চৌগাছার ইসলামী হাসপাতালে সিজারের পর দুই মায়ের মৃত্যু নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ

0
261

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধিঃ যশোরের চৌগাছায় একটি বে-সরকারী ক্লিনিকে সিজার করার পর দুই মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই ক্লিনিকে সিজারের পর দুই মায়ের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। ভুল অপারেশনের কারনেই তাদের মৃত্যু বলে দাবি পরিবারের। তবে অপারেশনে কোন ভুল ছিল না বলে দাবি করেছেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। ওই ক্লিনিকে এর আগেও অপারেশনে রোগীর মৃত্যু ঘটনা নিয়ে কর্তৃপক্ষকে লিখিত  অভিযোগ করার পাশাপাশি ক্লিনিক ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয়রা ক্লিনিকের সার্বিক বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সূত্র জানায়, চৌগাছা পৌর সদরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ইসলামী হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে এই ক্লিনিকের কার্যক্রম নিয়ে জনমনে  ছিল নানা প্রশ্ন। তার মধ্য দিয়ে ক্লিনিক মালিক তার কার্যক্রম অব্যহত রাখেন। প্রায় সময়ই সেখানে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি দুই সিজারিয়ান মায়ের মৃত্যু নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, গত ২৪ এপ্রিল ইসলামী হাসপাতালে সিজার করা হয় উপজেলার স্বরুপদাহ গ্রামের রাসেল হোসেনরে স্ত্রী লিমা খাতুনকে (২০)। সিজার হওয়ার পর শিশুটি  সুস্থ থাকলেও মা লিমা খাতুন বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রায় এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে তাকে রিলিজ দেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। বাড়ি যাওয়ার পর তিনি কখনও সুস্থতাবোধ করেনি বলে জানান তার স্বজনরা। সিজারের দেড় মাস পর ওই প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়। নিহত লিমার স্বজনরা জানান, মৃত্যুর আগ মুহুর্তে সে মাথার যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে উঠে, একপর্যায় তার মত্যু হয়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ২১ জুলাই শনিবার মারা যান পৌর এলাকার পাঁচনামনা গ্রামের প্রবাসী নাসির উদ্দিনের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩২)। নাজমা বেগমকেও সিজার করা হয় ইসলামী হাসপাতালে। তার স্বামী নাসির উদ্দিন জানান, গত মে মাসের ৩ তারিখে ইসলামী হাসপাতালে সিজার করা হয় নাজমা বেগমের। সিজারের পর শিশুটি   ভাল থাকলেও নাজমা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়ে। মাথা যন্ত্রনা ও হাত পায়ের শক্তি কমে যেতে থাকে তার। এই অবস্থায় তাকে রিলিজ দেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। বাড়িতে নিয়ে আসার পর নাজমা বেগম আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। একপর্যায় তাকে ভর্তি করা হয় যশোর কুইন্স হসপিটালে। সেখানে চিকিৎসা করার পর তার কোন উন্নতি না হওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঢাকা মেডিকেলে দীর্ঘদিন চিকিৎসারত থাকা অবস্থায় গত ২১ জুলাই শনিবার ভোর ৫ টার দিকে সে মারা যায়। নাসির উদ্দিন বলেন, সিজার হওয়ার পর থেকেই তার মাথা যন্ত্রনা ও হাত পায়ের বল পড়ে যায়। তবে মাথা ব্যথাই ছিল সব থেকে বেশি। কি কারনে তার এই অবস্থা হলো তা ডাক্তারই ভাল বলতে পারবে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু বাঁচাতে পারিনি নাজমাকে। ছোট্ট শিশু ইয়াসমিন (২ মাস) নিয়ে আমি চরম অসহায় হয়ে পড়েছি। একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, সিজারের আগে রোগী অজ্ঞান করার সময় যে ইনজেকশন দেয়া হয়, তা ছিল ভারতীয় ওষুধ। আবার অনকে বলছে হয়ত তারা মেয়াদ উত্তীর্ণ ইনজেকশন দেয়ার ফলে ওই দুই প্রসূতি মা ভুগে ভুগে মারা গেছে। তবে দ্বিমত পোষন করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইসলামী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ মোঃ বাবুল চৌধুরী বলেন, আমাদের চিকিৎসায় কোন ত্রুটি ছিলনা। সিজার করেন ডাঃ রবিউল ইসলাম, তিনি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আর রোগী অজ্ঞান করেন আর এক বিষেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাক্তর শাহিনুর রহমান শাহিন। অপারেশন ও অজ্ঞান করায় কোন ভুল ছিলনা। ভাল অপারেশন হয়ে রোগী সুস্থ হওয়ার এক সপ্তাহ পর রোগীরা বাড়িতে যায়। বাড়ি ফেরার পর তারা ভিন্ন ভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তিনি বলেন, স্বরুপদাহ গ্রামের লিমা খাতুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এবং পাঁচনামনা গ্রামের নাজমা বেগম যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে আমি শুনেছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অজ্ঞান করা চিকিৎসক শাহিনুর রহমান শাহিন জানান, আমি প্রায় ওই ক্লিনিকে যেয়ে রোগী অজ্ঞান করা ইনজেকশন দিই। তবে যে রোগী নিয়ে কথা উঠেছে তাদের বিষয়টি রেজিষ্টার খাতা না দেখে আমি বলতে পারছিনা। ডাক্তার রবিউল ইসলাম বলেন, মারা যাওয়া দুই রোগীর সফল অস্ত্রপচার হয়েছিল। সুুুস্থ হয়ে তারা ক্লিনিক ত্যাগ করেন। সিজারের ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়নি বলে তিনি জানান।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here