আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাটঃ রংপুরের গঙ্গাচড়ায় নির্মিত দ্বিতীয় তিস্তা সেতুটি উদ্বোধনের প্রায় এক মাস পরও পুরোপুরি ব্যবহার উপযোগী হয়ে ওঠেনি। দেশের তৃতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর বুড়িমারীর সঙ্গে সারা দেশের দূরত্ব কমানো এই সেতুর অন্যতম লক্ষ্য হলেও অন্তত পাঁচটি ব্রিজ-কালভার্টের অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ শেষ না হওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এমনকি এ ব্যাপারে নকশাও এখনো চুড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে এলজিইডি।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সেতুর উত্তর প্রান্ত থেকে কাকিনা মোড় পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার রাস্তায় দুটি ছোট সেতু ও তিনটি বক্স কালভার্টের অ্যাপ্রোচ রোডের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। অন্যদিকে সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত থেকে রংপুরের মর্ডান মোড়-ঢাকা জাতীয় মহাসড়ক পর্যন্ত কোনো সড়কও নির্মাণ হয়নি। এতগুলো কাজ অসমাপ্ত রেখেই গত ১৬ সেপ্টেম্বর সেতুটির উদ্বোধন করা হয়।
এ কারণে লালমনিরহাটের কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর নামক স্থানে লোহার বার দিয়ে রেখেছে কালীগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ফলে বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে পণ্যবাহী যানবাহন এ সেতুটি কোনভাবেই ব্যবহার করতে পারছে না। যদিও বিভাগীয় শহরের সঙ্গে সড়কপথ কমিয়ে আনার জন্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় তিস্তা সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া সেতুটি উদ্বোধনের কয়েকদিন আগে গত (১৪ সেপ্টেম্বর) কাকিনা-মহিপুর রোডে দ্বিতীয় তিস্তা সেতুর উত্তর প্রান্তে শংকরদহে ১৪০ মিটার দৈর্ঘের একটি সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড ধসে পড়ে। তখন তাড়াহুড়ো করে সড়কটি চলাচল উপযোগী করে তোলে লালমনিরহাট এলজিইডি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সংযোগ সড়কটি সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত থেকে রংপুরের মর্ডান মোড়ে গিয়ে রংপুর-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কে যুক্ত হওয়ার কথা। এ রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় ২৩ কিলোমিটার। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। বর্তমানে ছোট যানবাহনগুলো চলাচল করছে সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত থেকে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় পর্যন্ত। এ রুটে বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় থেকে মর্ডান মোড় পর্যন্ত ভারী যানবাহন চলাচল শুরু হলে রংপুর মহানগরীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হবে। এছাড়া গঙ্গাচড়া উপজেলার বালারঘাট এলাকায় বালারঘাটের জরাজীর্ণ সেতুটি নতুন করে নির্মাণ না করা হলে ভারী যান কোনোভাবেই চলতে পারবে না।
বুড়িমারী স্থলবন্দর ব্যবহারকারী সিএন্ডএফ এজেন্ট আমদানিকারক ব্যবসায়ী সায়েদুজ্জামান সাঈদ বলেন, বর্তমানে ৬০ কিলোমিটার অতিরিক্ত ঘুরে লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়ক হয়ে মাহীগঞ্জ সাতমাথা দিয়ে রংপুর মর্ডান মোড়-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কে উঠতে হয়। এ রাস্তা কমাতেই গঙ্গাচড়ায় দ্বিতীয় তিস্তা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ সড়কটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এর কোনো সুফলও আমরা তিন উপজেলার কেউ পাচ্ছি না। তাহলে ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করে রাস্তা ও সেতু নির্মাণ করে আমাদের কি লাভ হলো!
লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এস এ হামিদ বাবু বলেন, দ্বিতীয় এই তিস্তা সেতু নির্মান হওয়ায় বুড়িমারী স্থল বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্টরা মালামাল খুব সহজেই দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে পারে। এক কথায় এই সেতু নির্মানের ফলে ঢাকা থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরের প্রায় ৫০/৬০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে এসেছে। তাই বুড়িমারী থেকে মালামাল পরিবহনে কিছু ব্যয় কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা লাভের দুটি টাকা পাচ্ছে। সেই তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়কের যদি বেহাল অবস্থা হয় তাহলে সেই সেতু আমাদের কি উপকারে আসলো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম জাকিউর রহমান বলেন, শংকরদহ সেতুটি ভেঙে যাওয়া অ্যাপ্রোচ রোডটি মেরামত না করা পর্যন্ত গাড়ি চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। আর সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত থেকে রংপুর মর্ডান মোড় মহাসড়কের সঙ্গে কোন দিকে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে এখন পর্যন্ত সেটির কোনো ডিজাইন বা কোন প্রকার সিদ্ধান্ত হয়নি।
এসব জটিলতার ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদ। তবে সেতুর সংযোগ সড়কের চলাচল পথের ডিজাইন, পাঁচটি ব্রীজ-কালভার্টের অ্যাপ্রোচ সড়ক মেরামতের বিষয়ে খোঁজ খবর নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
খবর৭১/ইঃ