চুনারুঘাটের ৮০ ভাগ বাসা বাড়িতে পানি নেই

0
234

মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ৮০ ভাগ বাসা বাড়িতে পানি নেই। পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে এসব বাসা বাড়ির নলকুপে পানি উঠছে না। শুধু বিশদ্ধ পানি নয়, খাল বিল ও নদী নালার পানিও শুকিয়ে যাওয়ায় পানি সংকট এখন চরম আকার ধারন করেছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও দেখা দিয়েছে পানির সংকট।বিশেষ করে চা বাগান ও পাহাড়ী এলাকার উচু ভুমির বাসিন্দা আদিবাসীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। তারা একেবারেই পানি পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় শহরের বাসা বাড়ির অসংখ্য মানুষজন কলসি কিংবা ড্রাম হিসাব পানি কিনে পান করছেন এবং গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করছেন।পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, গ্রামে চলতি বছর বোরো চাষ বেড়ে যাওয়ায় সেচ পদ্ধতির ব্যবহার, বিগত প্রায় ৬ মাস বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এমন পানি সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রামের পুরাতন লকুপগুলোতে পানি একেবারেই উঠছে না। ফলে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যে দেখা যায়, চলতি মওসুমে চুনারুঘাট উপজেলায় ৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। তার ৮০/৮৫ ভাগই ভুগর্ভস্ত পানির উপর নির্ভরশীল। বাকিটা নদী, খাল কিংবা ডোবার পানির উপর নির্ভরশীল।উপজেলায় ৬শ ৮২টি অগভীর নলকুপ এবং ৫২৩টি পাওয়ার পাম্প প্রতিদিনি এসব বোরো জমিতে পানি উঠাচ্ছে। পাশাপাশি আরো ৬শ ২৫টি দোন, সেউতিসহ নানা মাধ্যমে ডোবা পুকুর কিংবা খাল-বিল থেকে জমিতে পানি উঠানো হচ্ছে। এর বাইরে গত বছর সেপ্টেম্বরের পর প্রায় ৬ মাস আর বৃষ্টি হয়নি। প্রায় ৬ মাস বৃষ্টি না থাকায় এবং ভুগর্ভস্ত পানি প্রতিনিয়ত উঠানোর কারণে পানির স্তর ১০ থেকে ১২ ফুট নিচে নেমে গেছে।ফলে মাটির উপরে বসানো উপজেলার সাড়ে ৫শ গভীর নলুকপে পানি না উঠায় অনেকেই মাটি ১০থেকে ১২ ফুট নিচে গর্ত করে মেশিন স্থাপন করছেন। তারপরও অনেকে পানি পাচ্ছেন না। উপজেলা জনস্বাস্থ বিভাগের মতে, চুনারুঘাট উপজেলা এমনিতে জেলায় উচু এলাকা হিসেবে পরিচিত। তারপর বোরো মওসুমে ব্যপক হারে মাটির নিচ থেকে পানি উঠানোর কারণে পানির সংকট বেড়ে গেছে। তাদের হিসেব মতে উপজেলার ৮০ ভাগ নলকুপ থেকে পানি উঠছে না বলে তাদের কাছে অভিযোগ আসছে। এছাড়া বাসা বাড়িতেও পানির সংকট বলে তারা জানতে পারছেন।উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের জন্য প্রায় ৮০ হাজারের বেশি নলুকপ রয়েছে। এছাড়া শহরের প্রায় বাসায়ই গভীর নলকুপ রয়েছে। এমনকি গ্রামেও স্থাপন করা হচ্ছে গভীর নলকুপ। কিন্ত এসব নলকুপে এখন আর পানি উঠছে না। সরজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি বাড়ির কোন না কোন নলকুপে পানি উঠছে না। মানুষ চরম দুর্ভোগে আছেন পানি নিয়ে। অনেকের বাড়ির পুকুর কিংবা ডোবায়ও পানি নেই। সেচ দিয়ে জমি চাষ করার কারণে এসব পুকুর ডোবাও এখন পানিশুন্য। ফলে গ্রামের মানুষ দৈনন্দিন জীবণে গৃহস্থালী কাজের পানি এবং বিশুদ্ধ পানি দুটোরই সংকটে ভুগছেন।
সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা শহরের বাসা বাড়িগুলোর। শহরের অধিকাংশ বাসার সাপ্লাইয়ে পানি উঠছে না। ঘন্টার পর ঘন্টা মেশিনে সুইচ দিয়ে রাখলেও ট্যাংকি পুরণ হচ্ছে না পানিতে। এমন অবস্থ শহরে প্রতিটি বাসার। শহরের অসংখ্য বাসার মালিক বাইর থেকে ড্রাম কিংবা বালতি হিসেবে পানি কিনে পান করছেন এবং গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করছেন।
শহরের বাসিন্দারা বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার করছেন। তারা হিসেব কষে পানি খরচ করছেন। নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন বাসিন্দা জানান, প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে লেবার এসে তাদের বাসায় পানি দিয়ে যায়। এ পানি দিয়ে তাদের সারাদিন সকল কাজকর্ম চলে। কারো দৈনিক ১শ টাকা আবার কারো দৈনিক দেড়শ থেকে ২শ টাকা পানি কিনতে হচ্ছে। শহরের বাসিন্দা কিবরিয়া জানান, তার দৈনিক ১শ টাকা পানি কিনতে হয়। এর উপর রয়েছে আয়রনের প্রভাব। এ অবস্থা শহরের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বাসার।দুপুরে শহরের থানার পুকুরে গোসল করতে আসা মানুষের দীর্ঘ সারি দেখেও বুঝা যায়, মানুষ পানির কতটা সংকটে রয়েছে।এরচেয়ে বেশি ভয়াবহ অবস্থ উপজেলার চা বাগান ও পাহাড়ী এলাকার আদিবাসীদের। তারা বিশ‚দ্ধ পানি তো পায়ই না। বরং নালা ডোবার পানি পান করাসহ নানা কাজে ব্যবহার করছে।উপজেলার সাতছড়ি, কাপাই, রঘুনন্দন, দেউন্দি, চাকলাপুঞ্জিসহ বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকরা তাদের বাগানে থাকা হাতেগুনা কয়েকটি নলুকপ থেকে পানি নিতে সকাল বিকাল এসে লাইনে দাড়ায়। সাতছড়ি টিপরা পল­ীসহ নৃত্বাত্বিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি পানি সংকটে রয়েছে। তারা এমনিতে সারা বছর বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার করে। তারপর ফাল্গুন চৈত্র মাস এলে তাদের হাহাকার আরো বেড়ে যায়। পানির সংকট যেন তাদের চিরদিনের সাথী।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here