খবর ৭১: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ফের হামলা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২ জুলাই, সোমবার সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানসহ বেশ কয়েকজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকালে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পতাকা মিছিল ও বিক্ষোভ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময়ে ২০-২৫ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখানে বাইক নিয়ে আসে।
এরপর তারা প্রথমে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানকে মারধর করে।তখন বাধা দিতে গেলে আরও কয়েক জন হামলার শিকার হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে তাদের ওপরে হামলা চালিয়েছে। সে সময় তারা মেয়েদের গায়েও হাত তুলেছে। এই হামলাকারীদের শাস্তির দাবি করেছেন তারা।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুন্নাহার লীনা উপস্থিত সাংবাদিকের বলেন, ‘তারা আমাদের ধাক্কাধাক্কি করেছে, আমাদের তুই করে কথা বলতেছে। আমরা কোন দেশে বাস করি যে দেশে কোনো অধিকার নেই।
আমরা একটি ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলন করছি। কিন্তু আমাদের ধরে ধরে মারা হচ্ছে। এই মারার অধিকার তারা কোথায় পায়। আমরা কি স্বাধীন দেশে থাকি? প্রকাশ্যে তারা হুমকি দেয়, আমাদের মেরে ফেলা হবে, ধর্ষণ করা হবে।’
রাজধানীর শাহবাগ এলাকাতেও একজনকে ছাত্রলীগ মারধর করেছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সকাল থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয় শাহবাগে। তারা এই পথে যাতায়াতে করা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন চেক করছিল।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের পাশে এক শিক্ষার্থীর ফোন চেক করতে গিয়ে কোটা সংস্কারের পক্ষের বিভিন্ন তথ্য পায়। এরপরেই কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী তাকে মারধর করে।
এই ঘটনার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান সানি টিএসসিতে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা পতাকা মিছিলের সঙ্গে লাঠিসোটা রেখে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করবে। তাই শৃঙ্খলা যেন নষ্ট না হয় সেজন্য সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা অবস্থান নিয়েছি। আমরা তাদের কোনো মারধর করি নাই।’ সে সময় তার সঙ্গে ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, শাহবাগ মোড়ে ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী এখানে অবস্থান নিয়ে অাছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী হিসেবে কাউকে সন্দেহ হলেই মারধর করা হচ্ছে। এমনকি মারধর করতে করতেই তাদের থানায় নিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
গত ৩০ জুন শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর ও অন্যদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও ছাত্রলীগ হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
১ জুলাই, রবিবার দুপুর ১২টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্যতম নেতা মুহম্মদ রাশেদ খাঁনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানাতে রাজধানীর শাহবাগে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা।
বেলা তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ছয়জনকে ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে মারধর করে থানায় দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া রবিবার সাড়ে ৯টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপরও ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। ছাত্রলীগের অতর্কিত এ হামলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ছয়জন আহত হয়েছেন।
এদিকে রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নূরুল হক নূরকে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। পরে তাকে অন্য একটি হাসপাতালে নেওয়া হলেও সে ব্যাপারে নূরুলের পরিবারের সদস্যরা কিছু জানাতে রাজি হননি।
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, পুরোপুরি বাতিল নয়, কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ১০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রচলিত ব্যবস্থায় ৫৬ শতাংশ আসনে কোটায় নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা। ১০ শতাংশ নারীদের জন্য, জেলাভিত্তিক ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১ শতাংশ কোটা।
খবর ৭১/ই: