চৌগাছায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্মম হত্যার শিকার একই পরিবারের তিনজন

0
307

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) :যশোরের চৌগাছায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সেনাদের নির্মম নির্যাতনে প্রান হারানো একই পরিবারের তিন জনের কবর চরম অযত্ন আর অবহেলার মধ্যে পড়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের ৪৬ বছর পার হলেও আজও পর্যন্ত এই গন কবরের সন্ধান তেমন কেউ রাখেনি। যে কবরে তারা শায়িত আছেন সে জায়গাও অন্যের হওয়ায় শহীদদের পরিবার পরিজন কবরটিকে সংরক্ষন পর্যন্ত করতে পারিনি। গন কবরকে সংরক্ষন করার পাশাপাশি কবরস্থানের জমিটুকু শহীদ পরিবারের নামে করে দেওয়ার আকুতি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
এলাকার বয়োবৃদ্ধরা জানান, ১৯৭১ সাল মহান মুক্তিযুদ্ধের ডামাডোল বেজে উঠেছে সারা দেশব্যাপী। একটি স্বাধীন ভূখন্ডের জন্য বাংলার দামাল ছেলেরা অকাতরে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছে। সারা দেশে পাক হায়নাদের তান্ডবলীলা চলছে, তারপরও মৃত্যুকে পরোয়া না করে সকলেই স্বাধীনতার জন্য ব্যাকুল। তেনকি একটি পরিবার উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের গদাধরপুর (সর্বনন্দহুদা) গ্রামের কোমর উদ্দিন মালির পরিবার। চারিপাশে পাকসেনাদের নির্মম হত্যাযজ্ঞ, প্রান ভয়ে অনেকে আশ্রায় নিয়েছে পাশ্ববর্তী ভারতের বিভিন্ন গ্রামে। কিন্তু দেশ মাতৃকার টানে তারা পড়ে আছেন নিজ এলাকায়। নিজে হায়নাদের প্রতিরোধ করতে চালাচ্ছেন প্রানপন চেষ্টা, একই সাথে এলাকার যুব সমাজকে এই মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য করছেন উদ্বুদ্ধ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তুমুল যুদ্ধ চলছে অনেক এলাকা ইতোমধ্যে স্বাধীন হওয়ার খবরও আসছে ঠিক সেই মুহুর্তে পাকসেনারা হানা দেয় গদাধরপুর গ্রামে। তারা গ্রামটিতে ঢুকে কোমরউদ্দিন মালি, তার ছেলে রজব উদ্দিন মালি ও কোমর উদ্দিনের স্ত্রী মতিয়ান্নেছাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। তাদেরকে বাড়ির অদুরে বর্তমান বেনুবুড়ির ভিটা বলে পরিচিত ওই মাঠে নিয়ে একটি গর্ত করে একই গর্তে তাদেরকে ফেলে দিয়ে বন্দুকের নল দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়। দেশ স্বাধীন হয়েছে আমরা পেয়েছি একটি লাল সবুজের পতাকা, পেয়েছি স্বাধীন ভূখন্ড। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৬ বছরে আজও এই পরিবারটি পাইনি তেমন কোন স্বীকৃতি এমনকি যাদেরকে এক কবরে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে সেই জমিটুকুও তারা নিজেদের করে নিতে পারেনি। কথা হয় শহীদ পরিবারের সন্তান নির্মম মৃত্যুর শিকার রজব আলীর মেয়ে মমতাজ বেগমের সাথে। তিনি জানান, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমরা অনেক ছোট। মুরব্বিয়ানদের কাছে শুনেছি, পাক সেনারা আমার পিতা রজব আলী, দাদা কোমর আলী ও দাদি মতিয়ান্নেছাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে একই কবরে মাটি চাপা দেয়। দেশ স্বাধীনের পর আমরা ওই গন কবরকে সংরক্ষনের অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারেনি। তিনি জানান, আমার পরিবারকে যে কবরে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে ওই জায়গাটি অন্যদের। এর কারনে কবরকে সে ভাবে সংরক্ষণ করতে পারেনি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত আমাদের খোজ কেউ রাখেনি। কবরটিকে আমরা পাকা করার চেষ্টা করেছি কিন্তু কবরের ইট পর্যন্ত সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, আমাদের কোন চাওয়া পাওয়া নেই শুধু তাদের কবরের জায়গা টুকু আমাদের করে দিলেই খুশি। সংশ্লিষ্ঠ ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর আলফাজ উদ্দিন জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে পাক সেনারা তাদেরকে ধরে এনে এই জায়গায় গর্ত করে নির্মম ভাবে হত্যা করে। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরেও এই গন কবরটিকে সংরক্ষন করা হয়নি। এটি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। কেন কি কারনে সংরক্ষন হয়নি জানি না তবে সংরক্ষন করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ডাক্তার নুর হোসেন জানান, সেখানে গন কবর আছে সবই আমদের জানা। মুক্তিযোদ্ধাদের সরকার নানা ভাবে মুল্যয়ন করে আসছে। তিনি জানান, ওই পরিবারটি সরকার থেকে এক সময় সহযোগীতা পেয়েছে কিন্তু এখন বন্ধ আছে। তবে ওই গন-কবরের জায়গার বিষয়টি নিয়ে আমাদের কিছু করা উচিত বলে তিনি জানান।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here