চৌগাছায় শব্দ ও বায়ু দূষন মারাত্মক আকার ধারন করেছে উপজেলাবাসি চরম উদ্বিগ্ন

0
390

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর)ঃযশোরের চৌগাছায় শব্দ ও বায়ু দূষন দিন দিন চরম আকার ধারন করেছে। ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ। বলাচলে পরিকল্পিত ভাবেই এই শহরের পরিবেশ দূষিত করে তোলা হচ্ছে। অনেকের অভিমত আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই, যার ফলশ্রুতিতে দিনদিন পরিস্থিতি ভয়াবহতায় রুপ নিয়েছে। উপজেলা সদরে উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে অপরিকল্পিত ভাবে। এছাড়া ইট ভাটার কাজে নিয়োজিত বাহন এবং বালুবহনের ট্রাক পরিবেশ ভয়ানক ভাবে নষ্ট করছে। এই পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন না ঘটলে সব বয়সের মানুষের চরম মুল্য দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন উপজেলাবাসি।
সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে উপজেলা সদরকে পৌরসভায় রুপান্তরিত করার পর মুলত এ জনপদের আমুল পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ব্যবসা বান্ধব উপজেলা হওয়ার সুবাদে এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ ব্যবসার জন্য ছুটে আসেন। চাকুরী সুবাদে অনেকে চৌগাছায় স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেছেন। গ্রাম থেকে শতশত মানুষ উপজেলা সদরে এসে শুরু করেছেন বসবাস। চৌগাছাতে গামেন্টর্স শিল্প প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মানুষের উপস্থিতি আরও কয়েকগুন বেড়ে গেছে। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলা সদরে থাকে মানুষের চলাচল। সুন্দর পরিবেশে গড়ে উঠা চৌগাছা দিন দিন তার ঐতিহ্য যেন হারাতে বসেছে। বিশেষ করে উপজেলা সদরে বায়ু ও শব্দ দুষন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রতিদিনই দূষনমাত্রা বেড়েই চলেছে। এই অবস্থা অব্যহত থাকলে চরম হুমকির মুখে পড়বে এখানে বসবাসবারী সব বয়সের মানুষ মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চৌগাছা উপজেলা সদরে মানুষের বসবাস দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের বসবাসের সাথে বাড়ছে ঘরবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শিল্প কলকারখানা। এসব নির্মান কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী সড়কের পাশে যত্রতত্র ভাবে ফেলে রাখা হচ্ছে। এর উপর দিয়ে চলছে যানবাহন সহ পথচারীরা। ফলে বালু মাটি সড়কের উপরে এসে তা বাতাসে মিশে নষ্ট করছে পরিবেশ। অনুরুপ ভাবে চলছে সরকারী ভাবে নানা উন্নয়ন কাজ। স্থানীয়দের অভিযোগ এ সব কাজের ফলেও মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। এদিকে চৌগাছা উপজেলা সদরের সড়ক গুলো যেন অঘোষিত ভাবে দখল করে নিয়েছে ইটভাটার কাজে নিয়োজিত ট্রাক ও ট্রাক্টরগুলো। ভাটার কাজে ব্যবহৃত বাহনের কোন সময় অসময় নেই। তারা দিন রাত পুরো সময় ধরে সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে বালু বহনকারী ট্রাক। ভাঙ্গা চোরা ট্রাকে করে বহন করা হচ্ছে বালু। এতে করে সড়কের উপরে প্রতি দিনই জমা হচ্ছে বালু মাটির স্তুপ। এসব বালু ও মাটি শুকিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে ছোটছোট বালুকনা। একটু বাতাস হলে কিংবা ওই সড়কে কোন যানবাহন চললে তার পিছনে কোন মানুষই চলতে পারছে না। বাজারের সব ধরনের ব্যবসায়ী ও পথচারীদের অভিমত চৌগাছা শহরে নিঃশ্বাস নেয়া এখন কষ্ট হয়ে উঠেছে। বাজারে নিত্য দিনের কাজে আসা প্রতিটি মানুষ উপজেলা সদর দ্রুত ত্যাগ করার জন্য যেন ব্যাকুল হয়ে উঠছে। আর যারা স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন তাদের অবস্থা অত্যান্ত নাজুক। ভয়ানক এই পরিস্থিতিতে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী, সড়কের পাশের ব্যবসায়ী ও স্থায়ী ভাবে বসবাসকারীদের সমস্যা সব থেকে বেশি হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রতিটি সড়ক যখন ধুলা বালুতে একাকার ঠিক সে সময় সড়ক গুলোতে চলাচলরত সব ধরনের যানবাহনও যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা কোন নিয়ম কানুনকে তোয়াক্কা করছে না। যাত্রীবাহি বাস, ট্রাক, ট্রাক্টর, মাইক্রোবাস, নছিমন, করিমনসহ সব ধরনের যানবাহন অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে চলাচল করছে। প্রতিটি বাহন উপজেলা সদরে প্রবেশের পর উচ্চস্বরে হর্ণ বাজানো এখন নিয়মে পরিনত হয়েছে। আর অবৈধ নছিমন করিমন যেন কারও দোহায় মানে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সদরে শব্দ দুষনের অন্যতম একটি কারন হচ্ছে অবৈধ নছিমন করিমন। এই সব বাহনের কিছু কিছু চালক বেশি শব্দ করার জন্য নছিমন করিমনের শব্দ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র (সাইলাঞ্চার) খুলে রেখে বিকট শব্দে সড়কে উড়ে চলছে। বলাচলে শব্দ ও বায়ু দুষনে নাকাল চৌগাছাবাসি। এই অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই সব বয়সের মানুষের চরম সমস্যায় পড়তে হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দুষনজনিত অসুখবিসুখের কারনে। কিন্তু সারা বিশ্বে এ ধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বায়ু দূষনের কারনে শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ব্যহত এবং স্নায়ুর ক্ষতি হয়। চোখ, নাক, গলার সংক্রমণ বা ক্ষতির কারন হতে পারে। সেই সঙ্গে ফুসফুসের নানা জটিলতা, যেমন ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া, মাথাব্যাথা, অ্যাজমা এবং নানাবিধ এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here