তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে: ফখরুল

0
249

খবর ৭১: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সরকারের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ গ্রেফতার হওয়া দলের নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিবে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সকল রাজনৈতিক দলের জন্য সমতল মাঠ প্রস্তুত করতে হবে। আর নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সেনা মোতায়েন করতে হবে। এ ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, জনগণ হতে দেবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজ আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সব রাজনৈতিক দল, সংগঠনকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জনগণের দাবি আদায় করতে হবে। অপশাসনকে পরাজিত করতে হবে। জাতিকে মুক্তি দিতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা সবাইকে আহ্বান জানাব, গণতন্ত্রকামী সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হোন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করুন। কারণ দেশনেত্রী কারাগারে যাওয়ার আগে বলে গেছেন এ সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে একটি জাতীয় ঐক্য গঠনের জন্য। তাই আসুন সবাই ভেদাভেদ ভুলে একটি জাতীয় ঐক্য গঠন করে এ দানবকে পরাজিত করি।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে একদলীয় বাকশাল থেকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে বিএনপি গঠন করেছেন জিয়াউর রহমান। যেভাবে ১৯৭১ সালে জাতির ক্রান্তিকালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, আজ আবার সেই গণতন্ত্র সংকটের মুখে আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসনের কারণে।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মহাসচিব বলেন, আমাদের আজ বুকে সাহস নিয়ে, বুকে বল নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আজকের জনসমুদ্র প্রমাণ করেছে আজ বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বুকের রক্ত দিতে হবে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, দেশকে মুক্ত করতে হবে। যারা দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছে, তাদের রক্ত ছুয়ে শপথ নিতে হবে আমরা দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করব, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব।

খালেদা জিয়াসহ কারাগারে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা বাতিল করতে হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

ফখরুল বলেন, তারেক রহমানকে নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাঁকে সাজা দিতে চাইছে। রায়ের আগে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিচ্ছেন, এ মামলায় তারেক রহমানের সাজা হবে। তাহলে কি আপনারা আগেই গণভবনে রায় লিখে রেখেছেন। মনে রাখবেন, কোনো ষড়যন্ত্রের রায় দেশের জণগন মেনে নিবে না।

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে তার দায় আপনাদের নিতে হবে। দেশের জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। আমাদের কথা পরিষ্কার, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতেই হবে।
ফখরুল বলেন- ‘আগে আওয়ামী লীগ দাবি করত তাদের সঙ্গে তরুণ সমাজ আছে। কিন্তু এখন এই তরুণ-যুবকরা চায় এই দুঃশাসনের পাথর যেন তাদের বুকের ওপর থেকে সরে যায়।’  তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। জনগণ এখন তাদের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে।’
নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা নেমেছিল। আপনারা দেখেছেন কীভাবে তাদের হেলমেট পরে নির্যাতন করা হয়েছে। রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।’
উসকানির অভিযোগে ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শহিদুল আলম আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন শিল্পী। তাকে গ্রেফতার করে মারতে মারতে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় আতঙ্কে থাকে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে এই যে বিএনপি আইলো, এই যে তারেক রহমান আইলো।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে সরকারের পরিকল্পনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের মধ্যে এখন বিএনপিভীতি কাজ করছে। এই ভীতি থেকে বাঁচার জন্য তারা ইভিএম নিয়ে আসছে।’

বিএনপি মহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্র এবং বাংলাদেশের সার্বোভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য সকলকে ঐক্য বদ্ধ হতে হবে।
এসময় আওয়ামী লীগ দেউলিয়া রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণ এখন তাদের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে।
সমাবেশ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সকল রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে হবে, সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। গণতন্ত্রকে মুক্তি দিতে হবে।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস-চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী, আলতাব হোসেন চৌধুরী, জয়নুল আবদিন, বেগম সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, তৈয়মুর আলম খন্দকার, ফরহাদ হালীম ডোনার, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মাসুদ আহমেদ তালুকদার, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবি এম মোশাররফ হোসেন, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান, সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম, আবু নাসের মোহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ, কামরুল ইসলাম সজল, মো: মতিন, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা: দেওয়ান মো: সালাউদ্দীন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সহ-সভাপতি নবী উল্লাহ নবী, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরীন খান, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্তাজুল করিম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর ও দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির সমাবেশে নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতি হওয়ায় নির্দিষ্ট এলাকায় সমাবেশ সীমাবদ্ধ ছিলনা। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সীমানা ছাড়িয়ে সমাবেশ ছড়িয়ে পড়েছে আশেপাশের এলাকায়। সেখানে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন উৎসবমুখর পরিবেশে। কেউ কেউ ব্যান্ড বাজিয়েছেন, দলীয় সঙ্গীত গেয়েছেন। আবার কোথাও কোথাও স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠেছে রাজপথ। সকাল থেকেই মিছিলে মিছিলে সমাবেশে স্থালে যোগ দিয়েছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। সমাবেশ শুরুর আগে দুপুর ১২টার মধ্যেই সমাবেশ স্থল কানায় কানায় ভরপুর হয়ে গেছে। ১২টার পর থেকে আশপাশের এলাকায় জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা।
বেলা আড়াইটার দিকে নয়াপল্টন ও তার আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কাকরাইল মোড় থেকে শান্তিনগর এলাকা, পুরানা পল্টন, ফকিরেরপুল মোড় থেকে মতিঝিল এলাকা, দৈনিক বাংলা মোড়, বিজয়নগর এলাকা, সেগুনবাগিচা এলাকা, রাজারবাগ এলাকাতেও নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি এই সমাবেশ করছে। এদিকে নেতাকর্মীদের চাপের কারণে আশেপাশের সব রাস্তায় আড়াইটার পর যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সমাবেশ ঘিরে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতেই এ ধরনের সতর্কতা বলে জানিয়েছে পুলিশ। দুপুর ২টা থেকে হঠাৎ করেই রাজধানীর পল্টন এলাকার মোড়ে মোড়ে পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। সেইসঙ্গে চোখে পড়েছে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যদেরও। তবে কোথায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here