কোন্দলে জর্জরিত বাঞ্ছারামপুর বিএনপি-দেখার কেউ নেই

0
991

খবর ৭১: ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ এক সময়ের দুর্গখ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দিনদিন দুর্বল হয়ে পড়ছে বিএনপি। দলীয় কোন্দল ও দলের মনোনয়নকে ঘিরে লবিং গ্রুপিংয়ে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকা-। বিএনপিই এখন বিএনপির বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

উপজেলা পর্যায়ে পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের আড়ালে চুপিচুপি দলীয় কর্মকান্ড করলেও দৃশ্যমান কোনো কর্মকান্ড নেই। এসব কারণে তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী এখন হতাশ। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চালাচ্ছেন বেশ প্রচারণা।

দলীয় কোন্দলের জের ধরে ৩০ এপ্রিল ফরদাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপনের নেতৃত্বে বিএনপির একাংশ সভা ডেকে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল খালেককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এতে করে দলীয় কোন্দল আরও প্রকাশ্য রূপ নেয়।

বর্তমানে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল খালেকও গত কয়েক মাস ধরে নীরবে নীরবে দলীয় কর্মকান্ড চালাচ্ছেন। এদিকে বিএনপির আরেক আলোচিত নেতা কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ দলীয় কর্মকান্ড ও জাতীয় কর্মসূচি নিয়ে বাঞ্ছারামপুরের প্রতিটি ইউনিয়নে উঠান বৈঠক ও পথসভার মাধ্যমে দলকে চাঙ্গা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ফরিদ বলেন, ‘সাবেক এমপি আবদুল খালেক ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির পরাজয়ের পর বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকান্ড থেকে দূরে সরে যান।

২০১৩ সালে আবদুল খালেক এমএলএল কোম্পানি ‘গেইনপ্লাস’-এর চেয়ারম্যান হন। পরে গেইনপ্লাসের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে এবং তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়। দলের জন্য বর্তমানে কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ বাঞ্ছারামপুরের গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভালো কাজ করছেন।

ফরদাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, সাবেক এমপি খালেকের বিরুদ্ধে এমএলএম কোম্পানি গেইমপ্লাস কেলেঙ্কারিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তাকে আমরা শতাধিক নেতাকর্মী ৩০ এপ্রিল সভা ডেকে অবাঞ্ছিত করেছি।

তাই খালেক সাহেব আমাকে নাকি মৌখিকভাবে অব্যাহতি দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বাঞ্ছারামপুর আসনে আওয়ামী লীগ ৪ বার, বিএনপি ৩ বার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩ বার জয়ী হয়েছে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কর্মকা- ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল খালেক, কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম খোকন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক সিকদার, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম যুক্তরাষ্ট্র শাখার যুগ্ম সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসের খান অপু বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. জিয়াউদ্দিন জিয়া, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বোরহান উদ্দিন আহমেদ, সহ-সভাপতি মেজর (অব.) সাইদুল ইসলাম সাঈদ প্রমুখ।
উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি হারুনুর রশিদ বলেন, উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কোনো কমিটির সংস্কার পন্থি নেতা আবদুল খালেক সাহেব আনুষ্ঠানিকভাবে করতে পারেননি। তার ব্যর্থতার কারণে বিএনপি ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি আবদুল খালেক বলেন, উপজেলা বিএনপিতে আওয়ামী লীগের তুলনায় কোন্দল কিছুটা কম। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুবিধা পেয়ে কিছু নেতাকর্মী আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

আশা করি, আগামী নির্বাচনের আগেই সব কোন্দল দূর হয়ে যাবে। ফরদাবাদ বিএনপির সেক্রেটারি স্বপন সিকদারকে দলীয় নীতিমালা ভঙ্গের কারণে আগেই পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। এ ব্যাপারে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপির সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, উপজেলা বিএনপিতে যেসব কোন্দল আছে তা নির্বাচনের আগে সভা ডেকে সমাধান করা হবে। ফরদাবাদ বিএনপির সম্পাদক স্বপন সিকদারকে পদ থেকে বাদ দেয়া হয়নি।

খালেক সাহেব একা কাউকে বাদ দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। স্বপন সিকদার নির্যাতিত নেতা। এদিকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপির আলোচিত কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, ‘আমি মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কাজ করি না। আমি কাজ করি দলকে চাঙ্গা করতে।

আমার সাধ্যমতো সবসময় চেষ্টা করি দলের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে থাকতে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মনোনয়নের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত দিবে তাই আমি মেনে নিব।’

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ও গ্রামে কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশের সৌজন্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির পোস্টার, ফেস্টুন ও তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের পোস্টার ও ফেস্টুন দেখা গেছে। গত ১০ বছরে নানাভাবে যারা হামলা ও মামলার শিকার হয়েছে তাদের পাশে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেক না দাড়ালেও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পাশে দাড়িয়েছেন কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ। এছাড়াও সাবেক ছাত্রনেতা রফিক শিকদার বিভিন্ন সময় বাড়িতে গিয়ে তার ঘুরে ফিরে চলে আসে। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় স্থানীয় কোন্দল নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে, অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে তেমন কেউ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে না। স্থানীয় বিএনপিও নানা ভাবে পুলিশি হয়রানীর শিকার ও মামলার কারণে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সরাসরি হস্তক্ষেপ না করলে নিজেদের উদ্যোগে তেমন কোন কর্মসূচী পালন করতে পারছে না। বিভিন্ন সময় কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ও গ্রামের সফরে স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে উঠান বৈঠক, পথ সভা ও বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় কর্মসূচী পালন করে আসায় যারা পদ পদবী নিয়ে বসে আছেন তাদের রষনালের শিকার হচ্ছে। বর্তমানে তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রাণের দাবী বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপি দীর্ঘদিন মেয়াদ উর্ত্তীণ থাকায় কার্যত নেতৃত্ব শূণ্য হয়ে পড়েছে। নতুন কমিটি গঠন করা হলে আন্দোলন ও নির্বাচনে নতুন মাত্রা পাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here