ঝিমিয়ে পড়েছে ডাকসুর পুনঃনির্বাচনের আন্দোলন, অভিষেক শনিবার

0
464

খবর৭১ঃ দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। গত ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ‘অনিয়মের’ অভিযোগ তুলে ভোটবর্জন করে ছাত্রলীগ ব্যতীত বাকি সবগুলো প্যানেল।

‘অনিয়নমের’ অভিযোগ তোলা এ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায় ২টি পদ( ভিপি এবং সমাজসেবা) ছাড়া বাকি সব পদে জয় লাভ করে ছাত্রলীগ।

নির্বাচনের দিনভোট বর্জনের পর থেকেই ক্যাম্পাস জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করে প্যানেলগুলো। নির্বাচন বর্জনের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। টানা চলতে থাকে নির্বাচন বর্জনের কর্মসূচি। আমরণ অনশন, ক্লাস বর্জনসহ বেশকিছু কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনকারীরা।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনড় অবস্থা এবং অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের উপেক্ষা করাসহ পুনঃনির্বাচন সম্ভব নয় বলেই ইঙ্গিত দেয়। প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করায় আন্দোলনকারীরা পুরোই দমে গেছে বলে মনে করেন অনেক সমর্থক। অনেকে এটাকে দায়সারা আন্দোলন হিসেবে ও আখ্যায়িত করেছে।

অপরদিকে ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিতরা মনে করছেন এ আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন না থাকায় এটি ভেস্তে গেছে এবং পুনঃনির্বাচনের দাবিকে অনেকেই ‘অযৈাক্তিক ও হাস্যকর’ বলেও মনে করছেন।

ডাকসুর পুনঃনির্বাচনের দাবি একদিকে যেমন ঝিমিয়ে পড়েছে, অন্যদিকে চলছে ডাকসুর নবনির্বাচিতদের দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তুতি। শনিবার (২৩ মার্চ) দায়িত্ব বুঝে নিতে যাচ্ছেন ডাকসু নেতারা। ডাকসু ভবনে শনিবার হবে নবনির্বাচিত নেতাদের অভিষেক অনুষ্ঠান। দীর্ঘ ২৮ বছর পর তাই ডাকসু ভবনে সাজ সাজ রব।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক, নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর পুনঃনির্বাচনের স্বার্থেই দায়িত্ব নেয়ার কথা বললেও অনেক শিক্ষার্থী মনে করছেন পুনঃনির্বাচনের আন্দোলন ঝিমিয়ে গেছে। অনেকেই আবার মনে করছেন ডাকসুর নবনির্বাচিত নেতারা দায়িত্ব নেয়ার পর এটিকে পুনর্জাগরণ করা আর সম্ভব নয়।

এদিকে নুরের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে তাদের প্যানেলগত আন্দোলনের গতি কমে যাবে বলে মনে করছেন মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী। তিনি বলেন, ‘নুর শিক্ষার্থীদের ভোটেই ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি অভিষেকে যাবেন কী-না সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে তার অভিষেকে যোগ দেয়া আমাদের প্যানেলের যে গতি সেটাকে খানিকটা স্তিমিত করবে।’

আন্দোলনের বর্তমান অবস্থা জানতে যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ডাকসুর জিএস প্রার্থী রাশেদ খানের সাথে। তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘এই নির্বাচন যে একটি প্রশ্নবিদ্ধ এবং জালিয়াতির নির্বাচন তা দেশবাসী মিডিয়ার কল্যাণে জানতে পেরেছে। বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নাই। যে কারণে ছাত্র-রাজনীতি থেকে অপরাজনীতির উত্থান হয়েছে। মারামারি হানাহানি এই ছাত্র সংসদ না থাকার কারণেই হচ্ছে। বিভিন্ন হলে যে কারচুপি, জালিয়াতি হয়েছিল এবং রাতের অন্ধকারে মেয়েদের হল গুলোতে ব্যালট পেপার ভর্তি বস্তা উদ্ধার করা হয়েছে এসব কিছু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যথেষ্ঠ। আমরা পুনঃনির্বাচনের দাবিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে একাত্মতা পোষণ করেছি এবং আমরা এটি চালিয়ে যাব। ’

