জীবনে সফল হওয়ার কয়েকটি মূলমন্ত্র

0
515

খবর৭১ঃ জীবন থেকে মুছে ফেলুন এই কথা গুলি- “যদি, কিন্তু, পারি না, হবে না, ওরা পছন্দ করে না, আমি বুঝি না, আমি অনভিজ্ঞ, আমার বুদ্ধি, জ্ঞান নেই, আমার দ্বারা হবে না, আমি বোকা, আমি ক্লান্ত,” এরূপ কথাগুলি মন থেকে মুছে ফেলুন। নিজেকে বলুন, আমি পারিনি তা নয় আমি পেরেছি। সর্বদা ইতিবাচক চিন্তা করুন।

কাজ- শুধু এক কাজ নয়, একাধিক কাজ করার চেষ্ঠা করুন। একটি চলে গেলে আরেকটি রয়েই যাবে।

সবার আগে নিজেকে গুরুত্ব দিন

জীবনের যেক্ষেত্রেই আপনি সফল হতে চান, আপনাকে নিজের যত্ন নিতে শিখতে হবে। যদি আপনি নিজেকে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দিতে না পারেন, তাহলে আপনি জীবনের ভারসাম্য খুঁজে পাবেন না।

এক্ষেত্রে নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে বলছেন নামকরা অভিনেত্রী এমা থম্পসন।

এরপরই আসবে আপনার সবচাইতে কাছের মানুষেরা, মানে পরিবার ও ঘনিষ্ঠ মানুষেরা। তাদের জীবনের দৈনন্দিন খবরাখবর রাখুন। যদিও হয়ত রোজ এ কাজটি করা কঠিন, তবু চেষ্টা করুন। এর পর শুরু করুন নিজের কাজ।

সামনে এগিয়ে যাওয়া থামাবেন না

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির অসউইজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে ফিরে আসা মনোবিজ্ঞানী এডিথ এজের নিজেকে সবসময় পর্বতারোহী মনে করেন। তিনি বলেন, ‘একজন পর্বতারোহী যখন ওপরে উঠতে থাকেন, তিনি পিছলে পড়েন, দুই তিন ধাপ নিচে নেমে যান। কিন্তু ওপরে ওঠা থামান না। আমি সেরকম, পিছলে পড়ি কিন্তু ওপরে ওঠা থামাই না আমি, কোনোদিন থামাবো না।’


অসউইজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে এডিথের বাবা-মায়ের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল, তিনি বেঁচে যান। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন এবং মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করেন। তিনি জানান, ‘মানুষ আমাকে মারতে পারবে, অত্যাচার চালাতে পারবে। কিন্তু আমার আত্মা আর এগিয়ে যাবার চেতনা কেউ শেষ করে দিতে পারবে না।’

অন্যরা কী ভাবছে তা ভাবার দরকার নেই

বিখ্যাত কমেডিয়ান এবং লেখক জো ব্রান্ড বলছেন, অন্যরা আপনার সম্পর্কে কী পাত্তা দেবার অত দরকার নেই। কারণ নিজের সম্পর্কে আপনার যে ধারণা তা অন্যের অনুমোদনের ছাড়াই আপনি বিশ্বাস করতে পারেন।

তার কথায়, ‘আমি ভাবি না অন্যেরা আমার সম্পর্কে কী ভাবছে। আমি আমার নিজের চেহারা পছন্দ করি, কিন্তু আরও বহু মানুষ তা পছন্দ করে না বলেই মনে হয়। আমি বিশ্বাস করতে শিখেছি, আমাকে কেমন দেখায় সেটা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার বন্ধু বা যারা আমাকে ভালোবাসে তাদের কাছেও সেটা ততটা বড় ব্যপার না। এটা মনে রাখা জরুরী বলে আমি মনে করি।’

দৃষ্টিভঙ্গি বদলান

অনেক সময়ই কোনো খারাপ মুহূর্তে আমরা ভাবি আমাদের কবর হয়ে গেছে, বা আমরা ডুবেছি। কিন্তু সেটা অন্যভাবে ভাবা যায়, যেমন আমরা ভাবতে পারি নতুন কোন কিছুর বীজ বোনা হয়েছে।

