চৌগাছা বাজারে শীতের সবজি পানির দরে বিক্রি খরচ না উঠার আশংকা হতাশ কৃষক

0
467

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর)ঃ যশোরের চৌগাছায় শীতের সবজির বাম্পার ফলন হলেও কাংিখত দাম না পেয়ে লাভ তো দুরের কথা হাজার হাজার টাকা লোকসানের আশংকায় কৃষকরা। শীত শুরুর প্রথম দিকে সবজির দর কিছুটা ভাল থাকলেও যত দিন যাচ্ছে ততই প্রতিটি সবজির দাম হুহু করে কমতে শুরু করেছে। বাজারে ক্রেতা বিক্রেতার সরব উপস্থিতি থাকলেও বেচা কেনা নেই তেমন। সারা দিন বসে থেকে কৃষক তার উৎপাদিত সবজি পানির দরে বিক্রি করে এক বুক হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। বর্তমানে ৩ মন ফুলকপি বিক্রি করলে ১ কেজি খাশির মাংশের দাম হচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে এ জনপদের চাষিরা ব্যাপক ভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হবেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সবজি চাষ তুলনামুলক বেশি, ফলনও ভাল হয়েছে। এবছর চৌগাছাতে ফুলকপি ৪শ ৮০ হেক্টর, বেগুন ৭শ ৫৫ হেক্টর, বাধাকপি ৫শ ৭০ ও মুলা ৩শ ৫৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। সব মিলিয়ে এ বছর উপজেলাতে ৩ হাজার ৮শ ৮০ হেক্টর জমিতে কৃষক সবজি চাষ করেছেন। সোমবার চৌগাছার প্রধান কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চলতি শীত মৌসুমে বাজারে সব ধরনের সবজির ব্যাপক সমারোহ ঘটেছে। কাঁচা বাজারের সম্পূর্ণ এলাকায় শুধুই সবজি। কিন্তু অবিক্রি অবস্থায় সব চাষিরা চাতক পাখির মত ব্যাপারীদের মুখের দিকে চেয়ে আছেন। দিন শেষে তারা পানির দরে এ সব সবজি বিক্রি করে বাড়ি ফিরেছেন। বাজার ঘুরে দেখা গেছে শীতের সবজির মধ্যে ফুলকপির সমারোহ সব থেকে বেশি। যে ফুলকপি গত শীত মৌসুমের এই সময়ে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা মন, সেই কপি এবার বিক্রি হচ্ছে ২শ থেকে ২শ ২০ টাকা মন।.কথা হয় উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের কৃষক পিন্টু মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, ১ বিঘা কপি চাষ করতে যেয়ে তার এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। অনেক আশা নিয়ে কপি চাষ করেছিলাম। কিন্তু এখন সব আশা যেন নিরাসায় পরিনত হয়েছে। বর্তমান বাজার দরে তার ক্ষেতের সমুদয় কপি বিক্রি করলে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা ঘরে আসবে। এই ক্ষতি কি ভাব সে কাটিয়ে উঠবে তা ভেবে পাচ্ছেনা। চুয়াডাগাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার করচাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক ছমির উদ্দিন বলেন, তিনি চলতি মৌসুমে সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে ফুল কপির চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত ওই কৃষকের খরচ হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। বর্তমানে কপি উঠার ভরা মৌসুম। চৌগাছা বাজারে সবজির দাম ভাল তাই তিনি এই বাজারে সবজি নিয়ে আসেন। কিন্তু এবছর কপির যে দাম তাতে লাভ তো দুরের কথা খরচের টাকা উঠাও এখন কষ্ট হয়ে যাবে। কৃষক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, তিনি দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপি ও ১ বিঘা জমিতে বাঁধা কপির চাষ করেছিলেন। কিন্তু বাজার দরে তিনি নিঃস্ব হয়ে যাবেন বলে আশংকা করছেন। একই কথা বলেন কৃষক জিল্লুর রহমান, জামাত আলী, সেলিম রেজা, মুকুট হোসেন, কবির উদ্দিন প্রমুখ। এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে সোমবার চৌগাছা প্রধান কাঁচা বাজারে পাইকারী ১ কেজি ফুলকপি ৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০ টাকা, বেগুন ৮ টাকা, সিম ৭ টাকা, পেঁপে ৬ টাকা, নতুন পিয়াজ ১৩ টাকা, বরবটি ১০ টাকা, বাঁধাকপি ৪ থেকে ৫ টাকা, পটোল ৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আর পালনশাক ৩ টাকা আটি, লাউ প্রতিটি ১০ থেকে ১২ টাকা, লাল শাক ৩ টাকা আটি বিক্রি হচ্ছে। শীতের ভরা মৌসুমে এক প্রকার আকস্মিক ভাবে সবজি বাজারে এমন ধ্বংশ নামাতে কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা নেমে এসেছে। চৌগাছা কাঁচা বাজারে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে আড়তের ব্যবসা করে আসা ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, আমার দীর্ঘ ব্যবসায়ী বয়সে বাজারের এমন দরপতন তিনি দেখেনি। কৃষক দীর্ঘ একটি বছরের পরিশ্রম শেষে যখন তার ফল ঘরে তুলতে যাবে তখনই সে ধরাশয়ি হচ্ছে। কারন হিসাবে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলাতে প্রচুর পরিমানে সবজির চাষ হয়েছে। চাহিদার থেকে উৎপাদন বেশি সেই কারনে এই পরিস্থিতি বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এমন কোন জেলা নেই যে, সেখান থেকে ব্যাপারীরা এখানে ছুটে আসেনা। এবছরও তার কোন ঘাটতি হয়নি। কিন্তু বাজারে সবজির দাম নেই। দেশের কোন এক প্রান্তে সবজির দাম কম হলেই তা মুহুর্তের মধ্যে ব্যাপরীরা জেনে যাচ্ছে, বিধায় তারাও কম দামে সবজি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচউদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে সবজির চাষ তুলনা মুলক বেশি হওয়ায় সবজির দাম কিছুটা কম। তবে এই অবস্থার দ্রুতই উন্নতি ঘটবে বলে তিনি মনে করেন।

খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here