চিলমারী নৌ বন্দর স্থাপনে কাজের অগ্রগতি নেই- হতাশায় ভুগছে চিলমারী বাসি

0
376

আরিফুল ইসলাম সুজন : কুড়িগ্রাম জেলার প্রাচীন নৌ বন্দর চিলমারীকে নতুন করে চালু করনে কাজে কোন অগ্রগতি নেই। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্র“তির গত দু বৎসরেও দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশায় ভুগছে চিলমারীবাসী।
ও কি গাড়িয়াল ভাই হাঁকাও গাড়ী তুই চিলমারীর বন্দরে। জনপ্রিয় এই গানটি শুনলেই যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে চিলমারী নদী বন্দর । এক সময় গাড়ীয়াল ভাইয়ের গান ও কয়লার রেলগাড়ির লম্বা শিস টানা হুইসেলের শব্দে চিলমারীর মানুষের ঘুম ভাঙ্গতো। কাঁক ডাকা ভোরেই শুরু হয়ে যেত মানুষের কর্মব্যস্ততা। নদীতে স্টিমারে হুইসেল, যাত্রীদের হুড়োহুড়ি, পাল তোলা নৌকার মাঝিদের যাত্রী সংগ্রহের আহ্বান, হকারদের চিৎকার, হোটেলগুলোতে চুলা ধরানোর ধুম। এভাবেই এক সময় পাখির কলতানে হারিয়ে যেত ব্যস্ত মানুষের হাঁকাহাকি আর ডাকাডাকির শব্দে। সূর্য্যের আলোতে দূর থেকে চোখে পড়ত বড়-বড় পাটের গুদাম, ছোট বড় অনেক কারখানার ধোয়া। পাটের জন্য বিখ্যাত ছিল চিলমারীর বন্দর। বিস্তীর্ণ মেঠোপথে নেমে আসতো পাটের গাইড ভর্তি গরুর গাড়ীর বহর। দেশের নামি দামি পাট কোম্পানী গুলো চিলমারীতে এসে অফিস খুলে পাট ক্রয় করতো। সেই সময় ব্যবসা বানিজ্য যাত্রী ও সাধারন মানুষের পদচরনায় মুখরিত ছিল চিলমারীর নদী বন্দরটি । জানা যায় চিলমারীর এ বন্দরটিতে এক সময় দেশ বিদেশ থেকে জাহাজ করে ব্যবসার জন্য আসতো বিদেশীরা । বন্দরে রাতদিন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ব্যবসায়ী ও পাইকারদের আনাগোনায় ছিল কর্মমূখর পরিবেশ । ব্রহ্মপুত্রের কোল ঘেঁষে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ছিল বন্দরের অবস্থান। এখানে ছিল প্রশাসনিক ভবন, কাষ্টমস্ অফিস, এবং বড় বড় পাটের গোডাউন। শুধু যে ব্যবসায় জমজমাট তা কিন্তু নয় যাত্রী পারাপারের জন্য রয়েছে ফেরীঘাট । পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আসামের সঙ্গে ছিল ফেরী পারাপার। জুট ট্রেডিং কোম্পানিসহ প্রায় ৩০ টি পাটকল ও বিভিন্ন কোম্পানি এখানে অবস্থান করত। এ কোম্পানিগুলোতে প্রায় ২০০ জন শ্রমিক কাজ করত প্রতিদিন। ভারত থেকে আসা কয়লা, তেল সহ নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্যাদি জাহাজে করে চিলমারী হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেত। চিলমারী বন্দরটি পুর্নতা ফেরাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ ই সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে পূর্নাঙ্গ নৌ-বন্দর এর ঘোষনা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩সেপ্টেম্বর , ২০১৬ তে নৌ পরিবহনমন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী শাজাহান খান,এমপি চিলমারী নদী বন্দরের আনুষ্ঠানিক ঘোষনা সহ শুভ উদ্বোধন করেন। এ অঞ্চলের মানুষ আবার স্বপ্ন দেখা শুরু করে। চিলমারী বন্দরের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে, চিলমারী উপজেলার রমনা বাজারের বাসিন্দা ছক্কু মিয়া জানান, চিলমারীর বন্দর চালু হলে হামরা আগের মত কাম করি খাবার পাইতাম, কুলি আশরাফ জানান, বন্দরটি চালু না থাকায় এখন হামরা বেকার হয়া আছি এখন সংসার চালাইতে খুব কষ্ট হয়, কোনমতে দিনকয়ডা যাবা নাইগছে বাবা, এ বন্দরটা চালু হইলে হামার গুলের একনা গতি হইতো । সারিসারি দাড়ানো অটো রিক্সা চালকগন জানান, দিনে ওপার থেকে কয়েকটি মাত্র নৌকা চলাচল করে। সেই যাত্রী সাধারনের আসার পথে তাকিয়ে থাকতে হয়। যাত্রীর চেয়ে এখন গাড়ির সংখ্যাই বেশী । নৌ বন্দরের র্কাযক্রম চালু না হওয়ায় তারাও হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং তাদের স্বপ্ন পূরনের সম্ভাবনা ভেস্তে গেছে। দীর্ঘদিন বন্দরের র্কাযক্রম চালু না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন স্বপ্নে বুকবাধা এই মানুষগুলো। অনেক শ্রমিক এ বন্দর চালু হওয়া আশায় রয়েছেন। বন্দরটি চালু হলেই তাদের স্বপ্নটা পুরন হবে বলে মনে করেন তারা। অতিতের সেই সোনালী দিনের আলোর মুখ দেখবে এই আশায় বুক বেধে রয়েছেন এ অঞ্চলের মানুষরা। বর্তমান ঘোষিত নদীবন্দরকে নিয়ে একটু বেশিই আশা করেছিল সাধারণ জনগন, নদী সংস্কার ড্রেজিং করা , নদীর দুই তীর বাধা,ইত্যাদি কাজ করা হলে সহজে জাহাজ চলাচলে এলাকায় উন্নয়নের ছোয়ায় ভরিয়ে উঠতো। কিন্তু উদ্বোধনের দুই বছর অতিবাহিত হলেও চিলমারী নদীবন্দরের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক ভাবে আজও চালু না হওয়ায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট
মহলের প্রতি এ হেন উদাসীনতায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবি খুব দ্রুত এ বন্দরটি চালু হোক। তাদের এ দাবি পুরন হলে চিলমারীর বন্দরটি তার পুরনো নাব্যতা ফিরে নতুন রুপে সজ্জিত হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here