গণমাধ্যমকে সতর্ক করলেন হাইকোর্ট

0
226

খবর৭১ঃশিশু আদালতে বিচারাধীন কোনও মামলায় শিশুর নাম, ঠিকানা, ছবি বা তার পরিচিতি প্রচারে ভবিষ্যতে একটি ইংরেজি দৈনিকসহ সব গণমাধ্যমকে সতর্ক থাকতে বলেছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, শিশুর ছবি, নাম, পরিচয়, প্রকাশ পায় বা শিশুকে চিহ্নিত করা যায়, এ ধরনের প্রতিবেদন যাতে ভবিষ্যতে আর ছাপা না হয়। এ বিষয়টি তদারকি করতে আইন সচিব ও তথ্য সচিবসহ বিবাদীদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

একটি রিট মামলার শুনানি শেষে এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রজিক আল জলিলের হাইকোর্ট মঙ্গলবার পর্যবেক্ষণসহ এ রায় দেন।

আদালত বলেন, শিশু আইনের মূল উদ্দেশ্য কোনো মামলায় বিচারের ক্ষেত্রে তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করা, যা বিচারপূর্ব, বিচার চলা ও বিচার-পরবর্তী পর্যন্ত বোঝায়। এক্ষেত্রে তাদের মর্যাদা বজায় রাখা, যাতে তারা সংশোধন ও পুনর্বাসনের সুযোগ পায়।

গোপালগঞ্জের শিশু আদালতের একটি রায়ের বিষয়ে গত নভেম্বরে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সূত্র ধরে হাইকোর্টে এই রিট মামলা করা হয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, “প্রকাশিত খবরে শিশুর নাম, ঠিকানা, পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে এবং খবরে সঠিক শব্দ চয়ন না করে ডেইলি স্টার বেআইনি কাজ করেছে।”

আদালত বলেছেন, যেহেতু বিষয়টি নতুন, তাই কোনো সাজা বা জরিমানা না করে সতর্ক করা হলো, যেন ভবিষ্যতে এমনটা আর না ঘটে। পাশাপাশি বিচারাধীন শিশুর ছবি, নাম, পরিচয়, প্রকাশ পায় বা শিশুকে চিহ্নিত করা যায়, এমন প্রতিবেদন যাতে ভবিষ্যতে কোথাও ছাপা না হয়, সে বিষয়ে সব সংবাদমাধ্যমকে সতর্ক থাকতে বলেছেন হাইকোর্ট।

গত বছরের ৫ নভেম্বর ডেইলি স্টারে ‘বয় গেটস টেন ইয়ার্স ফর কিলিং ক্লাসমেট’শিরোনামে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দণ্ডিত শিশুটির পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়।

এভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ ২০১৩ সালের শিশু আইনের ২৮ ধারার লঙ্ঘন জানিয়ে গত বছর ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে এই রিট আবেদন করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সাইয়্যেদুল হক সুমন।

শিশু আদালতে বিচারাধীন যে কোনো মামলার শিশু আসামি বা অভিযুক্তর নাম, পরিচয়, ঠিকানা, ছবিসহ তার পরিচিতি সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরা বন্ধে নির্দেশনা চাওয়া হয় সেখানে। পাশাপাশি এভাবে পরিচয় প্রকাশ বন্ধের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- সেই প্রশ্নে রুল চাওয়া হয় ওই রিট আবেদনে।

আইন সচিব, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন-আদালত-মানবাধিকার ও সংবিধানবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং ডেইলি স্টারের সম্পাদককে এ মামলায় বিবাদী করা হয়।

ওই রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। সেই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে মঙ্গলবার আদালত রায় দেন।

আদালতে রিটকারী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়্যেদুল হক সুমনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সাগুফতা তাবাসসুম আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান। ডেইলি স্টারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কাজী এরশাদুল আলম।

রায়ের পর আইনজীবী সুমন সাংবাদিকদের বলেন, শিশু আইনে বা কিশোর আদালতে কোনো মামলা যদি থাকে এবং এই মামলায় কোনো শিশু বা কিশোর জড়িত থাকলে তার নাম, ঠিকানা, পরিচিতি ব্যবহার করা যাবে না কোনো মিডিয়াতে।

“ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে জন্য ডেইলি স্টারসহ সব গণমাধ্যমকে সতর্ক করার পাশাপাশি আইন সচিব, তথ্য সচিব ও ল’ রিপোর্টার্স ফোরামকে তদারকি করতে বলা হয়েছে রায়ে।”

প্রসঙ্গত, শিশু আইন ২০১৩-এ ‘শিশু আদালতের কার্যক্রমের গোপনীয়তা’ শিরোনামে ২৮ ধারায় বলা হয়েছে-

১. শিশু আদালতে বিচারাধীন কোনও মামলায় জড়িত বা সাক্ষ্যপ্রদানকারী কোনও শিশুর ছবি বা এমন কোনও বর্ণনা, সংবাদ বা রিপোর্ট প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম, অথবা ইন্টারনেটে প্রকাশ বা প্রচার করা যাবে না, যা সংশ্লিষ্ট শিশুকে শনাক্তকরণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করে।

২. উপধারা-১ এ যা কিছুই থাকুক না কেন, শিশুর ছবি, বর্ণনা, সংবাদ বা রিপোর্ট প্রকাশ করা শিশুর স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হবে না মর্মে শিশু আদালতের কাছে প্রতীয়মান হলে; উক্ত আদালত সংশ্লিষ্ট শিশুর ছবি, বর্ণনা, সংবাদ বা রিপোর্ট প্রকাশের অনুমতি প্রদান করতে পারবেন।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here