গরু নিয়ে বিপাকে ভারতীয় কৃষকরা!

0
292

খবর ৭১/ই:দিনেরবেলায় ভারতের উত্তরপ্রদেশের কৃষক মুনিদেব তিয়াগি ধান, ভুট্টা ও গম চাষ করেন; আর রাত জেগে তা পাহারাও দেন। নিজের সামর্থ্যে না কুলালে শস্যক্ষেত পাহারা দিতে লোক রাখেন। না হলে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো গরু হয় তার ক্ষেত মাড়িয়ে নষ্ট করে দিয়ে যাবে, নতুবা ফসল খেয়ে ক্ষেত খালি করে দিয়ে যাবে।
কাজেই তিনি এখন আর কোনো সুখী মানুষ না। তিয়াগি বলেন, আমি দিনে দু্ই ঘণ্টার জন্যও ঘুমাতে পারি না। আমার ছেলের ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে তাদের তাড়িয়ে দিই। কিন্তু তারা আবার ফিরে আসে।

স্থানীয় একটি দুগ্ধ খামারের শত শত গরু রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। যদি কোনো গরু দুধ দেয়া বন্ধ করে দেয়, তবে সেটিকে আর পালে না কোনো খামারি।

আগে অল্প পয়সার বিনিময়ে এসব গরু স্থানীয় কসাইখানায় বিক্রি করে দেয়া হতো। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতায় থাকা ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার গো-হত্যাবিরোধী কঠোর আইন পাস করেছে।

কাজেই পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে গেছে। মুসলমানদের মালিকানাধীন ছোট ছোট কসাইখানা সরকার বন্ধ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি উগ্র ডানপন্থী গোরক্ষা বাহিনী গ্রামের পর গ্রাম পাহারা দিয়ে বেড়ায়।

কাজেই কেউ গরু বিক্রি কিংবা জবাই করলে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গরুর প্রতি দেশটিতে নতুন করে অনুরাগ শুরু হয়েছে।

গরু হত্যার দায়ে মুসলিম ও দলিতদের গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দুই বছরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন বলছে, গরুর গোশত খাওয়া নিয়ে সহিংসতায় ১২ বছর বয়সী শিশুসহ অন্তত ১০ জন মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন লোক হিসেবে তিয়াগি নিজেও গরুকে শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু এত বেশি না যে এগুলো তার ক্ষেতের ফসল সাবাড় করে দেবে।

তিয়াগি বলেন, এটি সত্যিই পাগলামি। এখানকার দুগ্ধ খামারিরা তাদের গরু আমাদের গ্রামে ছাড়েন না। অন্য কোনো গ্রামে ছেড়ে দিয়ে আসেন। আর অন্য গ্রামের দুগ্ধ খামারিরা তাদের গরু আমাদের গ্রামে এসে ছেড়ে দিয়ে যায়। কাজেই গরু খেদিয়ে আমি আমার জীবন শেষ করে দিতে পারি না।

তিনি বলেন, বিজেপি খামারিদের চেয়েও গরুর কদর করে বেশি।

ভারতের ২৯টি রাজ্যের অন্তত ২০টিতে গরু জবাই করা নিষিদ্ধ। ২০১৭ সালের মার্চে উত্তরপ্রদেশের সরকার শত শত খসাইখানা অবৈধ আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।

রাদা কান্ত ভাটস একটি গো-আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালন করেন। তিনি বলেন, খামারিদের উচিত উৎপাদনহীন গরুগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া। আমরা এগুলোকে যত্ন ও সেবা করব। এসব গরু যতই বুড়ো হয়ে যাক না কেন, আমরা তাদের মর্যাদা ও ভালোবাসা দেব।

বিজেপির অধিকাংশ নেতাই এসব কথা বলেন। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালিত গো-আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর বেহাল দশ। সেগুলোতে রসদ সরবরাহ কম। এসব কেন্দ্রে গরুগুলোর ঠিকমতো খাবার দেয়া হয় না। নোংরা, অস্বাস্থ্যকর ঘিঞ্জি পরিবেশে রাখা হয়।

এভাবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবহেলা ও খাদ্যাভাবে প্রচুর গরু মারা যাচ্ছে।

চলতি মাসের শুরুতে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী একপাল গরু খেদিয়ে ছত্তিশগড়ের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে সেগুলোকে আটকে রাখেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্বাসরোধে ১৮টি গরু মারা গেছে।

রাজনৈতিক ভাষ্যকার চন্দ্র ভান প্রসাদ বলেন, কোনো গরু দুধ দেয়া বন্ধ করে দিলে খামারিরা সেটি বিক্রি করে দিতেন। গরুর বিচালির খরচ অনেক বেশি। তা ছাড়া আপনি কি জানেন একটি অসুস্থ গরুকে পরিষ্কার আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে কতজন লোক দরকার? দুধ দেয়া বন্ধ করার পরও একটি গরু অন্তত ২০ বছর বাঁচে। কাজেই লোকজন তাদের সন্তানদের খাবার জোগাড় করবে না, এই গরুগুলোকে খাওয়াবে? সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।
খবর ৭১/ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here