নুরুল হক নুরের দায়িত্ব গ্রহণ পুনঃনির্বাচনের আন্দোলনকে ব্যাহত করবেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে সংগঠনটির আরেক যুগ্ম আহবায়ক ফারুক হোসেন বলেন,‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট নিয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছে নুরুল হক নুর। আমরা তিন দিন ধরে হলে এবং লাইব্রেরিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের মোটিভ বোঝার চেষ্টা করেছি এবং আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছি যে ,অধিকাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন নুরুল হক নুরের দায়িত্বভার গ্রহন করা উচিত। এই মুহূর্তে পুনঃনির্বাচনের যে আন্দোলন সেটাকে আরও ত্বরাম্বিত করার জন্য এই দায়িত্বভার তাকে গ্রহণ করতে হবে। তিনি কারচুপির নির্বাচন বাতিল এবং পুনঃনির্বাচনসহ বাকি যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো সমাধান কল্পে কাজ করে যাবেন বলে সবার প্রত্যাশা। ’

পুনঃনির্বাচনের দাবি নাকচ করে দিয়ে ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক বিএম লিপি আক্তার বলেন, ‘এই নির্বাচন স্পষ্ট নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু হয়েছে। কারণ যেখানে আমাদের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি হেরে গেছেন এবং সেখানে নির্বাচিত হয়েছেন নুরুল হক নুর সেক্ষেত্রে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি এটা প্রশ্নই উঠার কথা নয়। কুয়েত মৈত্রী হল ছাড়া আর কোনো হলে অনিয়মের ঘটনা তারা দেখাতে পারবেনা। তাদের সাথে শিক্ষার্থী কতজন? নাকি শুধু তারাই পুনঃনির্বাচন চাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমি বলব, নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হয়েছে এবং পুনঃনির্বাচনের প্রশ্নই উঠেনা।আর তাদের আন্দোলনটা শিক্ষার্থীদের থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তাদের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের তেমন সরব উপস্থিতি নেই। আর এই আন্দোলন পুরোই স্তিমিত হওয়ার পথে। কারণ যাদের ম্যান্ডেট নিয়ে আমরা নির্বাচিত হয়েছি এই আন্দোলনে তাদের অনিহা প্রকাশ করে এটি ঝিমিয়ে যাওয়ার পথে।’

স্বাধীকার স্বতন্ত্র পরিষদের আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদ প্রার্থী পনিচুজ্জামান সাচ্চু বলেন, ‘আসলে পুনঃনির্বাচন সম্ভবনা সেটা আমরাও জানি। তবুও আন্দোলন করছি, সেটা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ‘

আন্দোলন সম্পর্কে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ত্বাহান বলেন, ‘যারা প্রার্থী আন্দোলনে তারাই থাকেনা। তাহলে এটি জোরালো হবে কি করে? এটা হচ্ছে এক ধরণের দায়সারা আন্দোলন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রশাসনের কৌশলের কাছে আন্দোলনকারীরা হেরে গেছে। কারণ প্রশাসন প্রথমে আন্দোলনকারীদের কাছে নির্বাচনের অনিয়ম এবং কারচুপির প্রমাণ চেয়েছেন। তারপর প্রভোস্ট কমিটির সভায় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছেন। সর্বশেষ ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদেরকে ৭ কর্মদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার মাধ্যমে একটি গ্যাপ তৈরী করেছেন। যাতে আন্দোলনের মাত্রা কমে যায় এবং এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা কোনো সাড়া না পেয়ে ফিরে আসবে। আর এভাবেই পুনঃনির্বাচনের আন্দোলন সম্পূর্ন স্তিমিত হয়ে যাবে ‘
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here