মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর)ঃ সবুজে সমারোহ এক অপরুপ সৌন্দর্যের আবাস ভুমি জগদীশপুর। নানা কারনে এই গ্রামটি চৌগাছা তো বটেই দেশ বিদেশে তার সুনাম অক্ষুন্ন রখেছে। এই গ্রামের মিয়া বাড়ির সামনে দৃষ্টিনন্দন বিশাল আকৃতির চারটি তেুঁতুল গাছ কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। জনশ্রুতি রয়েছে তেঁতুল গাছ চারটি দেশের সব থেকে বয়স্ক তেঁতুল গাছ। এলাকার মানুষের ধারণা গাছ গুলির বয়স প্রায় ৭শ বছরের মত। সূত্র জানায়, উপজেলার ঐতিহ্যবাহি একটি গ্রাম হচ্ছে জগদীশপুর। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, কৃষি, ব্যবসা-বানিজ্য সব দিক দিয়ে এই গ্রামটির জুড়ি নেই। উপজেলা সদর থেকে গ্রামটির অবস্থান ১০ কিলোমিটার। চৌগাছা থেকে রওনা হয়ে ইছাপুর বটতলা থেকে সোজা উত্তর দিকে যেতে হবে এরপর মুক্তদাহ মোড় থেকে পূর্ব দিকে রওনা হয়ে সাপের মত আঁকা বাকা রাস্তা পাড়ি দিয়ে পৌছাতে হবে জগদীশপুর গ্রামে। গ্রামটিতে পৌছানোর আগে সড়কের দু’পাশে দেখা মিলবে সবুজের সমারোহ। গ্রামটির যেখানে পৌছে পথিকের গন্তব্য শেষ ঠিক সেই জায়গায় অর্থাৎ মিয়া বাড়ির সামনে রয়েছে সুবিশাল চারটি তেঁতুল গাছ। হাজারও রহস্যঘেরা এই তেঁতুল গাছ কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। জানা গেছে, প্রায় ৭শ থেকে ৮শ বছর আগে প্রমত্তা বুড়ি ভৈরব কালের বিবর্তনে হারিয়ে যায়। বুড়ি ভৈরবের চারিদিকে চর পড়ে স্রোত ধারা বন্ধ হয়ে যায়, সৃষ্টি হয় স্থলভাগের। এ সব চরে সৃষ্টি হয় গ্রামের পর গ্রাম বন-জঙ্গল আর মাঠ ঘাট। সেই সৃষ্টিরই একটি গ্রাম হচ্ছে জগদীশপুর। বয়োবৃদ্ধদের মুখে শোনা যায়, প্রায় সাড়ে ৩শ বছর আগে যেখানে জগদীশ ঘোষ নামে এক বৃদ্ধ জনবসতি গড়ে তোলেন। আর এই জগদীশ ঘোষের নাম অনুসারে পরবর্তীতে গ্রামটির নামকরণ করা হয় জগদীশপুর। মিয়া বাড়ির সামনে ৪টি তেঁতুল গাছ এলাকাবাসি তো বটেই সেখানে আসা সব ধরনের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রায় ৭শ বছরের তেঁতুল গাছ এখনও রয়েছে সতেজ। প্রতি বছর গাছ চারটি রীতিমত ফল দিয়ে যাচ্ছে। কোন একটি শাখা প্রশাখা হয়নি নষ্ট। গাছ চারটির নিচে স্থানীয়রা বসার জন্য তৈরী করেছেন গোল চত্তর। অবসরে গ্রামের মানুষ এই গাছের নিচে এসে সময় পার করেন। আর পথচারীরা ক্লান্ত হয়ে এই গাছের নিচে কিছু সময় পার করে আবার যাত্রা শুরু করেন। প্রতি দিনই দেশের কোন না এলাকা থেকে তেঁতুল গাছ দেখার জন্য এখানে ছুটে আসেন।
জগদীশপুর গ্রামের সব থেকে বয়স্ক ব্যক্তি ডা. এহিয়া হোসেন (১০৯) জানান, এ গ্রামের পুট্টি বিশ্বাস ১শ ১৪ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি আজ থেকে প্রায় ১শ বছর আগে মারা যান। তিনি বলতেন, তার জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই গাছ গুলোকে একই রকম ভাবে দেখছেন। ডা: এহিয়া হোসেন আরো জানান, এ গ্রামের কৃতি সন্তান ত্রাণ ও পূর্ণবাসন মন্ত্রনালয়ের সাবেক সচিব, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম মনিরুজ্জামানের সাথে প্রায় ৪৫ বছর আগে ইটালিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ গ্রামটিতে বেড়াতে এসেছিলেন। কৌতুহল বশত তিনি এই তেঁতুল গাছের বয়স জানতে চাইলে কেউ নির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারেননি। পরবর্তীতে কয়েক বছর পরে ওই বিশেষজ্ঞ পুনরায় গ্রামটিতে আসেন। তিনি ওই সময় পরীক্ষা করে জানান, এই গাছ গুলোর বয়স ৬শ ৩০ বছর। সে হিসেবে বর্তমানে গাছের বয়স ৬শ ৭৫ বছরের মত। জগদীশপুর গ্রামে অবস্থিত দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ তুলাবীজ বর্ধন ও গবেষনা খামার। গ্রামটির উত্তর পাশ দিয়ে প্রবাহমান মর্জাদ বাওড়। এই গ্রামের কৃতি সন্তানরা দেশে ও দেশের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ সব পদে থেকে অত্যান্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাই গ্রামটি সুনাম চৌগাছার গন্ডি পেরিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে।
খবর ৭১/ইঃ