চৌগাছায় শীতের সবজি বাধা কপির বাজার দর কমে যাওয়ায় খরচের টাকা উঠা নিয়ে শংকায় চাষি

0
687

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর)ঃ যশোরের চৌগাছায় চলতি শীত মৌসুমে বাধা কপির ব্যাপক চাষ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার অধিকাংশ কৃষক বেশি লাভের আশায় শীতের বেশ আগে ভাগেই বাধা কপির চাষ শুরু করেন। এখন কপি উঠার উপযুক্ত সময়। কিন্তু বাজারে হঠাৎ করেই কপির দাম কমে যাওয়ায় খরচের টাকা উঠা নিয়ে শংকায় রয়েছেন কৃষকরা। সম্প্রতি দুই দিনের পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারনে বাজার দর বহুলাংশে কমে গেছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। বর্তমান বাজার দরের পরিবর্তন না ঘটলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হবে এ অ লের কৃষক মনে করেন সচেতন মহল।
সূত্র জানায়, সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছা সব ধরনের সবজি চাষের জন্য বরাবরই বিখ্যাত। এ জনপদের চাষিরা যুগযুগ ধরে নানা ধরনের সবজি চাষ করে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন এ ধরনের নজির রয়েছে। নতুন নতুন চাষাবাদে কৃষক অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন এমন ঘটনাও কম নই। এরপূর্বে চৌগাছা অ লের কৃষক সিম, বরবটি, লালশাক, পালনশাক, বেগুন, টমেটোর চাষ করলেও কপি চাষে তারা বেশ পিছিয়ে ছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে কৃষক বাধা কাপি ও ফুল কপির চাষ করে বেশ সাফল্য অর্জন করেছেন। তাদের সফল্য দেখে এখন উপজেলার অধিকাংশ গ্রামের কৃষক ব্যাপক ভাবে কপি চাষের দিকে ঝুকে পড়েছেন। কিন্ত চলতি মৌসুমের শুরুতে কপির যে বাজার দর তাতে করে খরচের টাকা উঠায় যেন কষ্টসাধ্য এমনটিই জানালেন কৃষক সোহেল রানা। গতকাল উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের বিভন্ন গ্রামা লের মাঠে যেয়ে দেখা যায় কৃষক তাদের সবজি ক্ষেতে নিরালস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ সময় কথা হয় হাজরাখানা গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে কৃষক সোহেল রানার সাথে। তিনি জানান, চলতি শীত মৌসুমে তিনি ৫ বিঘা জমিতে বাধা কপি ও ১ বিঘা জমিতে ফুল কপির চাষ করেছেন। মাত্র তিন মাসের সবজি হচ্ছে বাধা কপি। এ বছর কপির চারা রোপনের পর অতিমাত্রায় তাপ থাকায় কপির চারা সে ভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি। তাই কিছুটা দেরিতে চলতি মৌসুমে কপি উঠা শুরু করেছে। কিন্তু শুরুতেই বাজার দরে চরম ধ্বশ নেমেছে বলে তিনি জানান। বর্তমানে এক মন কপি বাজারে তারা বিক্রি করছেন ৪শ থেকে ৪২০ টাকায়। আর প্রতি পিচ কপি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে। মৌসুম শুরুর কয়েক দিন বাজার দর কিছুটা ভাল ছিল, কিন্তু হঠাৎ করে দাম নিন্মমুখী। এর কারন হিসাবে তিনি জানান, সম্প্রতি পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা দুই দিন ধর্মঘট হয়েছে। এই অজুহাতে ব্যাপারীরা কপির দাম বহুলাংশে কমিয়ে দিয়েছেন। ব্যাপরীরা তাদের কাছ থেকে কম দামে ক্রয় করে তা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকাতে নিয়ে উচ্চদরে বিক্রি করছেন। তিনি জানান, মধ্যস্বত্ত ভোগীদের দৌরত্বের কারনে কৃষক তার পন্যের কাংখিত মুল্য থেকে বরাবরই বি ত হয়ে আসছেন। কৃষক সোহেল রানার মত হাজরাখানা, টেংগুরপুর, আন্দারকোটা, পেটভরা, গুয়াতলী, ইছাপুর, পাঁচনামনা গ্রামের অসংখ্য কৃষকের সাথে কথা বলে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। পাঁচনামানা গ্রামের কৃষক ওয়াজেদ আলী বলেন, ১ বিঘা জমিতে কপি চাষ করতে যেয়ে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগে যদি কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় তা মেনে নেয়া যায়। কিন্তু ক্ষেতে সবজির ব্যাপক ফলন হয়েছে সেই সবজি যদি বাজারে নিয়ে পানির দরে বিক্রি করা হয় তাহলে কোন কৃষকই তা সহজে মেনে নিতে পারেনা। তিনি বলেন, আমার ক্ষেতের উৎপাদিত কপি আমি পাইকারি বাজারে ৬ টাকা দরে বিক্রি করছি, সেই কপি ২শ গজ দুরে যেয়ে খুচরা বাজারে তা ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মুলত কৃষকের হাত থেকে যখন অন্য হাতে চলে যায় তখনই সেই পন্যের দাম কয়েক গুন বেড়ে যায়। তিনি বলেন, এ অ লের অনেক কৃষক রাগে ক্ষোভে শীতের অন্যতম একটি সবজি মুলার ভাল বাজার দর না পেয়ে বাজারের খালি জায়গায় তা ফেলে রেখে চলে গেছেন। অনেকে জমিতেই সব মুলা নষ্ট করে দিয়েছেন। মৌসুমের শুরুতেই বাজারের এই বেহালদশার কারনে হতাশা দেখা দিয়েছে চাষিদের মধ্যে। কৃষক তার উৎপাদিত প্রতিটি পন্যের ন্যায্য মুল্য নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ঠদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাইচউদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলাতে ৩৫০ হেক্টর জমিতে বাধা কপি আর ১৫০ হেক্টর জমিতে ফুল কপির চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় তিন গুন। আবহাওয়া কপি চাষের অনুকুলে থাকায় ফলনও ভাল হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বাজার দর কিছুটা কম, তবে দামের পরিবর্তন ঘটবে বলে তিনি মনে করছেন।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here