র ছিল তারাও দুমুঠো খেতে পারছে। যারা গৃহহারা তাদের ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। বিনা পয়সা ওষুধ, বই দিচ্ছি, বৃত্তি দিচ্ছি। উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। মানুষের ভেতর পরিবর্তন নিয়ে এসেছি। আমরা ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এর ফলে মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হবে। সুবর্ণজয়ন্তী যখন পালন করব তখন দারিদ্র্যমূক্ত বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ গড়ে তুলব। সে জন্য আরও পাঁচটি বছর সরকারে থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। সে জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাই। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেন কেউ কেড়ে নিতে না পারে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী, ‍খুনি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, দুর্নীতিবাজ, অস্ত্র চোরাকারবারি, সাজাপ্রাপ্ত খুনি আসামি এরা এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যচ্ছে। আর কেউ বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে পারবে না। আমি বিশ্বাস করি দেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেবে।

তিনি বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমার আস্থা আছে। বিশ্বাস আছে, বাংলাদেশের জনগণ কখনও ভুল করে না। তাদের সাংবিধানিক অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। সে সাহসও পাবে না। বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ভোট দেবে সেটা আমি বিশ্বাস করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্যের হার ২১ ভাগে নেমে এসেছে। আবার ক্ষমতায় এলে দারিদ্র্যের হার আরও ৫ থেকে ৬ শতাংশ কমিয়ে আনা হবে।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here