অভিনেত্রী কেলেসি ওকাফর বলেন, ‘আমার স্থির বিশ্বাস, আপনাকে আসলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি নিজের জীবন বা সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কেমন মনোভাব পোষণ করেন। ইতিবাচকভাবে দেখার অভ্যাস করা দরকার আমাদের। ডুবে যাওয়া বা বীজ বোনা- দুটোই কিন্তু মাটি বা পানির নিচে হচ্ছে।’

‘কিন্তু দুই ক্ষেত্রে দুই রকম মানে হয়, একটায় অত্যন্ত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়। অন্যটায় ইতিবাচক একটা মনোভাব বোঝা যায়, যা আপনার চিন্তা প্রক্রিয়ায় ছাপ ফেলে। আমার জীবনে এমন অনেক মুহূর্ত আছে যখন আমার মনে হয়েছে আমি মরে গেছি, কিন্তু সেসব মুহূর্তেই আবার আমি নতুন করে সব শুরু করেছি।’

ইতিবাচক মানুষের চারপাশে থাকুন

বিপণন গুরু বলে পরিচিত মেরি পোরটাস বলেন, ‘কারও চারপাশে যদি ইতিবাচক মানুষ সব সময় থাকে, তাহলে নিজের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা কিংবা ব্যর্থতা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত থাকার কথা নয় তার। আমার এজেন্সিতে আমরা এমন মানুষ নিয়োগ দেই, যারা আলো ছড়ান চারপাশে, যারা অন্যকে হীনমন্যতায় ডুবিয়ে দেন তাদের নয়।’

তিনি বলেন, ‘‘যারা সবসময় সব পরিস্থিতিতে ইতিবাচক থাকেন, সব কাজ ‘পারব’ বলে রাজি হয়ে যান ও সেটা পাবার জন্য নিজের সেরাটা দেন এমন মানুষ পছন্দ আমাদের। যারা নিজেরা এনার্জিতে ভরপুর থাকেন, তারা অন্যকেও উৎসাহ দিতে পারেন। যদি উন্নতি করতে চান, তাহলে যারা মনমরা থাকেন বা অহমপূর্ণ আচরণ করেন তাদের থেকে দূরে থাকুন।’

মাথা খাটান

অসউইজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে ফিরে আসা মনোবিজ্ঞানী এডিথ এজের বলেন, ‘যেকোন পরিস্থিতিতে নিজের বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করুন। আমার মা বলতেন আমরা কোথায় যাব জানি না, আমাদের জীবনে কী ঘটবে আমরা জানি না। কিন্তু আমাদের মাথার ভেতরে কী আছে সেটা যেমন অন্যরা জানে না, তেমনি সেটা কেউ ছিনিয়ে নিতেও পারবে না।’

নিজেকে মাঝে-মধ্যে ছুটি দিন

মার্কিন লেখক মেশেল লোরি বলেন, ‘একজন মানুষ সব সময় একই রকমভাবে সফল হবে না, সেটা সম্ভব নয়। আর সফল না হতে পারলে মুষড়ে পড়ার কিছু নেই। আমাদের সব সময় শেখানো হয় আমাদের সবকিছু পারতে হবে। আমাদের সব সময় সৃষ্টিশীল হতে হবে। কিন্তু আমাদের তো বিশ্রাম আর নতুন করে ভাবার জন্যেও সময় চাই।’

তিনি বলেন, ‘নিজের ভেতরকার শূণ্যতা পূরণের জন্য সময় দরকার একজন মানুষের, সেই সাথে নিজের কাজকর্ম মূল্যায়নের জন্যেও তো অবসর লাগে। সেটা দিনের শেষে পাঁচ মিনিট সময় হতে পারে, আলাদা করে ভাবুন সারাদিনে কী কী কাজ করলেন, কেমন ভাবে করলেন, আরও ভালোভাবে কিভাবে করা যেত। এই সময়ে ফোন ঘাটা বাদ দিয়ে, টিভি না দেখে কেবলই নিজেকে কিছুটা সময় দিন।’

ব্যর্থতা জীবনের শেষ কথা নয়

কোনো কাজে ব্যর্থ হলে ভাববেন না আপনার জীবন শেষ। বরং ভাবুন এটা আপনার জীবনের একটা ‘কমা’ মানে স্বল্প বিরতি, ‘ফুলস্টপ’ বা শেষ নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here