চৌগাছার এনামুল কবির ৯বিঘা জমিতে বানিজ্যক ভাবে চাষ করেছেন ড্রাগনের

0
357

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোরঃ যশোরের চৌগাছায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করে চাকুরী না করে ড্রাগন ও পেয়ারার চাষ করে ব্যপক সাফল্য অর্জন করেছেন যুবক এনামুল কবির। বর্তমানে তিনি ৯ বিঘা জমিতে ড্রাগন, ২০ বিঘা জমিতে পেয়ারা ও ৩ বিঘা জমিতে শরিফা ফলের চাষ করেছেন। প্রতিটি ফল বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রথম বছরেই তিনি প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ফল বিক্রি করেছেন। উচ্চ ডিগ্রী অর্জন করে চাকুরী না করে তিনি কৃষি কাজে মনোনীবেশ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রতি দিনই কোন না কোন এলাকার মানুষ তার বাগান পরিদর্শনে ছুটে যান ভারতের গা ঘেষা গ্রাম উপজেলার তিলেকপুরে। এনামুল শিক্ষিত সব যুবকের কাছে অনুকরনীয় বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।
সূত্র জানায়, ভারত সীমান্তের গা ঘেষা গ্রামের বাসিন্দা একছের আলীর ছেলে এনামুল কবির। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রথম শ্রেনীতে মাষ্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে ঢাকায় মাল্টিন্যাশন্যাল কোম্পানীর একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হিসাবে চাকুরী নেয়। মাস গেলে তিনি সন্তোষজনক বেতনও পান, কিন্তু কোথায় যেন অতৃপ্তি থেকেই যায় এনামুলের। তিনি ভাবতে থাকেন চাকুরী না নতুন কিছু করে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। যে ভাবনা সেই কাজ। চাকুরী ছেড়ে তিনি চলে আসেন নিজ বাড়িতে। ২০১৫ সালে তিনি প্রথমে ২ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেন। ২০১৬ সালে তা বৃদ্ধি করে ৯ বিঘা জমিতে দাড়ায়। এরসাথে চাষ শুরু করেন পেয়ারার। বর্তমানে তিনি ৯ বিঘা জমিতে ড্রাগন, ২০ বিঘা জমিতে পেয়ারা ও ৩ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন শরিফা ফলের। স্থানীয়রা এই ফলকে মেওয়া ফল হিসাবে চেনে। গতকাল সরেজমিন তিলেকপুর তার ক্ষেতে গেলে দেখা যায় এনামুল কবির জমিতে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ সময় কথা এনামুল কবিরের সাথে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ ডিগ্রী অর্জন করে একটি ভাল চাকুরীও পাই। কিন্তু সেখানে মনকে স্থীর করতে পারেনি। বাড়িতে ফিরে এসে এই প্রজেক্ট করার সিদ্ধান্ত নিই। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে ২ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ দিয়ে আমার পথ চলা শুরু। এরপর আরও ৭ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছি। ড্রাগনের জমিতে মিশ্র চাষ হিসাবে করেছি পেয়ারা, লেবু ও মানকচু। এ ছাড়া শুধু পেয়ারার চাষ করেছি আরও ১১ বিঘা জমিতে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত তার ২২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু আয় হয়েছে তার দ্বিগুন, গেল মৌসুম পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫২ লাখ টাকার ড্রাগন ও পেয়ারা বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ড্রাগন আমাদের এলাকাতে একবারেই অপরিচিত একটি ফল। দেশের বাইরে পুষ্টি গুনে ভরা এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একটি ড্রাগন গাছ ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চ হয়। ভরা মৌসুমে একটি গাছ থেকে ৭ থেকে ৮ কেজি ফল সংগ্রহ করা যায়। ২শ থেকে ৩শ ৫০ টাকা দরে প্রতি কেজি ড্রাগন বিক্রি করা যায়। শুধু ফল বিক্রি না ড্রাগনের কাটিং বিক্রি করে বছরে ২ থেকে ৩ লাখ আয় করা সম্ভব। ড্রাগনের চাষ মুলত এঁটেল, এঁটেল দোয়াশ মাটিতে ভাল হয়। এই ফলে পোকা মাকড়ের উপদ্রপ একে বারেই কম। ড্রাগন চাষ ব্যাপক লাভজনক হওয়ায় ইতোমধ্যে এলাকার অনেকেই ড্রাগন চাষে ঝুকে পড়েছেন। এনামুল কবির আরও বলেন, বর্তমানে তার অধিনে ২৫ থেকে ৩০ জন মানুষ নির্ধারিত মজুরিতে কাজ করেন। তার প্রতি বছরে লেবার খরচ বাবদ আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এদিকে শিক্ষিক যুবক এনামুল কবির হারিয়ে যাওয়া ফল স্থানীয়রা যাকে মেওয়া ফল হিসাবে চেনে সেই ফলের চাষ শুরু করেছেন। তিন বিঘা জমিতে তিনি শরিফা (মেওয়া) ফলের চাষ করেছেন। প্রতিটি গাছে ফল আসা শুরু করেছে। তিনি এই চাষেও সাফল্য পাবেন বলে মনে করছেন। এনামুল কবির উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মা মাটি মানুষের সাথে মিশে যে দৃষ্টন্ত স্থাপন করেছেন তা সকলকে অবাক করেছে। তার এই প্রজেক্ট দেখতে প্রতি দিনই দুর দুরন্ত থেকে অসংখ্য উৎসুক মানুষ সেখানে ভিড় করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচউদ্দিন বলেন, এনামুল কবির আমাদের উপজেলার জন্য অহংকার। তিনি যে প্রজেক্ট তৈরী করেছে তা সকলেরই নজর কাড়ার মত। তিনি বলেন ড্রাডন ফল অত্যান্ত পুষ্টিকর একটি ফল। তার এই চাষের ফলে আমদানি নির্ভর অনেকটাই কমবে। সব থেকে বড় কথা তিনি এই চাষটিকে বনিজ্যিক করন করায় এর সুফল সকলেই ভোগ করবে। উপজেলা কৃষি অফিস সর্বদা তার সাহায্যার্থে কাজ করে যাচ্ছেন।

খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here