চৌগাছার চাতাল মালিকদের মাথায় হাত এক কেজি চাল উৎপাদনে খরচ ৩৭ টাকা আর বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকায়

0
769

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় চলতি ইরি বোরো মৌসুমে চাল উৎপাদনে চরম লোকসানের সম্মুখিন চাতাল মালিকরা। এক কেজি চাল উৎপাদনে তাদের যে পরিমান ব্যয় হচ্ছে খরচ তার চেয়ে অনেক বেশি বলে জানা গেছে। চাতাল মালিকরা বলা চলে পানির দরে চাল বিক্রি করছেন অথচ সেই চাল হাত ঘুরে সাধারণ মানুষের হাতে যাচ্ছে সোনার দরে। ফলে ক্ষতি গ্রস্থ্য হচ্ছেন চাতাল মালিক ও সাধারণ ক্রেতা, আর লাভবান হচ্ছেন এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনে সংশ্লিষ্ঠদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সূত্র জানায়, সময়ের পরিক্রমায় চৌগাছা উপজেলাতে অসংখ্য চাতাল গড়ে উঠেছে। এ সব চাতালে শতশত শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। উপজেলার ভারত সীমান্তের গা ঘেষা পুড়াপাড়া বাজার ও এর আশপাশে ৫০ থেকে ৭০ টির মত চাতাল রয়েছেন। প্রতি বছর এ সব চাতাল থেকে উৎপাদিত চাল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অভ্যান্তরে যায়। বিশেষ করে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নরসিংদি, রাজবাড়ি জেলাতে চৌগাছার উৎপাদিত চালের রয়েছে যথেষ্ট কদর। বিগত বছরে চাতাল মালিকরা সেভাবে লাভবান হতে না পারলেও তাদের লোকসান গুনতে হয়নি। তবে চলতি মৌসুমে চৌগাছার চাতাল মলিকরা ব্যাপক ভাবে লোকসানের সম্মুখিন হবেন বলে তারা জানিয়েছেন। গতকাল পুড়াপাড়া এলাকার চাতাল ঘুরে এই সব তথ্য পাওয়া গেছে। চাতাল মালিকরা জানান, বর্তমানে ১ মন ধান কিনতে হচ্ছে ৮শ ৫০ থেকে ১১শ ৫০ টাকা দরে। ওই ধান চাতালে নিয়ে সিদ্ধ, শুকানো, চাল তৈরীসহ নানা ভাবে এক কেজি চালের উৎপাদন ব্যয় হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা। অথচ এই চাল তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে ৩২ টাকা কেজি দরে। প্রতি কেজিতে চাতাল মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে ৩ থেকে ৫ টাকা। সরকার চলতি মৌসুমে চাল সংগ্রহ করছেন ৩৮ টাকা কেজি দরে। কিন্তু চৌগাছা উপজেলাতে যে পরিমান চাল উৎপাদন হয় তার সিকি পরিমান চালও তারা সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারেন না। চাতাল মালিকরা অভিযোগ করে বলেন, মধ্যসত্য ভোগীদের দৌরত্বের ফলে আমাদের বিক্রির দ্বিগুন দামে এক কেজি চাল সাধারণ মানুষকে কিনে খেতে হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত চাল যথাযথ মনিটারিং করে বিক্রির ব্যবস্থা করা হলে চাতাল মালিকসহ সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে বলে মনে করছেন তারা। ব্যবসায়ীরা জানান, মৌসুম শেষ হতে না হতেই সরকার চাল আমদানী শুরু করেন। চাল আমদানীর ফলে চরম ভাবে ক্ষতি হচ্ছেন চাতাল মালিকরা। আমদানীকৃত চালের গুনাগত মান আমাদের তৈরী চালের চেয়ে অনেক গুন খারাপ। তাই দেশের চাতাল মালিকদের কথা বিবেচনা করে চাল আমদানী বন্ধ করা উচিত বলে মনে করছেন অনেকে। অন্যথায় আমদানীকৃত চালের উপর ভ্যাট আরোপের দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। পুড়াপাড়া বাজারের বিশিষ্ঠ চাতাল ব্যবসায়ী মেসার্স সাদিয়া রাইচ মিলের মালিক আব্দুল আলিম জানান, পুড়াপাড়া বাজারের একটি অংশ চৌগাছা উপজেলার মধ্যে অপর অংশটি মহেশপুর উপজেলার অর্গত। চলতি মৌসুমে আমাদের নিকট থেকে চৌগাছার খাদ্য গুদাম ১২শ টন আর মহেশপুরের খাদ্য গুদাম ৭শ টন চাল সংগ্রহ করবেন। অথচ এই মৌসুমে শুধু পুড়াপাড়া বাজারের চাতাল মালিকরা কয়েক হাজার টন চাল উৎপাদন করবে। বাকি চাল তাদেরকে বাধ্য হয়ে কম দামে অন্যত্র বিক্রি করতে হচ্ছে। চাতাল মালিক সাইফুল ইসলাম, জামাল উদ্দিন, আব্দুল মুজিদ, সাজেদুর রহমান, হুমায়ুন কবিরসহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এ অঞ্চলের চাতাল গুলোতে সহ¯্রাধিক শ্রমিক কাজ করেন। ব্যবসায় মন্দা ভাব দেখা দেয়ায় তাদের পারিশ্রমিক দেয়া নিয়েও আমরা শংকায় আছি। সরকারী ভাবে আমাদেরকে সে ভাবে সাহায্য সহযোগীতাও করা হয়না বলে অভিযোগ। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়ে এনজিও থেকে ঋন নিয়ে ব্যবসা সচাল রাখার চেষ্টা করা হয়। চলতি মৌসুমে ব্যবসার যে বেহাল দশা তাতে করে সকল ব্যবসায়ী ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন। তাই চাতাল ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে এখনই যথাযথ পদক্ষপ গ্রহন করা দরকার। অন্যথায় অনেক ব্যবসায়ীর পথে বসার উপক্রম হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here