চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধিঃ ’আমরা কোন দলের নই, নিরাপদ সড়ক চাই, আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না’ এ ধরনের স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ প্রকোম্পিত করে তোলে চৌগাছার শিশু কিশোর শিক্ষার্থীরা। রবিবার সকাল থেকেই তারা বিদ্যালয়ের ক্লাস বর্জন করে নেমে আসে সড়কে। শতশত শিক্ষার্থীর মিছিলে মিছিলে গোটা উপজেলা সদর এক সময় মিছিলের শহরে রুপ নেয়। শিক্ষার্থীরা এ সময় সড়কে চলাচলরত সব ধরনের যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করেন। কোন অপ্রতিকার ঘটনা যাতে না ঘটে তাই পুলিশকে দেখা যায় শতর্ক অবস্থায়। বেলা সাড়ে ১০ দিকে শিক্ষকদের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাসে ফিরে যায়। এদিকে দ্বিতীয় দিনের মত সড়কে কোন যানবাহন না চলায় যাত্রী সাধারনের দুর্ভোগ চরমে উঠে।
জানা গেছে, রাজধানী ঢাকায় বাস চাপায় দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ করে নেমে আসে রাজপথে। সারা দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে একাতত্বতা প্রকাশ করে রবিবার সকাল থেকেই সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছার শিশু কিশোর শিক্ষার্থীরা উপজেলা সদরে বিক্ষোভ করে। তারা বিভিন্ন ধরনের ব্যানার প্লেকার্ড হাতে নিয়ে খন্ড খন্ড মিছিল সহকারে সব গুলো সড়ক অবরোধ করে। শতশত শিক্ষার্থীর মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হতে থাকে চৌগাছা। এ সময় তারা বলেন, আমরা কোন দলের নই, নিরাপদ সড়ক চাই, আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না। শিক্ষার্থীরা সড়কের উপর বসে নির্মম এই মত্যুর প্রতিবাদ জানাতে থাকে। তাদের এই প্রতিবাদ দেখে সড়কে চলাচলরত সাধারণ মানুষ ক্ষনেকের জন্য থমকে যান। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তারা একাত্বতা প্রকাশ করে করতালী দিয়ে অভিনন্দন জানান। সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে স্বাধীনতা ভাস্কার্য মোড়ে এসে শেষ হয়। সেখানে তারা বিভিন্ন যানবাহনের ফিটনেস ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে। এ সময় তারা বাস, ট্রাক, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক মোটরসাইকেলের কাগজপত্র পরীক্ষা করেন। শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র পরীক্ষার হাত থেকে রেহাই পাইনি তাদের প্রিয় শিক্ষকরাও। শিক্ষকরা তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ কাগজপত্র শিক্ষার্থীদের দেখিয়ে তারপর চলে গেছেন। লক্ষণীয় বিষয় ছিল মোটরসাইকেলের চালকরা শিক্ষার্থীদের আহব্বানে সাড়া দিয়ে তাদের কাগজপত্র দেখাতে থাকেন। বাজারের সনু ডাক্তারের মোড় নামক স্থানে একজন মোটরসাইকেল চালক তার গাড়িটি শিক্ষার্থীদের জিম্মায় রেখে নিজের বাড়িতে গিয়ে কাগজপত্র নিয়ে এসে তাদের দেখান। ভোগান্তি হলেও চালকরাও শিক্ষার্থীদের সাধুবাদ জানায়। ছোট ছোটে শিক্ষার্থীদের কর্মকান্ডে বাজারের ব্যবসায়ীসহ সকলে মুগ্ধ হয়েছেন। অনেকে বলেন, এ ধরনের কাজ যদি সরকারের দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালিত হয় তাহলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল বহুলাংশে কমে যাবে। চৌগাছা-মহেশপুর, চৌগাছা-কোটচাঁদপুর, চৌগাছা-ঝিকরগাছা, চৌগাছা-যশোর সড়কসহ সব গুলো সড়কে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মিছিল থেকে যেন কোন অপ্রতিকর ঘটনার সূত্রপাত না ঘটে তাই সকাল থেকেই থানা পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় দেখা যায়। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে শিক্ষকদের অনুরোধে তারা সড়ক ছেড়ে ক্লাসে ফিরে যায়। এদিকে দ্বিতীয় দিনের মত চৌগাছার সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকদের ডাকে চলা অঘোষিত এই অবরোধে নাকাল চৌগাছাবাসি। কবে নাগাদ বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে তা বলতে পারছে না কেউ। শ্রমিকক সংস্থার দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্র থেকে ঘোষনা পেলেই আমরা সড়কে বাস চালাবো।
খবর ৭১/ইঃ